E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আনোয়ারায় যে মাদক ব্যবসায়ীরা হাজার কোটি টাকার মালিক

২০১৮ জুলাই ২৮ ১৮:৩২:৪১
আনোয়ারায় যে মাদক ব্যবসায়ীরা হাজার কোটি টাকার মালিক

বিশেষ প্রতিনিধি : কোস্টগার্ড এবং র‌্যাব-পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আনোয়ারায় বহাল রয়েছে নিষিদ্ধ ইয়াবা বাণিজ্য। ফলে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে অনেকে। 

এক সময়ে যারা আনোয়ারায় ছিল নিতান্ত জেলে, ফোসকা ও মুরগি বিক্রেতা তাঁরা আজ রাতারাতি মাদক ব্যবসায় কোটি কোটি টাকার মালিক। অনেকে গড়ে তোলেছেন আবার সুরম্য অট্টালিকা।

আর এসব লোকেরা দিনে দিনে গাড়ি বাড়ি বিলাস বহুল জীবন যাপন রপ্ত করে ফেলেছে। হঠাৎ পাল্টে যাওয়া এসব মানুষদের পিছনের জীবন কাহিনী জানতে গিয়ে জানা যায় বহু চাঞ্চল্যকর অজানা কাহিনী।

অনুুসন্ধানী রিপোর্টে জানা যায়, গত ৪ বছর আগেও আনোয়ারা পার্কির চর বিচে ফুসকা বিক্রি করত জালাল শাহ্। কিন্তু আজ ২০ কোটি টাকা তথা তার অধিক টাকার মালিক বনে যায় মাদক ব্যবসার গোপন সড়ক দিয়ে। অবৈধ চোরাচালান আর মাদক ব্যবসায় গড়ে তুলেছে আনোয়ারা পার্কির চর বিচ সংলগ্ন এলাকায় আবাসিক হোটেল। নাম দিয়েছেন পার্কি রির্সোট সেন্টার।

শুধু তাই নয়, নামে বেনামে আনোয়ারা কর্ণফুলি ও শহরের আনাচে কানাচে রয়েছে অসংখ্য জমিজামা। আরো রয়েছে ফ্ল্যাট বাড়ি। গ্রামে রয়েছে দু,শতাধিক মহিষ ও রাজকীয় খামারবাড়ি। এ টাকার উৎস যেমন কেহ বলতে পারেনা, তেমনি এসব কোটিপতিদের বৈধ ব্যবসা কি তাও কেহ জানাতে পারেনি।

সুত্রে আরো জানা যায়, আব্দু সাত্তারের পুত্র মোঃ সাদ্দাম তিনবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেননি যিনি। বেকার ছিল বলে পরে মাদকের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এক সময় নিজের ভাই কে দিয়ে মিয়ানমার হতে মাদক পাচার করত। একদিন মাদক পাচার করতে গিয়ে ভাই মারা যায় বলে প্রচলন রয়েছে এলাকায়। বর্তমানে ওই সাদ্দাম মাদক ব্যবসার আয়ে কোটি দামে সাতটি বড় ডাম্পার গাড়ির মালিক বনে যায়। এমনকি আনোয়ারার মুল সেন্টারে কিনেছে বহু জমিজামা ও সহায় সম্পদ। রয়েছে বটতলীতে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিলাসবহুল বাড়ি।

এছাড়াও চিহ্নিত আরেক মাদক ব্যবসায়ী মোকারম পিতা আবুল কালাম লেদু কয়েক বছর আগেও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে মাসিক ৪ হাজার টাকায় চাকরি করত। কিন্তু আজ নগদ টাকায় কিনে ফেলেছে বহু নাল জমি, রয়েছে শহরে ৩টি ফ্ল্যাটবাড়ি সহ নামে বেনামে বহু ব্যাংকে অর্থ সম্পদ।

আনোয়ারার এক মাওলানার ছেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছ। কিছুদিন আগেও বাজারে মুরগি বিক্রি করত। কিন্তু আজ মুরগি বিক্রেতা ইলিয়াছ মাদক পাচার করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মালিক বনে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। নিজ বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার পশ্চিম রায়পুর ঠাকুর তালুকদার গ্রামে রাজকীয় প্রাসাদ তৈরি করে সে। রয়েছে শহরে বহু কোটি টাকার সম্পদ। এ যেন এক আলিশান কারবার।

