E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হুমকিতে বসতভিটা আবাদী জমি

ঘাটাইলে প্রশাসনের যোগসাজসে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন 

২০১৮ জুলাই ১২ ১৭:১৮:১৯
ঘাটাইলে প্রশাসনের যোগসাজসে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন 

রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের হাটকয়েড়া এলাকায় ঝিনাই নদী থেকে ৫টি অবৈধ ড্রেজার দিয়ে প্রায় ৬ মাস ধরে চলছে বালু উত্তোলন। উপজেলা ভূমি অফিসের মৌখিক অনুমতিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাজাহান তালুকদার ও ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান এ বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বসতভিটা, ফসলি জমি ও একটি গাইড বাঁধ নদী গর্ভে চলে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন করেও এর প্রতিকার পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আনেহলা ইউনিয়নের হাটকয়েড়া এলাকার ঝিনাই নদী থেকে ভূমি অফিসের মৌখিক অনুমতি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাজাহান তালুকদার ও ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান ৫টি অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। সপ্তাহখানেক ধরে ৩টি ড্রেজার বন্ধ থাকলেও রাতদিন চলছে ২টি বাংলা ড্রেজার। বাকি ৩টি অন্যস্থানে স্থাপন করার কাজ চলছে। যেখানে ড্রেজার বসানো হয়েছে তার ঠিক ৫০ মিটার দূরেই নতুন একটি ব্রিজের কাজ চলছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ওই ব্রিজটি।

এছাড়াও অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বসতভিটা, ফসলি জমি ও একটি গাইড বাঁধ নদী গর্ভে চলে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে শত শত একর আবাদী জমি ও বসতভিটা। স্থানীয় মহির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি উপজেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দিলেও এর কোন প্রতিকার হয়নি।

অভিাযোগের প্রেক্ষিতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) আম্বিয়া খাতুন পরিদর্শনে এসে অবৈধ ড্রেজার উচ্ছেদ না করে উল্টো বালু উত্তোলনের জন্য ড্রেজারের স্থান নির্র্ধারণ করে দিয়ে গেছেন। ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগ সহকারি কমিশনার (ভূমি) আম্বিয়া খাতুন মোটা অঙ্কের টাকা মাসোহারার বিনিময়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন। এদিকে স্থানীয় বায়েজিদ ও সোমেলা বেগম সংবাদ কর্মীদের কাছে তথ্য তুলে ধরায় তাদের মাদক মামলা দিয়ে ফাঁসানো ও গ্রাম ছাড়া করার ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বালু উত্তোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট ওই প্রভাবশালী মহল।

স্থানীয় বায়েজিদ তালুকদার জানান, অবৈধ ড্রেজার বসানোর পর উপজেলা প্রসাশন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে সহকারি কমিশনার (ভূমি) আম্মিয়া খাতুন এসে পরিদর্শন করে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তার পরে আরো ড্রেজার বসানো হয়। আবারো লিখিত অভিযোগ করি আমরা। তিনি আবারো এসে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনের মৌখিক অনুমতি দিয়ে যান। যেখানে সারা বাংলাদেশে ড্রেজার নিষিদ্ধ, সেখানে ওনি কিভাবে ড্রেজার চালানোর অনুমতি দেয়। তিনি মোটা অঙ্কের টাকা খেয়েই এ অনুমতি দিয়েছে। আমি এ সত্য বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরায় বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে।

মহির উদ্দিন জানান, তিনি টাকা খেয়েই এই অনুমতি দিয়েছেন। না হলে আমাদের কথা শুনবে না কেন? কেনই বা বালু তুলার অনুমতি দিবে?

সোমেলা বেগম বলেন, আমার বসতভিটা অর্ধেক নদীতে চইলা গেছে। চেয়ারম্যান মেম্বারদের জানাইছি তারা কোন বিহিত করে নাই। বাড়ির সামনের রাস্তাটাও নদীতে চইলা গেছে। চেয়ারম্যান কইছে এইডা কোন রাস্তা না। এহন আমি পোলাপান নিয়া যামু কই?

অভিযোগের বিষয়ে আনেহলা ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান তালুকদার বলেন, ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন আইনত অবৈধ, কিন্তু রাস্তা নির্মাণের স্বার্থে আমরা ড্রেজার ব্যবহার করছি। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সামনে কেউ কোন অভিযোগ করে না।

অভিযোগের বিষয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) আম্মিয়া খাতুন বলেন, এর আগে অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমার অফিসের লোক পাঠিয়ে ড্রেজার বন্ধ করা হয়েছিল। এখন কোন ড্রেজার চলছে কিনা আমার জানা নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ সত্য নয়। আমি ওই এলাকায় যাইনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলরুবা আহমেদ বলেন, ঝিনাই নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আম্বিয়া খাতুনের ওই এলাকা পরিদর্শন ও মৌখিক অনুমতির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

(আরকেপি/এসপি/জুলাই ১২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test