E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন হাট বাজারে মানুষ নিজেরাই পণ্য

২০১৮ জুন ২৯ ১৫:৩০:২৮
সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন হাট বাজারে মানুষ নিজেরাই পণ্য

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার হাটের বৈশিষ্ট্য হলো টাকার বিনিময়ে পণ্য বেচাকেনা। তবে এই সাধারণ নিয়মের বাইরে এমন হাঁটও আছে যেখানে টাকার বিনিময়ে কোনো পণ্য বিক্রি না হয়ে বিক্রি হচ্ছে মানুষ। বিভিন্ন হাটে মানুষ নিজেরাই পণ্য। 

নির্ধারিত একটি সময়ের জন্য একজন আরেকজনের কাছে বিক্রি হয়ে যান। আর যারা বিক্রি হন তারা সবাই কৃষি ও মাটি কাটার শ্রমিক।

জেলার কান্দাপাড়া, শিয়ালকোল, নাটুয়ারপাড়া, আলমপুর, কুমারিয়াবাড়ী,পানাগাড়ী, রতনকান্দি ও সোনামুখীসহ বিভিন্ন এলাকায় এই মানুষ বিক্রির হাট এখন জমজমাট। এর মধ্যে নাটুয়ারপাড়া হচ্ছে অন্যতম।

প্রতিদিন সকালে এই হাট বেশ জমে ওঠে। এই সময় জেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে মাঠে ধান রোপন, বাদাম, কাউন ও তিলের কাটার সময় শ্রমিকের দামও থাকে বেশ চড়া। নাটুয়ারপাড়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, কারো হাতে বাঁশের তৈরি ঝুড়ি,কারো হাতে ব্যাগ। ব্যাগে হালকা কাপড়-চোপড় আর কাঁচি। কেউ বসে আছে, কেই দাঁড়িয়ে।

সরজমিনে (২৯ জুন) শুক্রবার সকালে হাটের ভেতরে ঢুকতেই আব্দুর রশিদ নামে এক শ্রমিক এসে বললেন, মামা কামলা লাগবো? কত দিবেন?’ বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বিজরীল গ্রামে। তিনিসহ সাতজনের একটি দল ওইদিনই নাটুয়ারপাড়া আসেন। অন্য ছয়জন ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছেন।

তিনি আরো বেশি দামে বিক্রি হওয়ার আশায় দাঁড়িয়ে আসেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় এখন কোনো কাজ নেই। বইসা থাইকা কি করব? তাই এখানে বাদাম, তিল ও মাটি কাটার জন্য আছি। কিছু টাকা জমিয়ে চইলা যামু।

রংপুর থেকে দুদু মিয়া এসেছেন নয় জনের এক দল নিয়ে। তিনি জানান, এ সময় তাদের এলাকায় কাজ না থাকায় তারা কাজিপুরে এসেছেন কামলা বিক্রি করতে। ১০/১৫ দিন বাদাম, তিল ও মাটি কাইটে চলে যাবেন। প্রতি বছর এই সময় তিনি এই এলাকায় বাদাম তোলা, তিল ও কাউন কাটতে আসনে বলে জানান।

আক্ষেপ করে দুদু জানান, তার ৮ বিঘা জমি ছিল। ১৬ বছর আগে রাক্ষুসী নদী তা কেড়ে নিয়েছে। পরিবারের লোকজন নিয়ে এখন অন্যের জায়গায় থাকেন। এজন্য তাকে ভাড়া দিতে হয়। তার দলে রাশেদ নামে নবম শ্রেণির একজন ছাত্রও আছে।

বগুড়ার ধুনটের বাঁশপাতা গ্রাম থেকে আসা একটি দলের প্রধান হলেন ফললুল হক। বর্ষা আসার আগে সিরাজগঞ্জে চর এলাকায় বিভিন্ন ফসল কাটার সময় কামলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ সময় রংপুর, দিনাজপুর, জামালপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কামলা এসে ভিড় জমায়।

অনেকেই বিক্রি হওয়ার আশায় রোদ, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আসেন। বিক্রি না হতে পারলে নাটুয়ারপাড়া স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ মাঠে রাতে থাকেন। জামালপুর থেকেও শ্রমিক আসেন এখানে। নাটুয়ারপাড়া হাটে কথা হয় চরছিন্না গ্রামের এক গৃহস্থের সাথে। কামলা নিতে এসেছেন তিনি।

তিনি বলেন, কামলার দাম গত বছরের চেয়ে এবার বেশি। তবু কিছু করার নেই। বাদাম, কাউন ও তিল যমুনা নদীতে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তাই বেশি দাম দিয়েই কামলা কিনতে হচ্ছে। কাজিপুর উপজেলার মাজনাবাড়ী গ্রামের কৃষক আমির হোসেন বলেন, আমি নাটুয়ারপাড়া থেকে ৩০০ টাকা দরে পাঁচজন কামলা (শ্রমিক) কিনছি।

এইসব কামলা কাজে কোন ফাঁকি দেয় না। তাদের তিনবেলা খাবার দিতে হয়। আর কাজ করে ভোর থেকে একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত। বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, এখন একজন শ্রমিকের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তাতে তিনবেলা খাবারসহ এক কামলার দাম পড়ে কমপক্ষে ৫০০ টাকা।

(এমএএম/এসপি/জুন ২৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test