খুবই ধুর্ত ইলিয়াছ চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট জিপিও এলাকার চৌধুরী টাওয়ারে খুলে বসে "আল হাতিম হজ্জ কাফেলা নামক এজেন্সী ব্যবসা। মূলত এসবের আড়ালে ইয়াবা পাচারই ব্যবসার মূল টার্গেট বলে জানা যায়।

আরেক মাদক মাফিয়া গহিরার আবুল কালাম আবু ও মনু দুই ভাই রাতারাতি কোটিপতির তালিকায়। গহিরার উঠান মাঝির বাড়ীর সেলিম,পুর্বে জেলে ছিল এখন ফ্লাট বাড়ীর মালিক শহরে। একই বাড়ীর শফিকুল আলম শফিক পিতা হাজি কামাল শহরের হালিশহরে বাড়ী তার। একবার ডিবির হাতে আটক হলে ১০ দিন পরে গ্রেপ্তার দেখায়। পরে যেই লাউ সেই কদু।

যদিও বহুল আলোচিত এই ইয়াবা ব্যবসায়ীর কারবার বর্তমানে দেখাশুনা করে তার ছোট ভাই সোহেল। কর্ণফুলী আনোয়ারায় যৌথ অভিযানে এক সময় পার্কি এলাকা হতে জালাল শাহকে আটক করেছিলো পুলিশ। কিন্তু বেশি দিন আটকে রাখতে পারিনি। জেল হতে বের হয়ে পুনরায় শুরু করে মাদকসহ চোরাকারবারী ব্যবসা। অল্প সময়ে আয় করে কোটি কোটি টাকা।

বিশেষ সুত্রে আরো জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলার আইয়ুব দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। খালি হাতে দেশে ফিরে ক্যাবল অপারেটর ডিশ এন্টিনা ব্যবসা শুরু করে। আর অত্যন্ত গোপনে ডিশ ব্যবসার আড়ালে মিয়ানমার হতে নিয়মিত বিভিন্ন মাদক আর ইয়াবা ব্যবসা করে রাতারাতি বনে যায় কোটিপতি। এলাকায় কিনেছে বহু জমি রয়েছে ব্যাংক ব্যালান্স আর বীমা।

এমন আরেক ব্যক্তির খবর পাওয়া যায়, আনোয়ারার আব্দু জব্বার (প্রকাশ পট্টীবদ) যার এক সময় চিটাগাং শহর থেকে আনোয়ারা বাসায় আসার টাকা থাকতো না। অভাবের তাড়নায় বাংলা মদ বিক্রি করত। কিন্তু আজ আনোয়ারায় রয়েছে তার ৪ কোটি টাকা দামের বিলাস বহুল বাড়ি। শহরের সুগন্ধায় রয়েছে বহু ফ্ল্যাট বাড়ি, কিনেছেন বহু জমিজামা এলাকায়। ডিবি কতৃক কয়েকবার আটক হলেও জেল তার কপালে জুটেনি।

এমন কি পশ্চিম রায়পুর ইউনিয়নের এক সময়ের খুচরা মাছ বিক্রেতা নুরুল আমিন। যিনি নিজেকে রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিলেও গোপনে ছিলো তার ইয়াবা হাট। নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে বানিয়েছে কোটি কোটি টাকা। কিনেছেন নগরীর হালিশহরে বাড়ি। গ্রামে কিনেছেন ১০ কোটি টাকা সমমূল্যের বহু নাল জমি।

তেমনি আরেক ব্যক্তি আনোয়ারা গহিরার আবু ফয়েজ। এক সময় মাছ ধরার কাজ করত। আজ ইয়াবা নামক আলা দিনের আশ্চর্য্য চেরাগের ছোয়ায় বহু টাকার মালিক। শহরে বসবাস করে। বর্তমানে গ্রামে আর আসা যাওয়া করেনা বলে তথ্য পাওয়া যায়।

