E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লোহাগড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ঘরে ক্লাস, মেঘ করলেই ছুটি

২০১৮ আগস্ট ০১ ১৫:৩৬:০০
লোহাগড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ঘরে ক্লাস, মেঘ করলেই ছুটি

রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া (নড়াইল) : বিদ্যালয়ে কোনো ভবন নেই। আছে আধাপাকা টিনশেড ঘর, তাও খুবই জরাজীর্ণ। বৃষ্টি হলেই শ্রেণি কক্ষে হামলে পড়ে পানি। রোদ সরাসরি পড়ে শিক্ষার্থীদের গায়ে। বিদ্যুৎ চমকালে সরাসরি বজ্রপাতের ঝুঁকি থাকে। এমনকি ঘরের টিনের চালা ধসে পড়ারও আছে আশঙ্কা।

এ অবস্থায় ব্যাহত হচ্ছে নড়াইলের লোহাগড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এ বিদ্যালয়ের সার্বিক পাঠদান কার্যক্রম।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে ৯৩ শতক জমির ওপর এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। লোহাগড়া পৌর এলাকার কলেজপাড়ার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ নারী শিক্ষার প্রসারে লোহাগড়া বাজার সংলগ্ন স্থানে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। লোহাগড়া সদর ছাড়াও আশপাশের মল্লিকপুর, মঙ্গলহাটা, মহিষাপাড়া, কুন্দশী, ছাতড়া, কুমরকান্দা, মোচড়া, কালনা, নারানদিয়া, কেষ্টপুর ও জয়পুর এলাকার মেয়েরা এখানে পড়াশোনা করে থাকে। গত দশকে ৫০০-৬০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করলেও অবকাঠামো সমস্যায় শিক্ষার্থী কমতে থাকে। সর্বশেষ তিন বছর আগেও এই বিদ্যালয়ে ছিল প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী। শ্রেণি কক্ষের বেহাল দশায় কমতে কমতে বর্তমানে শিক্ষার্থী দাঁড়িয়েছে ১৩৬ জনে।

বর্তমানে বিদ্যালয়ে রয়েছে পাঁচ কক্ষের একটি আধাপাকা টিনশেড ঘর। এ ছাড়া দুই কক্ষের দুটি আধাপাকা টিনশেড ঘর। এ দুই কক্ষের একটিতে বিদ্যালয়ের কার্যালয়, অন্যটি শ্রেণিকক্ষ। বিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত সরকারি কোনো বরাদ্দ হয়নি। এখানে আছে ষষ্ট শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের ব্যবস্থা। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে পাঠদান করা হয়।

বুধবার (১ আগস্ট) ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা ও জানা গেছে, তিনটি আধাপাকা ঘরেই টিনের চালা। সব গুলো জরাজীর্ণ। এর মধ্যে পাঁচ কক্ষের আধাপাকা টিনশেড ঘরটির অবস্থা বেশি খারাপ। এ ঘরের টিনের চালা পুরোটাই অধিকাংশ স্থানে বড় বড় ফাঁকা। সেখানে টিন নেই। আর চালায় যেখানে টিন আছে তা মরিচায় খুবই দুর্বল ও ছিদ্র ছিদ্র হয়ে আছে। বৃষ্টিতে শ্রেণিকক্ষে প্রচুর পানি ঢোকে। মেঝে হয়ে যায় স্যাঁতসেঁতে, কাদাময়। বিদ্যুৎ চমকালে ওপর থেকে সরাসরি শ্রেণিকক্ষে আলোর ঝলকানি পড়ে। রোদও সরাসরি শিক্ষার্থীদের গয়ে পড়ে, তাই তাপে ও গরমের মধ্যে বসে ক্লাস করতে হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুলতানা বিথি বলেন, বিদ্যুৎ চমকালে ও বজ্রপাতের শব্দ হলে ছাত্রীরা ভয়ে চিৎকার করতে থাকে। শিক্ষকেরাও আতঙ্কে থাকেন। এ কারণে মেঘ দেখলেই শিক্ষার্থীরা পালিয়ে যায়। হঠাৎ মেঘ-বৃষ্টি হলে সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে বিদ্যালয়ের কার্যালয়ে বসে আল্লাহকে ডাকতে থাকি।

শান্তি মল্লিক সহ অন্য শিক্ষকেরা জানান, এ জন্য অধিকাংশ সময়েই মেঘ করলেই ছুটি দেওয়া হয়। এছাড়া বিদ্যালয়ে গভীর নলকূপ নেই, আর্সেনিকযুক্ত পানি খেতে হয়। ছাত্রীদের জন্য মাত্র দুটি শৌচাগার, যা অপর্যাপ্ত। ঘর জরাজীর্ণ হওয়ায় পর্যাপ্ত ফ্যান ঝুলানো যায় না। কার্যালয়ের ঘরের টিনের চালা দিয়েও পানি পড়ে কাগজপত্র ভেজে।

অভিভাবক ও চা বিক্রেতা সঞ্চিত কুমার বলেন, রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে বিদ্যালয়ে ক্লাস করা দুঃসাধ্য, তাই পড়াশোনা ব্যাহত হয়। অভিভাবকেরা মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন। এ জন্য শিক্ষার্থী দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।

বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মিনতি চক্রবর্তী, খাদিজা আক্তার ও রূপা সুলতানা বলে, মেঘ-বৃষ্টি হলে শুধু ভয় পাই তাই নয়, বই-খাতা, কাপড় ও বেঞ্চ ভিজে যায়। এ অবস্থায় ক্লাস করলে ঠা-া লাগে। মেঘ করলে শিক্ষকেরা আমাদের অন্যত্র নিয়ে যান। আবার ভয় লাগে টিনের চালা ও কাঠ-খুঁটি যেকোনো সময়ে মাথার ওপর ধসে পড়তে পারে। তাই অনেক দিনই মেঘ হলে বিদ্যালয়ে আসি না। তাদের জিজ্ঞাসা, এ অবস্থায় কী পড়াশোনা হয়?

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসমা খাতুন বলেন, অনেক আবেদন-নিবেদন করেও ভবন বরাদ্দ হয় নি। এমনকি টিনের ঘরের মেরামতেরও টাকা পাওয়া যায়নি।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, ভবনের জন্য এলাকাবাসীর আবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

(আরএম/এসপি/আগস্ট ০১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test