E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভারত-বাংলাদেশ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, ৭০ গ্রাম প্লাবিত

২০১৮ জুন ১৪ ১২:৩১:৫৭
ভারত-বাংলাদেশ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, ৭০ গ্রাম প্লাবিত

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের মনু নদের পানি বিপদসীমার ১৭৭ সে.মি. এবং ধলাই নদের পানি ৫৩ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এতে কুলাউড়ার চাতলা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে দুই দেশে যাতায়াতকারী অনেক যাত্রীকে আটকা পড়েছেন।

মনু নদের চাতলায় একটি কালভার্টের একাংশ দেবে যাওয়ায় বুধবার দুপুর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে দুই দেশের কোনো যাত্রী যাতায়াত করতে পারেননি।

এদিকে, ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে চাতলা সেতুর উত্তর দিকে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি দ্রুত গতিতে গ্রামে প্রবেশ করে। পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

বুধবার দুপুরে নিশ্চিন্তপুর গ্রাম এলাকায় মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। ফলে নছিরগঞ্জ, ইটারঘাট, মনোহরপুর, নিশ্চিন্তপুর ও মাদানগর গ্রামের ১ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, আমতলা বাজার থেকে ৪ কিলোমিটার দূরবর্তী চাতলাপুর চেকপোস্ট পর্যন্ত সড়কের দুটি স্থান ভেঙে নালার সৃষ্টি হয়। সেতুর উত্তর দিক ও সেতু সংলগ্ন একটি কালভার্ট দেবে যায়। এরপর থেকে এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ-ভারতে যাতায়াতকারী অনেক যাত্রীকে আটকা পড়েন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, শরীফপুরে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ৪টি স্থানে ভাঙন ধরেছে। মনুর চাতলা সেতু এলাকায় বুধবার দুপুরে ১৭৩ সে.মি. বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

সড়ক জনপথ বিভাগের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, মনু নদের চাতলা সেতু খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এর সঙ্গে একটি কালভার্টের এক দিক দেবে যায়। ফলে বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে অনেক যাত্রী আটকা পড়েন। জনপথের লোকজন এদিকে নজরদারি করছেন।

এদিকে, মৌলভীবাজারের জেলার রাজনগর, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার ধলাই ও মনু নদের ভাঙনে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানিতে প্লাবিত হয়েছে প্রায় ৭০টি গ্রাম।

এর মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলার করিমপুর, মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সুরানন্দপুর, বাদে করিমপুর, রহিমপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, আদমপুর ইউনিয়নের কেওয়ালীঘাট, ঘোড়ামারা, মাধবপুর ইউনিয়নের কাটাবিল, ইসলামপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর, করিমপুর, ঘোড়ামারা, বাসুদেবপুর, সুরানন্দপুর, বাদে করিমপুর, বনগাঁও, ধলাইরপার, শ্রীপুর, ঘোড়ামারা, হীরামতি, যুদ্ধাপুর, নাগড়া, গোপালনগর, নাজাতকোনা, কান্দিগাঁও ও হোমেরজানসহ অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়।

পাশাপাশি মনু নদের পানি বেড়ে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের বাঘজুর ও তেলিবিল গ্রাম, চাতলাপুর সেতুর উত্তর পাশে ও হাজীপুর ইউনিয়নের মিঞারপাড়া দিয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। সেই সঙ্গে প্রায় ৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।

শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জনাব আলী বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় আমলা বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন শুরু হলে গ্রামবাসী ও বিজিবি সদস্যরা শতাধিক বালুর বস্তা দিয়ে এ স্থান রক্ষা করেন। তবে রাত আড়াইটার দিকে বাঘজুর ও তেলিবিল গ্রাম এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে দ্রুত ঢলের পানি গ্রামে প্রবেশ করে। পানিতে বসতঘরসহ ফসলি জমি তলিয়ে যায়।

এদিকে, রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের দুটি স্থান দিয়ে মনু নদের ভাঙনের ফলে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। সেই সঙ্গে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন বলে জাগো নিউজকে জানান রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসি আক্তার।

এছাড়া, ধলাই নদের মাধবপুর ইউনিয়নের হীরামতি গ্রামের মেরামতকৃত বাঁধ ও কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ এবং রামপাশা গ্রাম বন্যাঝুঁকিতে রয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেদ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে আগামীকাল বা পরশু থেকে পানি নামা শুরু হবে। সরকারি বরাদ্দ না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাজ করাতে সমস্যা হচ্ছে। প্রায় ৭০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা সেগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছি।

(ওএস/এসপি/জুন ১৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test