আনোয়ারা উপকূলে এখনো রয়েছে তার মাদকের মাফিয়া সিন্ডিকেট। জাহাঙ্গীর নামক আরেক ব্যবসায়ী রায়পুর ইউনিয়নের এক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলেও খবর শোনা যায়। কিছুদিন আগে গোয়েন্দা পুলিশের খাচাঁয় ধরা পড়ে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আনোয়ারায় তালিকাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারীর তকমা যাদের গায়ে তাঁরা হলেন,আনোয়ারার সোলেমান ওরফে মানু,আবুল কালাম, আনোয়ারার জলিল আহমেদ, দক্ষিণ পরুয়া পাড়া গ্রামের হাসান মাঝি, ছাবের আহমেদ, দোভাষীর জসিম, আজু মিয়া, চুন্নু পাড়া গ্রামের কালামনু, কালাইয়া, জেলে সাদ্দাম হোসেন, মোহরম আলী, ভুইশ্যা চুন্নু পাড়ার মোকারম, চুন্নুপাড়ার নুরুল আইয়ুব,মুজাহিদ, ছনহরার আবদুর রহিম ও পটিয়া জিরি এলাকার সরওয়ার, আনোয়ারার চুন্নু বাড়ির আবদুল জব্বার,রায়পুরার নুরুল আমিন আবু, সবুর, রহিম, কাশেম, ফয়েজ, শফিক, ফরিদ, সেলিম, নূর সৈয়দ, জালাল, মানু, আবু সৈয়দ, জাহাঙ্গীর, নাছির, সেলিম, আফছার, জাফর ও কালু প্রমুখ। তালিকাভুক্ত পাচারকারীদের কয়েকজন পলাতক ও জামিনেও রয়েছেন।

মোস্ট ওয়ান্টেট জালাল শাহ, নুর জলিল বর্তমানে নিজেকে আড়ালে রেখেছে। একেক সময় একেক ছদ্ম বেশে লুঁকিয়ে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে সুত্রের দাবি।

সুত্রে জানা গেছে, কৌশলে আনোয়ারা এলাকায় জুঁইদন্ডী লামারবাজার, রায়পুর ইউনিয়নের গলাকাটা ঘাট, পারুয়া পাড়া, গহিরা,উঠান মাঝি,ফকিরহাট,বাচা মিয়া মাঝির ঘাট, চিপাতলি ঘাট, ঘাটকুল, গহিরা, সারেঙ্গা, পারকি সমুদ্র উপকুল, বরুমচড়া, লারদ্বীপ ঘাট দিয়ে পয়েন্ট দিয়ে মাদক প্রবেশ করে । মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে উপজেলার কিছু নামধারী ক্ষমতাসীন নেতাও জড়িত।

জানা গেছে, আনোয়ারার আব্দু জব্বার (প্রকাশ পট্টীবদ) শীর্ষ পর্যায়ের ইয়াবা ডিলার। তাকে অনেকে বলেন, ‘ইয়াবা সম্রাট’। এছাড়াও রোহিঙ্গা নাগরিক শহরের সুগন্ধায় বসবাস করা বার্মাইয়া রশিদ উল্ল্যাহ হলো চট্টগ্রাম শহরের বড় মাপের ইয়াবা কিং। যারা দিনের আলোতে সাঁজে দানবীর, রাতে মাদক চক্রের কিং। এসব লোকজনই গড়ে তুলেছেন ইয়াবার বড় সিন্ডিকেট। যাদের হাত দিয়ে পাচার হচ্ছে নিষিদ্ধ ইয়াবা।

গুটি কয়েক চুনোঁপটি মাদক কারবারীদের পুলিশ প্রশাসন খাঁচায় ডুকালেও বড় বড় এসব লাঘববোয়ালেরা বরাবরেই আইনের সীমানা পার পেয়ে পাচ্ছেন। ফলে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছেনা বলে সাধারণ মানুষের ধারণা।

আনোয়ারা থানার ওসি দুলাল মাহমুদ বলেন, ‘শুনেছি আনোয়ারা গহিরা ঘাট দিয়ে আগে অবাধে মাদক প্রবেশ করত। কিন্তু আমি আসার পর বর্তমানে তা বন্ধ হয়েছে। পুলিশ মাদক নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে এবং অভিযান অব্যাহত রেখেছে।’

(জেজে/এসপি/জুলাই ২৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test