E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কলাপাড়ায় বর্ষার শুরতেই ডুবে আছে পাঁচ গ্রাম, হাজারো মানুষের দুর্ভোগ

২০১৮ জুলাই ১৭ ১৫:৫৩:১৫
কলাপাড়ায় বর্ষার শুরতেই ডুবে আছে পাঁচ গ্রাম, হাজারো মানুষের দুর্ভোগ

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : ক্লাস শুরু হয় বেলা ১২ টায়, কিন্তু স্কুলে আসতে হয় সকাল নয়টার মধ্যে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নিজামপুর সরকারি প্র্থামিক বিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষার্থীকে গত তিনদিন ধরে এভাবেই স্কুলে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে কখনও হাটু সমান পানি ভেঙ্গে কিংবা নৌকা, ভেলায় করে।

নব গঠিত মহিপুর থানার নিজামপুর গ্রামের ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে নদীর পানি প্রবেশ করায় ও বর্ষায় পানিতে সৃষ্ট স্থায়ী পানি বন্যায় এখন জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করে স্কুলে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এ কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে।

শুধু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী নয়, সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছে পাঁচটি গ্রামের অন্তত দশ হাজার মানুষ। বর্ষা মেীসুমের শুরুতেই নিজামপুর গ্রামের ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় সকাল-সন্ধা দু’বেলা প্লাবিত হচ্ছে প্রতিটি গ্রাম। এ কারণে ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্ধ রয়েছে চাষাবাদ। গত চার বছর ধরে এ দূর্ভোগ পোহাচ্ছে পাঁচটি গ্রামের মানুষ।

সরেজমিনে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় নিজামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গোটা নিজামপুর গ্রামই পানিতে তলিয়ে আছে। রাস্তা ও ফষলি জমি চিহ্নিত করা দুঃসাধ্য। জোয়ার শুরু হওয়ায় মূহুর্তের মধ্যে তলিয়ে গেছে গোটা গ্রাম। নিজামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি স্কুল কাম সাইক্লোন সেল্টার হলেও সেল্টারের সিড়ি পর্যন্ত পানি উঠেছে। স্কুল মাঠ সহ বিদ্যালয়ের চারিদিক নিচু হওয়ায় তিন-চার ফুট পানিতে ডুবে আছে। এ কারণে বন্ধ রয়েছে স্কুলের পিটি ক্লাস।

স্কুল সূত্র জানা যায়, আগামী ২২ জুলাই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের মডেল টেষ্ট পরীক্ষা। আগামী ১২ আগষ্ট প্রাক থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। বিদ্যালয়ে ২২৭ ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও এই পানি দূর্ভোগে অর্ধেক শিক্ষার্থীও উপস্থিত হতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখতে সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে সকল শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। কেননা সকাল নয়টার পরই গোটা নিজামপুর গ্রাম পানিতে প্লাবিত হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা।

পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী জুৃঁই আক্তার জানায়, সকাল সাড়ে আটটায় স্কুলে যখন স্কুলে এসেছি তখন হাটু সমান পানি। কিন্তু যারা নয়টায় এসেছে তাদের কোমড় সমান পানিতে ভিজে আসতে হয়েছে। নিজামপুর গ্রামের এই ছাত্রীর বাসা থেকে স্কুলের দুরত্ব মাত্র আধা কিলোমিটার। কিন্তু স্কুলে আসার প্রধান সড়ক ভেঙ্গে বিধ্বস্ত হয়ে পানিতে ডুবে থাকায় সকালে নদীতে জোয়ার আসার আগেই তাদের স্কুলে আসতে হচ্ছে। কারন জোয়ারের সময় দুপুর বেলা ১২টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত চার-পাঁচ ফুট পানিতে তলিয়ে থাকে গোটা নিজামপুর গ্রাম। তখন নৌকায়ই ভরসা।

রাস্তায় যেতে যেতে কথা হয় একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে যারা পাশ্ববর্তী মহিপুর কো-অপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও নিজামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কাছে গিয়েও দেখে বোঝার উপায় নেই তারা স্কুলে পড়েন। বাজারের ব্যাগে করে বই, খাতা ও গায়ের জামা ভরে তারা ডুবে যাওয়া রাস্তার স্রোতের বীপরীত দিয়ে হাটছেন। কেউ কেউ স্রোতে ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পেরে পড়ে যাচ্ছেন পানিতে। স্কুল ছাত্র আলামিন, সুমন দুজনেই ক্লাস টু এর ছাত্র। কিন্তু স্কুলে পানি উঠে যাওয়ায় আজ রোল কল করেই তাদের ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানালেন। কেউ কেউ নৌকা,ভেলায় গন্তব্যে ফিরলেও তাদের প্রায় দেড় কিলোমিটার পায়ে হেটে এ পানির মধ্য দিয়ে বাসায় ফিরতে হয়েছে বলে জানালেন।

স্থানীয় দুর্ভোগ কবলিত গ্রামের রাজিয়া বেগম, আশরাফ আলী, পারভীন সুলতানা, আনোয়ার হোসেন জানান, সকাল হলেই নদীর পানিতে তলিয়ে যায় গোটা এলাকা। দুপুর দুইটার পর নদীতে ভাটার টানে পানি কিছুটা কমলেও আবাও সন্ধার পর পানি ওঠা শুরু করে। এভাবে চলে গভীর রাত পর্যন্ত। তাঁদের অভিযোগ বছরের পর বছর ধরে তারা এ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। বর্ষা মেীনুমের মধ্যে বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু পানি ওঠা-নামা বন্ধ হয়নি। যদি শুকনো মেীসুমে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হতো তাহলে এ দূর্ভোগ পোহাতে হতো না। এখন পাঁচটি গ্রামের মানুষকেই জোয়ার-ভাটার উপর তাদের দৈনন্দিন কাজ কর্ম করতে হচ্ছে।

একাধিক অভিভাবক জানান, পানিতে বাড়ি-ঘর সব ডুবে আছে নিজাপুরসহ পুরান মহিপুর, সুধিরপুর, কমরপুর ও ইউসুফপুর গ্রামের শতশত বসত ঘর। তাদের রান্না কিংবা ঘুমানোর জায়গা পর্যন্ত নেই। এ অবস্থায় স্কুল খোলা থাকায় ছেলে-মেয়েদের বাধ্য হয়ে স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে। কিন্তু তারা স্কুলে গেলেও সকালে এবং রাতে পানি ওঠায় পড়ার সময়ই তো পায় না। শিক্ষকরা বলেছে সামনে পরীক্ষা তাই বাধ্য হয়ে স্কুলে পাঠাচ্ছেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, সকালে প্রথম শিফটে তো ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিই কমে গেছে। সোমবার সকালে প্রাক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে অর্ধেকেরও কম শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। যারাও এসেছে অনেক অভিভাবক জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আগেই তাদের বাড়ি নিয়ে গেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শামসুল হক ভদ্র জানান, গত চার বছর ধরে এভাবে বর্ষা হলেই স্কুল, রাস্তা-ঘাট বাঁধ ভাঙ্গা পানির তোড়ে তলিয়ে যায়। চার বছর ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তা ও বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ঘুরে তাদের দূর্ভোগ দেখে গেছেন কিন্তু উন্নয়নের আশ্বাসের অন্ধকারেই তারা রয়ে গেছেন। এ কারনে তাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চরম শিক্ষা দুর্ভোগে পড়েছে।

(এমকেআর/এসপি/জুলাই ১৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test