E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ 

২০১৮ জুলাই ২১ ১৫:৩৩:১২
বিষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বৈদ্যুতিক সংযোগের নামে গ্রামবাসির কাছ থেকে চাঁদাবাজির ঘটনায় দুদকে অভিযোগ ও সংবাদ সম্মেলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ক্রমশঃ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। অভিযোকারিকে শুধু হুমকি ধামকি নয়, তাকেসহ তার পক্ষের লোকজনদের নামে বৃহষ্পতিবার আদালতে পরিকল্পিত চাঁদাবাজির মামলা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এলাকার পরিস্থিতি ক্রমশঃ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

স্থানীয় দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ২২ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রতিশ্র“তি অনুযায়ি বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্বাচিত বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান বাড়ি পিছু পাঁচ হাজার ২০০ টাকা দেওয়ার কথা বলেন।

এ সময় তিনি পাড়া অনুযায়ি ভাগ করে সমীর মণ্ডলসহ কয়েকজনকে নেতা বানিয়ে ৭৩ পরিবারের কাছ থেকে মিটার প্রতি দু’ থেকে আড়াই হাজার করে দু’ লাখ ৩৮ হাজার টাকা তোলেন। পরবর্তীতে দু’ বছরেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়া ও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত কর্মসুচিতে নামমাত্র টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার কথা জানতে পেরে গ্রামবাসি টাকা ফেরৎ চান। টাকা ফেরৎ দিতে টালবাহানা করায় বিষ্ণুপুর গ্রামের সমীর মণ্ডল গত ২৩ জুন চেয়ারম্যানের দুর্ণীতির বিরুদ্ধে দুদকের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক বরবার অভিযোগ করেন।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় সমীর মণ্ডল ও জয়পত্রকাটি গ্রামের মাওলা বক্সের সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছেলে আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁচাই গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে প্রতারণার অভিযোগ সংক্রান্ত ১২ জুলাই স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হয়। এ ধরণের প্রতিবেদনে চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিনের হাত রয়েছে বলে সমীর মণ্ডলসহ তার পক্ষের লোকজনের ধারণা হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ জুলাই সমীর মণ্ডল সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে শেখ রিয়াজউদ্দিনকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে পড়াশুনা করাকালিন ছাত্র শিবিরের নেতা বলে উল্লেখ করেন। এমনকি শেখ রিয়াজউদ্দিন পারিবারিকভাবে মুসলিমলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে দাবি করেন সমীর মণ্ডল। যদিও শেখ রিয়াজউদ্দিন তার বিরুদ্ধে সমীর মণ্ডলের আনীত বিদ্যুৎ সংযোগের নামে টাকা আত্মসাৎ, ছাত্র শিবির ও মুসলীম লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেন।

এদিকে বন্দকাটি গ্রামের মোজাফফর রহমানের ভগ্নিপতি মিজানুর রহমান সম্প্রতি বিষ্ণুপুর গ্রামের সমীর মণ্ডলের বিমাতা ভাই সমরেশ মণ্ডলের কাছ থেকে বিরোধপূর্ণ জমি কিনে সেখানে বাড়ি করতে গেলে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করলে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন আদালতে যে প্রতিবেদন দাখিল করেন তা সমীর মণ্ডলের বিপক্ষে যায়। সমীর মণ্ডলের অভিযোগ, শেখ রিয়াজউদ্দিনের কাছে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে নেওয়া টাকা ফেরৎ চাওয়ায় তার বিপক্ষে প্রতিবেদন দিয়েছেন শেখ রিয়াজউদ্দিন।

সমীর মণ্ডলের পক্ষে জমি দখল সংক্রান্ত প্রতিবেদন না যাওয়া, দুদকে অভিযোগ ও সংবাদ সস্মেলন করাকে কেন্দ্র করে শেখ রিয়াজউদ্দিনের ক্ষোভ ক্রমশঃ বাড়তে থাকে। এরই জের ধরে গত ১৫ জুলাই বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদে বসে চেয়ারম্যানের নির্দেশ পেলেই সমীর মণ্ডলকে দেখে নেওয়া হবে বলে চেয়ারম্যানের ভাগ্নে পরিচয়দানকারি নীলকণ্ঠপুরের ফিরোজ লস্কর, চাঁচই গ্রামের ফিরোজ মোড়ল, একই গ্রামের আব্দুস সবুর, বিষ্ণুপুর গ্রামের সমরেশ মণ্ডল, বন্দকাটি গ্রামের মিজানুর রহমান, দুম্বপোতার কামরুল ইসলাম ও পারুলগাছার আলম ঢালীসহ কয়েকজন হুমকি দিয়েছেন এমন অভিযোগে পরদিন থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। পরদিন রাতে সমীর মণ্ডলের বাড়িতে মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী ও মমরেশ মণ্ডল হামলা করেছেন ১৭ জুলাই থানায় এমন অভিযোগ করা হয়। ১৮ জুলাই কালিগঞ্জ থানার উপরিদর্শক ফেরদৌস ও লিয়াকত হোসেন ঘটনার তদন্তে আসেন।

