E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফেরি চলাচল বন্ধ মহাসড়কে ট্রাকের দীর্ঘ সারি 

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌ রুটের অচলাবস্থা কাটেনি 

২০১৮ আগস্ট ১৩ ১৭:৫৯:৪৪
কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌ রুটের অচলাবস্থা কাটেনি 

মোনাসিফ ফরাজী সজীব, মাদারীপুর : এক সপ্তাহের ব্যবধানেও কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা কাটেনি। বরং আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ছোট কে-টাইপ ৭টি ফেরি সীমিত আকারে পরিবহন নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলাচল করলেও সোমবার সকাল থেকে তা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এখন একেবারে ছোট আকারের ৩/৪টি ফেরি চলছে তো চলছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আসন্ন ঈদ যাত্রায় দক্ষিন জনপদের যাত্রীদেও চরম দুর্ভোগের পড়ার আশংকা করা হচ্ছে।

লৌহজং চ্যানেলে নাব্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাঁচদিন ধরে রো-রো এবং ডাম্ব ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিসি। কাঁঠালবাড়ি লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ও উজানে নদী ভাঙ্গন ও উজান থেকে পলি মিশ্রিত বালু আসার কারণে বিকল্প চ্যানেল এবং চ্যানেল মুখে দ্রুত পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ঘরে ফিরতে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নাব্য সংকট পরিস্থিতির কোন উন্নতি না হওয়ায় কাঁঠালবাড়ি ঘাটের টার্মিনাল থেকে মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি পৌছে গেছে।

কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্রে জানা গেছে, কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরি, ৮৭টি লঞ্চ এবং ২শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করে। নাব্য সংকট ও ডুবোচরের কারণে ৬টি ডাম্ব ফেরি ও ৩টি রো-রো ফেরি চলাচল করতে পারছে না। সোমবার সকাল থেকে ২টি ভিআইপিসহ ছোট ছোট ৪টি ফেরি কোনমতে চলাচল করছে। বিকল্প এই চ্যানেলে প্রায় ৮কিলোমিটার নৌ-পথেই নব্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা থাকলে ঈদুল আযহা যাত্রীরা নির্বিঘেœ ঈদ উপভোগ করতে পারবে না বলে আশংকা করছেন যাত্রীরা। ক’দিন ধরেই ফেরি চলাচলে অচলাবস্থার কারণে কাঁঠালবাড়ি ও শিমুলিয়া ঘাটে এখন প্রায় ৫শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। এবারও যদি ঈদের সময় ট্রাক পারাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় তাহলে ওই সকল পণ্যবাহী ট্রাক আগামী ১০ দিনেও পার হতে পারবে না বলে ধারণা ট্রাক চালকদের।

এদিকে চ্যানেলমুখে ৫/৬টি ড্রেজার দিনরাত ড্রেজিং চালিয়ে পলি অপসারণের কাজ করছে। কিন্তু পদ্মায় তীব্র স্রোতের সাথে পলি এসে চ্যানেলমুখ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কাঙ্খিত ফল যাওয়া যাচ্ছে না। ফেরি চলাচল করতে কমপক্ষে ৭/৮ ফুট পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু চ্যানেলমুখে ৪/৫ ফুট পানির গভীরতা থাকার কারণে ছোট ছোট ৩/৪টি ফেরিতে স্বল্প সংখ্যক যানবাহন লোড দিয়ে পদ্মানদী পারাপার করা হচ্ছে। আবার কোন কোন ফেরিতে লোড একটু বেশি হলে চ্যানেল মুখে ফেরির তলদেশ ঠেকে যাওয়ায় তা পূনরায় ঘাটে ফিরে যাচ্ছে।

কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আটকে পরা ট্রাকের চালকরা বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা ঘাটে এসে পদ্মা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। ফেরি পার হতে পারছি না। আর কবে যে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে তা কেউ বলতে পারে ন্।া তবে শুনছি সব বড় বড় রোরো ফেরি চলাচল বন্ধ রেখে পদ্মা নদী লৌহজং চ্যানেলের মুখে ও বিকল্প চ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে।’ কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে নাব্য সংকট কাটিয়ে আসন্ন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা নির্বিঘেœ প্রিয়জনের সাথে বাড়ি ফিরে ঈদ উদযাপন করতে পারে এ জন্য একযোগে ফেরি বন্ধ করে ড্রেজিং করা হচ্ছে বলে মন্তব্য ট্রাক চালক ও এলাকাবাসীর। স্থানীয়রা বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং এ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারছেন না।

কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ইজারাদার ইয়াকুব বেপারী বলেন, বিআইডব্লিউটিএ গত প্রায় এক মাস ধরে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌ রুটে নাব্য সংকট দুর করতে ড্রেজিং করছে। কিন্তড্রেজিংয়ের কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট দিয়ে যাত্রীরা অনায়াসে পারাপার হতে পারবে কিনা বলা যায় না। সে জন্যড্রেজিং কাজে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব প্রদান করার দাবী জানাচ্ছি। তা না হলে ঈদের আগেই এ রুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচলও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।’

কাঁঠালবাড়ি ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন বলেন, ‘ঈদুল আযহা এবার বর্ষা মৌসুমে। তবুও নাব্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ কারণে ফেরিসহ নৌযান চলাচলে বেশ সমস্যা হচ্ছে। এরই মধ্যে রো-রো এবং ডাম্ব ফেরিগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে যাতে নৌযান চলাচলে কোন রকম সমস্যায় পড়তে না হয় সে জন্য চ্যানেলটি সচল রাখার জন্য ৭টি ড্রেজার দিয়ে বিকল্প চ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে।’

বিআইডব্লিউটিসি’র কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহ মো: খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘নাব্য সংকটের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য সংকট দূর না করা পর্যন্ত ফেরি চালানো সম্ভব নয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হযনি।’

শিবচর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান আহমেদ বলেন, ‘ঈদুল আযহা এবার বর্ষা মৌসুমে পড়েছে। এ অবস্থায় নাব্য সংকট দেখা দেওয়ায় নৌ-যান চলাচলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এরই মধ্যে রো রো ফেরিগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে ঈদের সময় যাতে নৌযান চলাচলে কোন রকম সমস্যায় পড়তে না হয় সে জন্য ড্রেজিং-এর মাধ্যমে চ্যানেলটি সচল রাখা হচ্ছে।

পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঈদ পালন করতে পারেন সে জন্য জেলা প্রশাসক এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক তৎপর থাকবে। এছাড়াও যে কোন অনাকাংখিত ঘটনা এড়াতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’

(এমআরএস/এসপি/আগস্ট ১৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test