E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালিগঞ্জে ভিজিএফ কার্ডের ১৫০ কুইন্টাল চাল আত্মসাতের অভিযোগ

২০১৮ আগস্ট ১৫ ১৬:১৩:০৬
কালিগঞ্জে ভিজিএফ কার্ডের ১৫০ কুইন্টাল চাল আত্মসাতের অভিযোগ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে হত দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত বর্তমান সরকারের  ভিজিএফ চাল বিতরণে অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিটি কার্ডে গড়ে তিন কেজি করে চাল কম দেওয়া হচ্ছে। রোববার থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদে এ চাল বিতরণ করা হয়। 

এদিকে ওজনে চাল কম দেওয়ার প্রতিবাদ করায় বন্দকাটি গ্রামের আক্কাজ মোড়লের স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে নাজমা খাতুন ওরফে সাবিকে পিটিয়ে জখম করে তিন ঘণ্টা আটক রাখা হয় বলে অীভযোগ।

কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে হত দরিদ্রদের জন্য পরিবার পিছু ২০ কেজি করে চাল বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে ৫ হাজার ১৫২টি কার্ড দেওয়া হয়। ওই চাল সুষ্ঠুভাবে বিতরনের জন্য ট্যাগ অফিসার হিসেবে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কামরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বন্দকাটি গ্রামের আক্কাজ মোড়লের মেয়ে নাজমা খাতুন জানান, রোববার ও সোমবার পরিষদ থেকে কার্ড প্রতি যে ভিজিএফ কার্ডের চাল বিতরন করা হয় তাতে কেই ১৭ কেজি’র উপরে পাননি বলে জানতে পারেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তিনি পরিষদে যেয়ে সারিতে না দাড়িয়ে প্রথম দিকে চলে যান। এ সময় তিনি চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে দেখা করবেন বললে সারির সামনে দাড়ানো কয়েকজন লোক তাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেন।

এ নিয়ে তিনি চিৎকার করলে চেয়ারম্যানের ভাগ্নে নীলকণ্ঠপুর গ্রামের ফিরোজ লস্কর, ২০১২ সালের ফতেপুর সহিংসতার মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী হারুন অর রশিদ মিন্টু, নূর ইসলাম চৌকিদার ও আব্দুল্লাহ চৌকিদার তাকে চুলের মুঠো ধরে মারতে মারতে লোহার রেলিং এর উপর ফেলে দেন। পরে তাকে একটি ঘরের মধ্যে আটক রাখা হয়। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সকাল ১১টার দিকে তাকে ছেড়ে দেন চেয়ারম্যান। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আহম্মদ মাসুমকে অবহিত করা হয়। পরে তাকে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

বন্দকাটি গ্রামের আলী মোড়লের ছেলে রেজাউল করিম জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল নিয়ে এসে সাংবাদিকদের কথা মত পার্শ্ববর্তী একটি দোকানে মিটারে ওজন দেন। ওজন করে দেখা গেছে ২০ কেজির পরিবর্তে চাল হয়েছে ১৬ কেজি ৬৬২ গ্রাম।

একইভাবে একই গ্রামের মোশারফ মোড়লের ছেলে আতেনা মোড়ল জানান, পরিষদ থেকে চাল নেওয়ার পরপরই ১০০ হাত দূরে নিয়ে যেয়ে মেপে দেখেন চালের পরিমান ১৬ কেজি ৯৫৮ গ্রাম। পৃথক স্থানে মাপ করে মুকুন্দমধুসুধনপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের চাল হয়েছে ১৬ কেজি ৯১০ গ্রাম। নূর ইসলামের ১৭ কেজি ৩১৮ গ্রাম, বন্দকাটির আনছার আলীর ১৬কেজি ৪৮৬ গ্রাম, একই গ্রামের অহিদুল ইসলামের ১৬ কেজি ৮০০ গ্রাম, নাজমুল হকের ১৬ কেজি ৮২২ গ্রাম, মুজিবর রহমানের ১৬ কেজি ৪৪০ গ্রাম, ইয়াছিন আলীর ১৬ কেজি ৯২৪ গ্রাম ও দেবাশীষ সরকার পেয়েছেন ১৬ কেজি ৫৬২ গ্রাম। এ ছাড়াও যারা চাল পরিমাপ করেছেন তাদের কারো কার্ডের পাওনা চাল ১৭ কেজির উপরে যায়নি বলে সংশ্লিষ্ট কার্ডধারীরা জানান। কার্ড প্রতি গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি চাল কম দেওয়া হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।

সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদে জানা গেছে, রোববার ১ থেকে ৩, সোমবার ৪ থেকে ৬ ও মঙ্গলবার ৭ থেকে ৯ নং ওয়ার্ডের চাল বিতরণ করা হয়েছে। ট্যাগ অফিসার উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কামরুল ইসলামের পরিবর্তে তারই নিয়েজিত এক ব্যক্তি ওই দায়িত্ব পালন করেন। কার্ড জমা নেওয়ার জন্য দায়িত্ব পালন করছেন নীলকণ্ঠপুরের হারুন অর রশিদ মিণ্টু। প্রত্যেক কার্ডধারীকে বালতি কেটে চাল দেওয়া হচ্ছে। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক লাইন রয়েছে। নির্যাতনের শিকার বন্দকাটি গ্রামের নাজমা খাতুনকে সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে সাংবাদিকেদের উপস্থিতিতে তার মায়ের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়। তার কার্ডের চাল পরিমাপ করলে ১৭ কেজি ১৬২ গ্রাম হয়।

কার্ড ধারীদের চাল অন্যত্র মাপার জন্য এ প্রতিবেদককে কটাক্ষ করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিনের ভাগ্নে ফিরোজ লস্কর। নির্ধারিত ৫ হাজার ১৫২টি কার্ডের মধ্যে নয়টি ওয়ার্ডে বিতরনসহ সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান নিজের জন্য ৯০০ কার্ড রেখেছিলেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন ইউপি সদস্য জানান। এ ছাড়া চাচাই ওয়ার্ডের সদস্য রব্বানি ফটোকপি কার্ড বিতরনে অনিয়ম করে রোববার ফেসে গেছেন বলে জানান তারা। এক ইউপি সদস্য ৪৬ টি কার্ড পাননি বলে অভিযোগ করেন। ভিজিএফ কার্ডে চাল বিতরনে অনিয়ম করে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগিরা কমপক্ষে ১৫০ কুইন্টাল চাল আত্মসাৎ করেছেন।

জানতে চাইলে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন চাল বিতরনে কোন অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ২০ কেজির বালতি ভর্তি করে বস্তায় ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। নাজমা খাতুন লাইনে না দাড়িয়ে আগে চাল নেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ক্ষুব্ধ কার্ডধারিরা লাঞ্ছিত করেছে। পরিষদের লোকজন তাকে উদ্ধার করে তার মায়ের হাতে চালসহ তুলে দিয়েছেন। তাকে চাল কম দেওয়ার অভিযোগও সঠিক নয়। বিষ্ণুপুর ইউপির চাল বিতরনের দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার কালিগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, চাল কম দেওয়ার অভিযোগ তার কাছে কেউ করেনি।

কালিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর আহম্মদ মাসুম এ প্রতিনিধিকে জানান, বস্তার ওজনসহ শর্টেজ মিলিয়ে প্রতি কার্ডে ১৯ কেজির নীচে চাল না দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যানকে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল প্রায় তিন কেজি করে কম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি বিষয়টি নিয়ে ট্যাগ অফিসার ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

তবে নাজমা খাতুন নামের এক নারী চাল নিতে চেয়ে চেয়ারম্যান সাহেবের লোকজনদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি লিখিতভাবে জানাতে বলেন। সেক্ষেত্রে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করবেন তিনি।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ১৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test