E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাঙ্গাবালীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী

২০১৮ জুন ২৬ ১৯:০১:২৯
রাঙ্গাবালীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) : সাগর-নদীবেষ্টিত পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা। সব শ্রেণীর মানুষের বসবাসে এ উপজেলাটি যেন সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর পরেও দারিদ্রতার পক্ষাঘাতে সমাজ ও সভ্যতা থেকে পিছিয়ে রয়েছে এ উপকূলের বড় একটি ভূমিহীন জনগোষ্ঠী। যাদের নাই বাসস্থল, নাই সামাজিক সহমর্মিতা। সর্বদাই এদের বসবাস মৌলিক চাহিদার নিম্নস্তরে। 

সরকার এসব ভূমিহীনদের বাসস্থানের জন্য ১৯৯৭ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরী করলেও, জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের ওই ঘর গুলো এখন আর কোন কাজে আসছেনা ভূমিহীন ওই পরিবার গুলোর।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সিডর, আইলা, মহাসিন এর মত প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় এ জনপদকে তছনছ করলেও বছরের পর বছর আশ্রয়ণ প্রকল্পের এ ঘরগুলো সংস্কার না হওয়ায় চালের টিন, নাট-স্ক্রু, লোহার উপকরন ও সিমেন্টের পিলার খসে পড়ে ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বসবাসের অনুপযোগী এসব ঘরে এখন ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে হতদরিদ্র লোকগুলোর। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায় ঘরের মেঝেতে। তখন পানিবন্দি থাকতে হয় বাসিন্দাদের। সরকারিভাবে সেগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বসবাসকারী লোকেরাও কর্মসংস্থান না থাকায় অর্থ সংকটে এগুলো সংস্কার করতে পারেনি।

জানা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলায় ১৬ টি আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। এর আওতায় ১ হাজার ৬শ’ ৮৫ পরিবারে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শিশু, নারী ও পুরুষের বসবাস। ১৯৯৭ থেকে পর্যায়ক্রমে এ আশ্রয়ণ গুলো নির্মাণ করে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছিন্নমূল পরিবারকে এনে এখানে পুনর্বাসন করা হয়। সরকারের এই পরিকল্পনায় উপকূলের হাজারো হতদরিদ্র ভূমিহীন পরিবার আশার আলো দেখলেও তা ছিল ক্ষনস্থায়ী। কোন পরিকল্পনা ছাড়াই অধিকাংশ আশ্রয়ণ নির্মাণ করা হয়েছে দূর্ঘম, নির্জন ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকায়। বিশেষ করে বেশির ভাগই আশ্রয়ণ নির্মাণ করা হয়েছে নদীর র্তীরবর্তী কিংবা বেড়িবাধের বাইরে। যেখানে না রয়েছে দোকনপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সভ্যতার কলরব।

এছাড়াও অধিকাংশ আশ্রয়ণের কবুলিয়ত রেজিষ্ট্রি বাসিন্দদের নামে না থাকায় সমাজসেবা অধিদপ্তর ও পল্লী উন্নয়ন ব্যাংক সহ সরকারী বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারছেননা সেখানকার বাসিন্দারা। যার ফলে পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা সহজভাবে কোন কর্মসংস্থান না পেয়ে ক্রমশই ধাবিত হচ্ছে দারিদ্র্যতার কড়াল গ্রাসে।

সামাজিক ও প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় নারী ও শিশুরা রয়েছে কুসংস্কারের ছত্রছায়ায়। মেধা বিকশিত না হওয়ার কারণে দারিদ্র মুক্ত হতে পারছেনা ভূমিহীন এ জনগোষ্ঠি। ফলে সরকারের এ উদ্দেশ্যকে সঠিক ভাবে দেখছেননা আশ্রয়ণে বসবাসরত মানুষেরা। ক্ষোভ আর দারিদ্রতার মধ্যই তাদের প্রতিনিয়ত বসবাস।

সরেজমিনে সদর ইউনিয়নের বাহেরচর আশ্রয়ণ প্রকল্পে এমনই চিত্র দেখা গেছে। শুকনো মৌসুমে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং আবাসস্থল হিসেবে এ আশ্রয়ণটি উপযোগী হলেও বর্ষা মৌসুমে রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। আশ্রয়ণটি বেড়িবাঁধের বাহিরে অর্থাৎ গহীনখালী নদীর তীর ঘেঁষে নির্মাণ করায় দিন-রাত মিলিয়ে দুদফা পানির সাথে সংগ্রাম করতে হয় অশ্রয়ণ বাসিদের। প্রায় অর্ধশতাধিক শিশুরা ওই আশ্রয়ণে বসবাস করলেও লেখাপাড়া করছেন মাত্র কয়েকজন শিশু।

এমনটাই জানান, আশ্রয়ণের বাসিন্দা মান্নান দফাদার সহ অনেকেই। রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া, চরমোন্তাজ, বড়বাইশদিয়া, চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নেও এমনই দৃশ্য দেখা গেছে।কাজির হাওলা আশ্রয়ণের বাসিন্দা শাজাহান শীলের স্ত্রী চাঁন ভানু বলেন, ‘২০০৭ সালে ঘূর্ণীঝর সিডরে বাড়ি ঘর হারিয়ে আশ্রয়ণে এসে আশ্রয় নেই, কয়েক বছর ভাল ভাবেই কাটছিল। পরে ঘূর্ণীঝর রোয়ানুতে আবার আশ্রয়ণের ঘরের টিন ভেঙে ফেলে। অর্থ সংকটে ঘর সংস্কার করতে পারিনি। তাই এখন বৃষ্টি বর্ষার মধ্যে কষ্ট করে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

বাহেরচর আশ্রয়ণের বাসিন্দা বেল্লাল মিয়া, হারুন দফাদার, ঝর্ণা রানী ও শিল্পী বেগম জানান, ‘ঘরের চালের টিন, নাট-স্ক্রু ও সিমেন্টের পিলার খসে পরছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের মেঝেতে পানি জমে যায়। এভাবেই কষ্ট করে দিন কাটাতে হচ্ছে। অনেকেই আশ্রয়ণ ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।’

তিল্লা আশ্রয়ণের কালাচান খাঁ বলেন, ‘একের পর এক বন্যা আমাদের ঘর বাড়ি তছনছ করে ফেলছে। সরকার তা সংস্কার করে দিচ্ছেননা। অর্থ সংকটে আমরাও সংস্কার করতে পারছিনা। আশ্রয়ণের জমি আমাদের নামে কবুলিয়ত রেজিষ্ট্রি না থাকায় আমাদেরকে কোন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ঋণও দেয়না।’

রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ জানান, ‘সিডর,আইলা ও মহাসিন সহ বিভিন্ন ঘূর্ণিঝরে রাঙ্গাবালী উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত ভাবে জানালেও এর কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

(এসডি/এসপি/জুন ২৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test