E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

চিকিৎসা নিতে এসে এ যাবৎ লাশ হলো ৩ জন

সাভার কেয়ার হাসপাতালে সিজার করতে গিয়ে গর্ভবতীর মৃত্যু

২০১৮ জুলাই ০৩ ১৫:২৪:১৬
সাভার কেয়ার হাসপাতালে সিজার করতে গিয়ে গর্ভবতীর মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার : আবারও সাভার কেয়ার হাসপাতালে ভুল অপারেশনে এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে সাভার কেয়ার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। এ নিয়ে গত দেড় বছরের মধ্যে সাভার কেয়ার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এবারে নিহত নারীর নাম মাহমুদা বেগম (২২)। সে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানা এলাকার এমারতপুর শাফিউলের স্ত্রী। শাফিউল স্ত্রীকে নিয়ে সাভার পৌর এলাকার ব্যাংকটাউন মহল্লায় ভাড়া থেকে স্থানীয় একেএইচ গ্রুপের সিনিয়র পার্সোনাল অফিসার হিসেবে কাজ করেন।

এর আগে গত শুক্রবার গর্ভবর্তী মাহমুদার প্রসব বেদনা উঠলে এক দালালের মাধ্যমে তাকে সাভার থানা বাসস্ট্যান্ড এলাকার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন বিকেল সাড়ে তিনটারদিকে কোন প্রকার প্রস্তুতি ছাড়াই মাহমুদাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় হাসপাতালের লোকজন। এসময় ডা: দিলরুবা ইয়াসমিন দিনা সিজার অপারেশন করে একটি কন্যা সন্তান বের করে আনেন। কিন্তু ভুল ইনজেকশন পুশ করায় রোগীর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। কোনভাবেই রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পারায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িগড়ি করে মাহমুদাকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে নিবির পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি রেখে ১২ ব্যাগ রক্ত দেয়ার পরও গতকাল সোমবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহমুদার মৃত্যু হয়।

মাহমুদার দেবর রাজু অভিযোগ করেন, ডা: দিলরুবা ইয়াসমিন দিনা কেয়ার হাসপাতালের পাশের পপুলার হাসপাতালে চেম্বার করেন। চিকিৎসক অতিরিক্ত কমিশনের লোভে তার ভাবীকে পাশের কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়া তার ভাবীকে কোন প্রকার প্রস্তুতি ছাড়াই অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় হাসপাতালের লোকজন। তার অবস্থা ভালো এবং কোন রক্তের প্রয়োজন নাই জানিয়ে ডা: দিলরুবা ইয়াসমিন দিনা মাহমুদার সিজার অপারেশন করেন।

এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি ও অবহেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে টানা তিনদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে সোমবার রাতে না ফেরার দেশে চলে যান। মাইশা নামে মাহমুদার পাঁচ বছরের আরও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

বিষয়টি জানতে কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক আসলাম হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবা কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ১৫ নভেম্বর এই হাসপাতালটি ভুল চিকিৎসায় মোরছালিন নামের (০৪) এক বাক প্রতিবন্ধী শিশু ভুল চিকিৎসায় মারা যায়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে নিহতের স্বজনরা হাসপাতাল ভাঙচুর করার চেষ্টা করলে কর্তৃপক্ষ তাদের মারধর দেয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মৃতের স্বজনদের সঙ্গে আপোষ মিমাংশা করে লাশটি দ্রুত হাসপাতাল থেকে টাঙ্গাাইল এলাকায় পাঠিয়ে দেয়।

এ ঘটনার ৩ মাস অতিক্রম না হতে না হতেই আবারও ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারী সোমবার সাভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকের ও কর্তৃপক্ষে অবহেলায় সিংগাইর এলাকার আাব্দুস সালামের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া যায়। দালালদের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারী সোমবার বিকালে সিংগাইরের ডিগ্রীচর এলাকার বাসিন্দার আব্দুস সালাম টিউমারজনিত রোগ নিয়ে সাভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়।

সাভার কেয়ার হাসপাতালের ডা: প্রফেসর কাজী সোহেল ইকবালের তত্ত্বাবধনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরে অপরেশন করানো হয়। অপরেশন শেষে রোগিকে অচেতন অবস্থায় বেডে এনে রাখা হয়। এরপরই রোগির জ্ঞান ফিরে আসলে রোগির প্রসাবের আক্রান্ত হয়। হাসপাতালের ডাক্তারসহ নার্স ও কর্তৃপক্ষের কাউকে না পেয়ে রোগি নিজেই একা বাথরুমে প্রসাব করার উদ্দেশ্য বিছানা থেকে উঠলেই মাথা ঘুরে হাসপাতালে ফ্লোরে পড়ে যায় আব্দুস সালাম। এসময় হাসপাতালের ডাক্তার এসে রোগীর অবস্থা খারাপ দেখতে পেয়ে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে জরুরী বিভাগে ভর্তি করে। জরুরী বিভাগের ডাক্তার তমাল রোগী আব্দুস সালামকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ খবরে আব্দুস সালামের আত্মীয়স্বজনরা সাভার কেয়ার হাসপাতালে কতৃপক্ষের সাথে বাকবিতান্ডয় জড়িয়ে যায়। এক পর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগির আত্মীয়স্বজনদের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে লাশটি এনাম মেডিকেলের সামনে থেকে কেউ কিছু জানার আগেই আব্দুস সালামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

(টি/এসপি/জুলাই ০৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test