E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কুষ্টিয়া-মেহেরপুর বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি

২০১৮ জুলাই ০২ ১৩:২১:২৫
কুষ্টিয়া-মেহেরপুর বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : রাস্তা ভাঙ্গার খোঁড়াযুক্তি তুলে দুইজেলার বাস মালিক সমিতির নিজস্ব দ্বন্দে বাস বন্ধ করে যাত্রীদের জিম্মির অভিযোগ কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে। 

দেশের প্রথম রাজধানীখ্যাত মেহেরপুর মুজিব নগরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক এটি। দীর্ঘদিন ধরেই চলমান এই অচলাবস্থা যেন দেখার কেউ নেই বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী জনসাধারণ। রাস্তা ভাঙ্গায় যানবাহন বন্ধের অভিযোগ নাকচ করেন কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগ। প্রায় ১বছর ধরে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কে সরাসরি যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধে সৃষ্ট সীমাহিন জনভোগান্তি নিরসনে কার্যকর উদ্যেগ গ্রহনে দুই জেলার প্রশাসনের প্রতি আবেদন ভুক্তভোগী জনসাধারণ ও কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের। জেলা প্রশাসন বলছেন, মেহেরপুর বাস মালিক সমিতির গোয়ার্তুমির কারণে সৃষ্ট জনভোগান্তি বন্ধের উদ্যেগ নেয়া হবে।

গাংনীর একজন স্কুল শিক্ষক আফজাল হোসেন প্রতিদিন কুষ্টিয়া থেকে যাতায়াত করেন কর্মস্থলে। তিনি বলেন, মাত্র ৫৮কি:মি: দুরত্বের কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাড়ক। দীর্ঘদিন ধরেই দুইজেলার বাস মালিক সমিতির অযৌক্তিক গোয়ার্তুমি ও নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দের কারণে নানা খোঁড়া যুক্তিতে হরহামেসা অনির্দিষ্টকালের বাস বন্ধ এখন গা সয়ে গেছে এঅঞ্চলের জনসাধাণের। মাঝপথে যাত্রী নামিয়ে দুইজেলার বাস মালিক সমিতির সৃষ্ট নিত্যদিনের ভোগান্তি নিয়েই চলাচল করছেন তারা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিনিয়ত দুর্র্ভোগের মুখে নিরুপায়। তিনি বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অবিলম্বে চলমান এই ভোগান্তি নিরসনের দাবি করেন।

গৃহবধূ নূরমুর্শেদার বৃদ্ধা নানীর অসুস্থ্যতার সংবাদ পেয়ে জরুরী একটি সিএনজি ভাড়া করে কুষ্টিয়া থেকে গিয়েছিলেন মেহেরপুরের কাথুলি গাড়াবাড়ি গ্রামে। সেখান থেকে ফেরার সময় অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, মেহেরপুর-কাথুলি সড়কে ৫/৬জনের একদল লাঠিয়াল বাহিনী সিএনজির পথরোধ করে সাইড করায়।

ঐ গৃহবধূর অভিযোগ- সিএনজি ভাড়া করে আসার দোষারোপ করে প্রকাশ্যে তারা লাঠি উচিয়ে ৫শ’ টাকা দাবি করেন এবং বলেন, কারও কিছু করার নেই, এটা মেহেরপুর মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত। অবস্থা দেখে সাথে থাকা দুই শিশুকণ্যাকে নিয়ে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাৎক্ষনিক উদ্ধারের জন্য মেহেরপুর সদর থানায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাহায্য পায়নি। অতপর দাবিকৃত টাকা দিয়ে সেখান থেকে মুক্ত হই।

খলিসাকুন্ডি গ্রামের সিএনজি চালক মতিয়ার আলী জানান, সরাসরি বাস চলাচল না থাকায় স্বল্প আয়ের মানুষ অসুস্থ্য রোগী কিংবা গর্ভবতী মায়েদের বহণ করতে তাৎক্ষনিক অগত্যা সিএনজি বা অটোরিক্সার পরিবহণ সুবিধা নেয়ার কোন সুযোগ নেই মেহেরপুর বাস মালিক সমিতি নিযুক্ত সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে। তারা প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে লাঠিসোটা নিয়ে পাহাড়া বসিয়ে বাধা দিচ্ছেন ছোট ছোট এসব যানবাহন চলাচলে।দীর্ঘদিন ধরে মেহেরপুর মালিক সমিতি সৃষ্ট বিদ্যমান এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।