এদিকে শেখ রিয়াজউদ্দিনের সঙ্গে সমীর মণ্ডল ও তার পক্ষের লোকজনদের বিরোধ ক্রমশঃ তীব্র আকার ধারণ করার একপর্যায়ে গত বৃহষ্পতিবার ছয়জনের নামে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন সমীর মণ্ডলের বাড়িতে ১৭ জুলাই রাতে হামলাকারি মিজানুর রহমানের শ্যালক বন্দকাটি গ্রামের মোজাফফর রহমান। অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবীর ঘটনার তদন্ত করে আগামি ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় বিষ্ণুপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মুকুন্দমধুসুধনসপুর গ্রামের আকবর আলী মোড়ল, কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আবু তালেব সরদার, তার ভাই আমীর হামজা, জয়পত্রকাটি গ্রামের মাওলা বক্স, বিষ্ণুপুর গ্রামের সমীর মণ্ডল, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণুপুর গ্রামের গোবিন্দ লাল সরদারসহ অজ্ঞাতনামা ১৩জনকে আসামী করা হয়েছে।

মামলায় আসামীরা দাবিকৃত দু’ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে কালিগঞ্জের মাছের সেট থেকে মাছ বিক্রি করে বাড়ি ফেরার সময় গত ১৭ জুলাই রাত ৮টার দিকে পারুলগাছা আনছারের মোড়ে বাদি মোজাফফরকে মারপিট করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার কাছে থাকা ৯৫ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল লুটপাট করে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া আগামি তিন দিনের মধ্যে দাবিকৃত টাকা না দিলে তাকে হত্যা করা হবে বলে হুমকির কথা ও উল্লেখ করা হয়।

মামলায় সমীর মণ্ডলের হুমকির ঘটনায় দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরীতে উল্লেখিত নীলকণ্ঠপুরের ফিরোজ লস্কর, চাঁচই গ্রামের ফিরোজ মোড়ল, একই গ্রামের আব্দুস সবুর, মাসুম বিল্লাহ, বিষ্ণুপুর গ্রামের সমরেশ মণ্ডল, বন্দকাটি গ্রামের মিজানুর রহমান, দুম্বপোতার কামরুল ইসলাম ও পারুলগাছার আলম ঢালীকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলার বাদি মোজাফফর হলেন সমীর মণ্ডলের বিরোধপূর্ণ জমির ক্রেতা ডায়েরীতে উল্লেখিত মিজানুর রহমানের শ্যালক।

এদিকে স্থানীয় প্রবীন বুদ্ধিজীবিরা বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগের নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠা, জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে বাড়ি থেকে ডেকে এনে বন্দকাটি গ্রামের নূর ইসলাম নামের একজনকে বাড়িতে ফেলে মারপিটের অভিযোগে নির্যাতিতের স্ত্রী ফিরোজা বেগমের চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনের নামে থানায় মামলা করা, বন্দকাটি গ্রামের মোনায়েম হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে হত্যার ঘটনায় নেপথ্যে থেকে কঠিন প্রতিপক্ষ নুরুল ইসলাম, তার কলেজ পড়ুয়া ছেলেসহ কয়েকজনের নামে মামলা করানো, বাঁশতলা বাজারে চেয়ারম্যানের স্ত্রী নাছিমাকে মোটর সাইকেল থেকে টানা হেঁচড়া করে নামিয়ে মারপিট করার ঘটনায় ইউপি সদস্য খলিলুর রহমানসহ কয়েকজনের নামে মামলা করা, ভাইপো আব্দুল্লাহ আল মামুন হত্যা মামলায় জেলে পাঠিয়ে চাচা আব্দুল আজিজের ২৩ বিঘা ঘের দখল, এক সপ্তাহ আগে আজিজের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, লক্ষীনাথপুরে আব্বাস খাঁ’র জমি দখল, সাপমারা খাস খাল দখল, সমীর মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালানোর মদত দেওয়া, মোজাফফরকে দিয়ে আকবর চেয়ারম্যান, আবু তালেব ও গোবিন্দ লাল সরদার, সমীর মণ্ডলসহ কয়েকজনের নামে মামলা করিয়ে নিজের উপর তদন্ত নিয়ে আসা, বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের পিছনে দীর্ঘদিন ধরে সরস্বতী পূজা হয়ে আসা জমি দখলে ঘেরা দিতে ক্রেতা প্রভাবশালী উদয় কর্মকরকে সহায়তা করা নিয়ে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগি ফিরোজ লস্কর, ফিরোজ মোড়ল, আব্দুস সবুর, কামরুল, মিজানুর, মাসুম বিল্লাহসহ একটি মহলের নাম শুধুমাত্র ইউনিয়নে নয়, উপজেলার সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। তাছাড়া কখনো মুসলিম লীগ, কখনো ছাত্র শিবির, কখনো বাসদ, কখনো জাসদ সবশেষে আওয়ামী লীগ করার পাশাপাশি যারা তার নির্বাচনে প্রত্যক্ষ অংশ নিয়ে জয়লাভে ভুমিকা রেখেছিলেন তারাই এখন চেয়ারম্যানের প্রতিপক্ষ এমনটি বাজারে ও মোড়ে মোড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামিতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

জানতে চাইলে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, জনপ্রতিনিধি হলে সকলের মন জয় করা যায় না। কারো অন্যায় আব্দার না রাখতে পারলে তারা কোন কথা বললে যাঁচাই বছাই না করে সত্য বলা যাবে না। সুবিধা বঞ্চিত সমীর মণ্ডল ও আবু তালেবসহ একটি চক্র তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করছে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ২১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test