E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সাতক্ষীরায় যথাযোগ্য মর্যাদায় শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালিত

২০১৮ সেপ্টেম্বর ০২ ১৮:৫৬:২৭
সাতক্ষীরায় যথাযোগ্য মর্যাদায় শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালিত

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দুষ্টের দমন ও শিষ্ঠের পালন করাই ভগবানের কাজ। তাই যখনই ধর্মের বিনাশ হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান ঘটে তখনই ভগবান যুগে যুগে অবতার হিসেবে ধরাধামে অবতীর্ণ হন। 

দ্বাপর যুগে কংসের অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়ে ধরিত্রী দেবী দেবাদীদেব মহাদেব ও শ্রী দুর্গার কাছে উপস্থিত হয়ে কংসের অত্যাচারের কথা জানান। সকল কথা শুনে মহাদেব ও দুর্গা দেবী দূঃখিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে ব্রহ্মাজীকে এর প্রতিকার করার জন্য বলেন। পরমেশ্বরের ইচ্ছায় আজ থেকে ৫হাজার ২৪৩ বছর আগে দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের রোহিনী নক্ষত্র সংযুক্ত অষ্টমী তিথির মধ্য রাতে প্রবল ঝড় বৃষ্টির সময় মথুরায় অত্যাচারি কংসের কারাগারে ভগবান নারায়ণ স্বয়ং শঙ্খ, চক্র, গদা পদ্মধারী রুপে, সচ্চিদানন্দ স্বরুপিনী দেবকী মাতার হৃদয়ে আবির্ভুত হন শ্রীকৃষ্ণ রুপে।

মাতা দেবকী ও বসুদেব দেখলেন স্বর্ণজ্জল পীত বসন পরিহিত গলে পদ্ম ফুলের মালা, বক্ষে শ্রীবৎস্য চিহ্ন ও কৌস্তব মনি শোভিত মাথায় বিদুর্য মনি খচিতমুকুট, গাত্রবর্ণ উজ্জল শ্যাম ও নানা রত্ম মনি খচিত দিব্য
অলঙ্কারাদি দ্বারা অঙ্গ বিভুষিত। ওই শিশুর অসাধারণ রুপ দর্শন করে বসুদেব ও দেবকী বিষ্ময়ে আবির্ভুত হলেন। তৎক্ষনাৎ তিনি একটি সদ্যজাতও শিশুর রুপ ধারণ করলেন। আর গোকুলে মহামায়া দুর্গাদেবী যশোদার গৃহে আবির্ভুত হলেন। মহামায়ার মায়ায় কংসের কারাগারের কারারক্ষীগণ যখন নিদ্রাচ্ছন্ন ঠিক সেই সময়কার দৈববানি অনুযায়ি বসুদেব প্রবল ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত উপেক্ষা করে দেবকীর নবজাত পুত্রকে নিয়ে খরস্রোতা যমুনা নদী পিছনে হেটে পার হয়ে গোকুলে যশোদার কাছে ও যশোদার কণ্যা সন্তানকে মথুরায় কংসের কারাগারে দেবকীর কাছে নিয়ে আসেন।

এরপরই কারারক্ষীগন জেগে উঠে দেবকীর কোল থেকে কন্যা সন্তানকে তুলে এনে আছড়ে মারা নির্দেশ দেন কংস। যখন নবজাত কন্যাকে আছড়ে মারতে উদ্যত হলো তখন শিশু কন্যা আকাশে দুর্গা মুর্তি ধারণ করে কংসকে বলেন যে‘ তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে।’ এই কথা বলেই দুর্গা দেবী মর্ত্যলীলা শেষ করে মহাদেবের কাছে ফিরে যান। পরে শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে বিভিন্ন লীলা শেষ করে কংসকে বধ করে ধরিত্রী মাকে শান্তি প্রদান করেন। সেখান থেকেই শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলে স্বীকার করা হয়ে থাকে। যে নরনারী এই শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত করেন তারা অতুল ঐশ্বর্য লাভ করে অন্তে বৈকুণ্ঠে যান।

রবিবার শ্রীকৃষ্ণের ৫২৪৪ তম আর্বিভাব তিথি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে পুরাতন সাতক্ষীরা মায়ের বাড়িতে জেলা পুজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি সুভাষ ঘোষের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক রঘুজিৎ গুহ, জেলা মন্দির সমিতির সহসভাপতি অ্যাড. সোমনাথ ব্যানার্জী, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য গোষ্ঠ বিহারী মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, মন্দির সমিতির সাবেক সভাপতি মঙ্গল কুমার পাল, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট সাতক্ষীরার সহকারী পরিচালক মদন চক্রবর্তী, জেলা মন্দির সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিত্যানন্দ আমিন, প্রাণনাথ দাস, বিকাশ দাস, যুব কমিটির শংকর ঘোষ, সুমন অধিকারী প্রমুখ। শুরুতেই গীতা পাঠ করেন আনন্দ সরকার।

সভা শেষে ফিতা কেটে র‌্যালির উদ্বোধন করেন সাংসদ মোস্তাক আহম্মেদ রবি ও পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমানসহ হিন্দু সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। র‌্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মায়ের
বাড়িতে এসে শেষ হয়।

এ ছাড়া সাতক্ষীরার কাটিয়া মায়ের বাড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, কালিগঞ্জের আমিয়ান মঠ, কলারোয়া, তালা, দেবহাটাসহ বিভিন্ন স্থানে যথাযোগ্য মর্যাদায় জন্মাষ্টমী পালিত হয়।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test