E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গোপন দৃশ্য ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকীতে স্কুলছাত্রীর আত্মহনন

২০১৮ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৫:২২:২২
গোপন দৃশ্য ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকীতে স্কুলছাত্রীর আত্মহনন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : আপত্তিকর ম্যাসেজ এবং গোপনীয় দৃশ্য ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকী প্রেমিকের। আর স্কুল কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয় তাকে আর স্কুলে আসতে হবে না। এসব কারণে ভেঙ্গে পড়েন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আটিগ্রামের নবম শ্রণির মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন। বেছে নেয় আত্মহননের পথ। প্রেমিকের এমন আচরণ সইতে না পেরে শনিবার (০১ সেপ্টেম্বর) সন্ধায় নিজ ঘরের ডাবে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সুমাইয়া খাতুন।

পরিবারের পক্ষ থেকে এমন ঘটনার জন্য প্রেমিক ও তার পরিবারের লোকজনকে দায়ি করা হলেও পুলিশ বলছে ঘটনা যাই হোক অভিযোগ পেলে নেয়া হবে ব্যবস্থা।

স্থানীয়রা জানায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার নতুন আটিগ্রাম এলাকার নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে পার্শ্ববর্তী পুরাতন আটিগ্রাম এলাকার আব্দুল্লাহ’র ছেলে শাহরিয়ার আসিফ জমজমের। নানা কারনে ভাঙাগড়ার মধ্যদিয়েই চলছিল তাদের সম্পর্ক।

শনিবার সন্ধ্যায় শাহরিয়ার আসিফ জমজম সুমাইয়ার মায়ের মোবাইলে আপত্তিকর ম্যাসেজ পাঠায়। একই সাথে তাদের দু’জনের গোপনীয় দৃশ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকীও দেয় শাহরিয়ার। এসব কারনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সুমাইয়া। এরই কিছুক্ষণ পর সুমাইয়া তার নিজ কক্ষে ওড়নাতে ঝুলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

সুমাইয়ার মা বিলকিস খাতুন জানান, শাহরিয়ার বখাটে প্রকৃতির। বেশ কিছুদিন ধরেই সুমাইয়ার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। মাস চারেক আগে শাহরিয়ার তাদের বাড়িতে এসে মেয়ের সুমাইয়ার কক্ষে প্রবেশ করে। বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়াই। এনিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে দু’জনের বিয়ের বিষয়ে কথা হয়। কিন্তু শাহরিয়ার ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি মেনে না নেয়ায় তাদের দু’জনের সম্পর্কে ছেদ পড়ে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সুমাইয়া। ওই ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর সুমাইয়া যে স্কুলে পড়ত সেই আটিগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ স্কুলে আসতে বারণ করেন। এমতাবস্থায় মানসিকভাবে চরমভাবে ভেঙে পড়ে সুমাইয়া।

শনিবার সন্ধ্যায় শাহরিয়ার পুনরায় সুমাইয়ার সাথে এমন আচরণ করলে বাধ্য হয়েই আত্মহননের পথ বেছে নেয় সুমাইয়া।

এ বিষয়ে সুমাইয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম জানান, আমার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান। ছেলেটি বড়। সুমাইয়া ছোট হওয়ায় একটু বেশিই আদরের। কিন্তু বখাটে শাহরিয়ার আমার মেয়েকে বাঁচতে দিলনা। তার অশোভন আচরনের কারনেই মেয়ে সুমাইয়া আত্মহত্যা করেছে।

তিনি আরো বলেন, সুমাইয়া পড়ালেখায় বেশ ভাল। তাতে আগ্রহও বেশি। অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারনে সুমাইয়া মানসিকভাবে কিছুদিন ভেঙে পড়েছিল। তাই সপ্তাহ খানেক সে স্কুলে যেতে পারেনি। পরে সুমাইয়া স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে সাফ জানিয়ে দেয় তাকে আর স্কুলে আসতে হবে না। এতে আমার মেয়ে সুমাইয়া আরো ভেঙে পড়ে। আর নানা কারনেই মেয়েটি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। মেয়ের এমন করুন মৃত্যুর জন্য শাহরিয়ার ও তার পরিবারকে দায়ি করেন তিনি।

সুমাইয়ার বান্ধবী নূপুর খাতুন জানায়, সুমাইয়া খুব শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। শাহরিয়ারের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মাঝে তাদের মধ্যে সম্পর্কের ঘাটতি হয়। শনিবার শাহিরয়ার মোবাইল ম্যাসেজে আপত্তিকর কিছু লেখা এবং গোপনীয় কিছু ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকীতে সুমাইয়া আত্মহত্যা করে। এজন্য তিনি শাহরিয়ারের কঠোর শাস্তি দাবী করে।

আটিগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফর রহমান জানান, আমি বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক জানি না। তবে স্কুল থেকে কেন বের করা দেওয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক জানে। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই সুমাইয়াস্কুলে আসে না।

এ বিষয়ে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে যা মনে হয়েছে সুমাইয়া আত্মহত্যা করেছে। এনিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে শাহরিয়ার নামে এক ছেলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও করা হবে। তবে মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(কেকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test