বাস চালক আব্দুল মজিদ বলেন, রাস্তা ভাঙ্গার কারণে দুই জেলার মালিক সমিতি কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে প্রায় বছর খানেক। এতে যাত্রীদের সিমাহীন ভোগান্তি হচ্ছে স্বীকার করে এর সমাধানের দাবি করেন। একই সাথে যাত্রীরা নিজ পছন্দের পরিবহণ ব্যবহারে কোন বাধা থাকা উচিৎ নয় জানিয়ে মেহেরপুর মালিক সমিতি নিযুক্ত লাঠিয়াল বাহিনী কর্তৃক যাত্রী হয়রানি নিন্দা জানিয়ে কুষ্টিয়া জেলা পরিবহণ চালকরা এই নির্যাতন বন্ধেরও দাবি করেন।

রাস্তা ভাঙ্গার একমাত্র কারণ দেখিয়ে যাত্রীবাহী বাস বন্ধের অযৌক্তিক কারণকে নাকচ করেন কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক ৫৮কি:মি: মধ্যে কুষ্টিয়া সওজ’র ২৮ কি:মি:। এর মধ্যে মিরপুর উপজেলার ভাঙ্গা বটতলা থেকে খলিশাকুন্ডি পর্যন্ত ১৩কি:মি: অনেক পুরোন হওয়ায় ছোট খাটো গর্ত ছিলো যা মেইনটেন্যান্স প্রকল্পে মেরামতের কাজ সিংহভাগই শেষের পথে। তাছাড়া এই রাস্তা চলাচলে এতটাই অযোগ্য নয় যে পরিবহণ বন্ধ রাখতে হবে। সকল প্রকার যানবাহন চলাচল করছে নির্বিঘেœ, অথচ কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আন্ত:জেলা সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। দুইজেলার মালিক সমিতির মধ্যে বিদ্যমান নিজস্ব দ্বন্দের কারণেই তারা দীর্ঘদিন ধরে এটা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে জনসাধারণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন,যাত্রীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে কিছু সমস্যা থাকলেও আমরা সরাসরি বাস চলাচলে আন্তরিক। মেহেরপুর মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে বারংবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা কিছুতেই রাজি নয়, জানিয়ে তিনি দুই জেলার প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করে উদ্যেগ নেয়ার আবেদন করেন।

দুই জেলার মালিক সমিতির এই অযৌক্তিক গোয়ার্তুমির তীব্র নিন্দা করে জনজীবন জিম্মি করে যাচ্ছেতাই করতে দেয়া হবে না উল্লেখ করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো: জহির রায়হান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের সাথে কথা হয়েছে দুই জেলার মালিক সমিতির নেতাদের নিয়ে বসে এর সমাধানে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, তাদের যদি না পোষায় তাহলে পরিবহণ ব্যবসা ছেড়ে অন্যকোন ব্যবসায় চলে যাক। এভাবে জনভোগান্তি সৃষ্টির কোন সুযোগ দেয়া হবে না মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে।

এ বিষয়ে মেহেরপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব গোলাম রসুল বলেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সরাসরি আন্তজিলা বাস চলাচল দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ আছে। রাস্তা খারাপ ছিলো বলে দুই জেলার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নিয়েই সরাসরি বাস বন্ধ করা হয়েছে। তবে এখন যেহেতু রাস্তা মেরামত হয়েছে, এখন আমরা দুই জেলার মালিক সমিতি বসে আবার সরাসরি বাস চলাচল শীঘ্রই শুরু করব।

রাস্তাই অটো বা সিএনজি চলাচলে বাধা দেয়া বা টাকার বিনিময়ে চলতে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা প্রশাসনের নির্দেশেই আমাদের শ্রমিকেরা কিছুদিন করেছিলো। এখন আর কোন শ্রমিক সেটা করে না। সবগুলি রাস্তায় আনসার নিয়োগ দেয়া আছে। তারাই এগুলি দেখাশুনা করে। মাসশেষে আমরা আনসারদের বেতন পরিশোধ করি।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনাই ইতোপূর্বেই মেহেরপুর বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছি। দুই একদিনের মধ্যেই আমরা দুই জেলার নেতাদের নিয়ে একটা সমন্বয় করব যাতে সরাসরি আন্তজিলা বাস চলাচল শুরু করা যায়।

(কেকে/এসপি/জুলাই ০২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test