E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুষ্টিয়ার শিশু দেব হত্যার প্রধান দুই আসামি ভারতে

২০১৮ জুলাই ২২ ২৩:১১:২২
কুষ্টিয়ার শিশু দেব হত্যার প্রধান দুই আসামি ভারতে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার স্কুলছাত্র দেব দত্তকে (৯) অপহরণের পর নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় প্রধান দুই আসামি ভারতে অবস্থান করছে। তারা হলো মিরপুরের চিথলিয়া গ্রামের মালিথাপাড়ার আনছার আলীর ছেলে এরশাদ আলী (৩৩) (পাসপোর্ট নম্বর বিএম ০৬০৯৬২৮) ও আমান আলী মুন্সীর ছেলে হাবিবুর রহমান (৩৫) (পাসপোর্ট নম্বর বিএম ০৬২৬৫৮৬)। 

হাবিবুরকে ভারত থেকে অন্য দেশে পাঠানোর উদ্দেশ্যে তাঁর বাবা ২২ কাঠা জমি প্রতিবেশী রইচ উদ্দিনের তিন ছেলের কাছে বিক্রি করে সেই টাকা ভারতে পাঠিয়েছেন বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত হয়েছে।

এদিকে দেবের বাবা দুই আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য গত ২ জুলাই ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।

দেব দত্ত চিথলিয়া গ্রামের ধুবাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পবিত্র দত্তের একমাত্র ছেলে এবং চিথলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির মেধাবী ছাত্র। ৯ জুন তাকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ২৫ জুন তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন সূত্র জানায়, ১২ জুন কিলিং মিশনের অন্যতম আসামি এরশাদ আলী পালিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ধুবলিয়া থানার সিংহাটা গ্রামের বেলাল হোসেনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকেই যোগাযোগ চলে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হাবিবুরের সঙ্গে। এরপর হত্যার বিষয়টি জানাজানি হওয়া এবং অন্য দুই আসামি আক্কাস আলীর ছেলে জোয়ার ও দীর্ঘদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়ানো জহুরুলের ছেলে নাঈম ২৫ জুন গভীর রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পরই হাবিবুর ভারতে পালিয়ে দোসর এরশাদের সঙ্গে মিলিত হন। বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের মধ্যে জানাজানি হলে দুই দিন পর তাঁরা সেখান থেকে পালিয়ে ভারতের কেরালা রাজ্যের একটি গ্রামে আশ্রয় নেন।

কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, দুই আসামি দেশের বাইরে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিধি মেনে তাঁদের আটকের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া হত্যার ঘটনায় জড়িত পাঁচজনের মধ্যে অন্য আসামি চিথলিয়া গ্রামের তুফান মল্লিকের ছেলে সবুজ মল্লিক (২৮) ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি শেষে জেলহাজতে আছেন।

স্থানীয় লোকজন জানায়, দেব দত্তকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা ছিল আসামিদের। ঘটনার এক মাস আগে থেকে প্রতিবেশী জোয়ার ও হাবিবুর রহমান দেবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ভিডিও গেম খেলা ও ফাস্ট ফুডের খাবার দিয়ে সখ্য গড়ে তোলে। ৯ জুন সকালে দেব প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়।

পথে পূর্বপরিকল্পনামতো হাবিবুর ও জোয়ার মোটরসাইকেলে হেলমেট পরে বসে ছিলেন। পরে তাঁরা দেবকে মোটরসাইকেলের মাঝখানে তুলে কাছেই হাবিবুরের বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর দেব একটি অস্বাভাবিক অবস্থা বুঝতে পেরে জোয়ারকে বলে, ‘কাকু, আমি তো পড়তে যাব। আমাকে ছেড়ে দাও।’ কিন্তু দেবকে হাবিবুরের শোবার ঘরে নিয়ে হাবিবুর, জোয়ার, এরশাদ, নাঈম ও সবুজ শলাপরামর্শ শেষে ঘটনার আধাঘণ্টার মধ্যে শ্বাসরোধে হত্যা করে।

তখন হাবিবুর ও এরশাদ রাস্তায় টহল দিচ্ছিলেন। লাশটি গুম করতে সকাল ১০টায় বস্তাবন্দি করে আমের কার্টনে ঢুকিয়ে পাশে নাঈমের বাড়িতে নিয়ে যান তাঁরা। তাঁর বাড়ির শৌচাগারে সাপ দেখা গেছে, এমন গল্প বানিয়ে নাঈম, সবুজ ও হাবিবুর এর পাশেই একটি কুয়া খোঁড়েন। এরপর কুয়ায় দেবের বস্তাবন্দি লাশ রেখে মাটি চাপা দেন। এদিকে এরশাদ ও জোয়ার মিরপুর উপজেলার নিমতলা বাজারে এসে দেবের বাবা পবিত্র দত্তের কাছে মোবাইল ফোন করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চান। কিছুক্ষণ পরই জোয়ার গিয়ে দেবের পরিবারের সদস্যদের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করেন।

এরই মধ্যে মিরপুর থানার পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন দেবকে উদ্ধারে ব্যাপক তৎপর হয় এবং মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে ১১ জুন সিমটির মালিক চিথলিয়ার জুয়েলকে আটক করে পুলিশ।

উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত মিরপুর-ভেড়ামারা সার্কেলের এএসপি নূর-ই-আলম সিদ্দিকীর জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল জানান, মোবাইল ফোনসেটসহ তাঁর সিমটি চিথলিয়ার হাটে হারিয়ে যায়।

পুলিশের ব্যাপক অনুসন্ধান ও দেবের পরিবারের সন্দেহের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ জুন সকালে আটক জোয়ার অপহরণ ও হত্যার সব ঘটনা খুলে বলে পুলিশের কাছে।

২৫ জুন দুপুরে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতিতে নাঈমের বাড়ির শৌচাগারের কুয়া থেকে দেবের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

(কেকে/এসপি/জুলাই ২২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test