E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পনের বছর পর মতলবের আবুল খায়েরকে সাতক্ষীরায় ফিরে পেলেন পরিবারের সদস্যরা

২০১৮ জুলাই ০৮ ১৮:৪৩:৪০
পনের বছর পর মতলবের আবুল খায়েরকে সাতক্ষীরায় ফিরে পেলেন পরিবারের সদস্যরা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : পনের বছর ধরে বহু জায়গায় পিতাকে খুজেছি। দিনমজুর আমি। কয়েকদিন কামলা খেটে যেক’টা টাকা পাই, তা দিয়ে সংসার চালাই,আর আব্বাকে খুঁজি। ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট-কোথায় যাইনি আমি? এরই মধ্যে স্বামীকে হারিয়ে শুধু কাঁদতেন আমার মা। একপর্যায়ে তিনি শয্যাশায়ী হলেন। আর উঠলেন না। চিরবিদায় নিলেন। আপনারা যারা আমার আব্বাকে ফিরে পেতে সহায়তা করেছেন, তাদের ঋণ শোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। এই বলেই সাতক্ষীরা ত্রিশমাইলে রবিবার সকালে অঝোরে কাঁদছিলেন চাঁদপুরের শাজাহান সরকার। 

পনের বছর আগের কথা। পড়ন্ত বিকেলে চা পানের কথা বলে হুট করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ৫৫ বছর বয়স্ক আবুল খায়ের। স্থানীয়ভাবে যাকে সবাই লনু মিঞা বলে চেনেন। দু’ ছেলে ও পাঁচ মেয়ে সন্তানের জনক লনু মিঞা মানসিকভাবে কিছুটা অপ্রকৃতিস্ত ছিলেন। তবে তার আচরণের মধ্যে পাগলামির তেমন নমুনা ছিলনা। লনু মিঞা চা পানের কথা বলে সেই যে বেরিয়ে গেলেন আর বাড়ি ফেরেননি। এরপর তিনি কোথায় ছিলেন তা কারো জানা নেই।

পাটকেলঘাটা থানার ত্রিশমাইল এলাকার চা বিক্রেতা নুর ইসলাম জানান, মাস তিনেক আগে স্থানীয় সাইকেল মিস্ত্রি গাউসের দোকানের সামনে বৃদ্ধ লোকটাকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তিনি তাকে তুলে মসজিদের পাশে থাকতে দেন। স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি অপিরিচিত এই লোকটাকে খাইয়েছেন। এমনকি তার চিকিৎসা সেবাও দিয়েছেন। পরে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তার থাকার জন্য একটা জায়গাও করে দেন। এভাবেই চলছিল। তবে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তারা চিন্তায় পড়ে যান। বয়স্ক লোকটা কোন কথা না বলায় তার পরিচয় জানা সম্ভব হচ্ছিল না। বহু চেষ্টার একপর্যায়ে তার পরিচয় জানা সম্ভব হয়। পরে তার ঠিকানা সংগ্রহ করে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে সরবরাহ করেন।

গণমাধ্যমকর্মী আবুল কাসেম বলেন, নুর ইসলামের কাছ থেকে ঠিকানা সংগ্রহ করে তিনি সংবাদের চাঁদপুর প্রতিনিধি শাহ মাকসুদের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি মতলব প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাশের ফোন নাম্বার দিলে তার মাধ্যমেই খোজ মেলে লনু মিঞার পরিবারের। তার একটি কান বোচা দেখেই নিশ্চিত হওয়া যায়,ইনিই সেই হারিয়ে যাওয়া লনু মিঞা।

লনু মিঞার ছোট ভাই শাহ আলম বলেন, সাংবাদিক শ্যামল দাশের কাছ থেকে ভাইয়ের খবর জানতে পেরে তাৎক্ষনিকভাবে স্বল্প প্রস্তুতি নিয়েই তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়েন। ভাইকে খুজে পাওয়ার আনন্দে রাতে গাড়ির মধ্যে এতটুকু ঘুমাতে পারেননি তারা কেউই।

নাতি ফারুক হোসেন বলেন, নানার চেহারা কেমন, আমার মায়ের কাছ থেকে শুনে মনের মধ্যে একটা ছবি এঁকে রেখেছিলাম। নানির আদর পাইনি। নানাকে পেয়ে তার দীর্ঘদিনের একটি মনোবসনা পূর্ণ হল।
ত্রিশমাইলে যে ছোট্র কাঠের ঘরটিতে লনু মিঞা থাকতেন,সেই ঘরের মধ্যে বসেই ছেলে-নাতি আর ভাইকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছিলেন তিনি। কথা বলতে পারছিলেন না। চোখের নোনা জ¦লে শুধুই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন নীরবে।

ছেলে শাজাহান সরকার জানান, রাতেই তারা বাবাকে নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন।

(আরকে/এসপি/জুলাই ০৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test