E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ছেলের হত্যাকারীকে বাঁচাতে আদালতে পিতা

২০১৮ সেপ্টেম্বর ০২ ১৫:৩৭:১৯
ছেলের হত্যাকারীকে বাঁচাতে আদালতে পিতা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরে চাঞ্চল্যকর সজীব হত্যাকান্ডে মূূূূল আসামি, পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মামলার বাদী ও নিহত সজীবের পিতা আব্দুল কুদ্দুস সরদার। সম্প্রতি মামলার এক গুরুত্বপূর্ন আসামির জামিন চাইতে নিয়ম ভঙ্গ করে হঠাৎ আদালতে হাজির হয় সজীবের পিতা কুদ্দুস সরদার। এলাকাবাসী ধারণা করছে, প্রতিবেশী মতিউর রহমান মতি মুন্সিকে ফাঁসাতে মতি মুন্সির অপর প্রতিপক্ষ মুস্তাফিজুর রহমান কাওসারের সহায়তায় নিজ পূত্র হত্যাকান্ডে জরিত রয়েছে কুদ্দুস সরদার। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

গত ২১ মার্চ শরীয়তপুর সদর উপজেলার নিলকান্দি গ্রামে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে জবাই করে হত্যা করা হয় সজীব সরদার (১৯) নামে এক রিক্সাচালককে। এ বিষয়ে নিহতের পিতা কুদ্দুস সরদার ২৩ মার্চ মতি মুন্সিকে প্রধান করে ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তিতে পালং মডেল থানা পুলিশ অধিকতর তদন্ত ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকান্ডের সাথে জরিত প্রকৃত খুনীদের সনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন । গ্রেফতারকৃত খুনি রেজাউল করিম বেপারী ও জাহাঙ্গীর দেওয়ান হত্যার পরিকল্পনা ও দায় স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারা অনুযায়ী প্রথমে পুলিশের কাছে ও পরে ১৬৪ ধারা অনুযায়ী আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনাকারী ও অর্থযোগানদাতার নামও প্রকাশ পায়।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, আদালতে খুনিরা জানায় চার জনরে একটি কিলিং মিশন রিক্সাচালক সজীবকে জবাই করে ও কুপিয়ে নির্মমভাবে খুন করে। হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতা নিলকান্দি গ্রামের হাফেজ হাফিজুর রহমান মল্লিকের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান কাওছার গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দেয়। সম্প্রতি উচ্চ আদালত (হাই কোর্ট) থেকে ৬ সপ্তাহের জন্য অন্তরবর্তিকালিন জামিন গ্রহন করে। গত ২৮ আগষ্ট পরিকল্পনাকারি মোস্তাফিজুর রহমান কাওছার শরীয়তপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, অপরাপর সহযোগী আসামি গ্রেফতার ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর রূপু কর হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী ও অর্থযোগানদাতা মোস্তাফিজুর রহমান কাওছারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে ২৯ আগষ্ট আদালতে আবেদন করেন। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য করেছে আদালত। ইতোমধ্যে আসামীর জামিনের জন্য শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারী মিস-৯২৩/২০১৮ নম্বর কেস করেছে আসামী পক্ষের আইনজীবী। মিস কেসের শুনানীর দিন ৩০ আগষ্ট সজীব হত্যার পরিকল্পনা ও অর্থযোগাতাকে বাঁচাতে বিধি ভঙ্গ করে আসামী পক্ষের আইনজীবীর সাথে আদালতে উপস্থিত হয় মামলার বাদী ও নিহত সজীবের পিতা কুদ্দুস সরদার। তিনি আদালতে জানানোর চেষ্টা করে, কাওসার তার ছেলে হত্যার সাথে জরিত নয়।

স্থানীয়দের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, কুদ্দুস সরদার ভূমিহীন, সরকারী জমি লিজ নিয়ে বাৎসরিক খাজনা দিয়ে বসত বাড়ি নির্মাণ করে কয়েক যুগ ধরে বসবাস করছে। কুদ্দুস সরদার একজন রিক্সা চালক। দিন আনে দিন খায়। পূত্র হত্যার পরে তার আয় রোজগার কমে কমে যাওয়ার কথা। তা হয়ে উপরন্ত ভাগ্য খুলেছে কুদ্দুস সরদারের। বিগত ৩০ -৪০ বছরের পুরাতন জরাজির্ণ ঘরটি এখন নতুন টিনের ঘরে রূপান্তরিত হয়েছে। এলাকাবাসীর ধারণা, মতিউর রহমান মতি মুন্সীকে ফাঁসাতে ছেলে সজীব হত্যার পরিকল্পনায় কুদ্দুসের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এখন হত্যাকান্ডের মূল আসামীদের সাথে আতাত করে কুদ্দুস বিপুল পরিমান অর্থের মালিক হতে চলছে। ছেলে হত্যার পর কুদ্দুসের ভাগ্য খুলে গেছে। হত্যার মূল রহস্য উৎঘাটনের জন্য মামলার বাদী কুদ্দুস সরদারকে রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন। তাহলে রহস্যের জট খুলবে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর রূপু কর বলেন, মামলার ধৃত আসামী রেজাউল হক বেপারী ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারানুয়ায়ী স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে মোস্তাফিজুর রহমান কাওছারের নাম প্রকাশ পায়। তদন্তকালে জানাগেছে মোস্তাফিজুর রহমান কাওছার গত ২১ মার্চ তারিখে পরিকল্পনা করে মতিউর রহমান মুন্সীকে সায়েস্তা করার জন্য অত্র মামলার বাদীর ছেলে সজীব সরদারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। কারণ মতিউর রহমান মুন্সীর সাথে আসামী মোস্তাফিজুর রহমান কাওছারের দীর্ঘদিন যাবৎ বসত বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ ও মামলা চলছে। একই সাথে নিহতের পিতা কুদ্দুস সরদারের সাথেও জমি নিয়ে দ্বন্দ¦ ছিল। মতি মুন্সীকে সায়েস্তা করার জন্য আসামী মোস্তাফিজুর রহমান কাওছার সহযোগী আসামীদের নিয়ে টাকার চুক্তিতে বাদীর ছেলে সজীব সরদারকে হত্যা করেছে বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। মামলা সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাপর সহযোগী আসামীদের পরিচয়, গ্রেফতার ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে মোস্তাফিজুর রহমান কাওছারকে পুলিশ হেফাজতে আনিয়া ব্যাপক ও নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। তাই ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেছি।

শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সিনিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট মীর শাহাবুদ্দিন উজ্জল বলেন, আসামীর জামিনের বিষয়ে বাদী আদালতে উপস্থিত হয়ে অনাপত্তি দিতে পারে না। আসামী পক্ষের আইনজীবী বাদীকে আদালতে উপস্থাপন করছে। এটা আইনের লংঘন। বাদী যদি আদালতকে কোন বিষয়ে কিছু অবগত করতে চান, তাহলে বিজ্ঞ পিপি মহোদয়ের মাধ্যমে আসতে হবে। তা না করে তিনি আসামীকে রক্ষা করতে আসামী পক্ষের আইনজীবীর সাথে আদালতে এসেছেন।

এ বিষয়ে জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মির্জা হযরত আলী বলেন, এই মামলাটা আপোষ যোগ্য নয় এমনকি জামিন যোগ্যও না। মামলার বাদী বা এজাহারকারির আদালতে দাঁড়িয়ে কোন কিছু বলার থাকলে তা রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী হিসেবে আমার মাধ্যমে আসাটা আইনসম্মত।

(কেএনআই/এসপি/সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test