E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জনভোটে পুনরায় বিজয়ী হওয়ার পথ এমপি আশেকের জন্য কন্টকময়

২০১৮ সেপ্টেম্বর ০৫ ১৪:৫৬:১৮
জনভোটে পুনরায় বিজয়ী হওয়ার পথ এমপি আশেকের জন্য কন্টকময়

বিশেষ প্রতিবেদক : মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনটি পুনরুদ্ধারে বিএনপি মরিয়া। ১৯৯১ সালের পর হতে জনভোটে কখনো নৌকার বিজয় ছিলোনা এ আসনে। মহেশখালীতে আ’লীগে নতুনদের মনোনয়ন দৌড় লক্ষ্যনীয়।

গোপনে মাঠে জাপা নড়েচড়ে বসেছে আসনটিতে প্রার্থী দাড় করাতে। এদিকে কুতুবদিয়ায় জামায়াত নীরবে শক্ত অবস্থানে থেকে কৌশলে নেতাকর্মীদের সংঘটিত করছে বলেও জানা যায়। কক্সবাজার ২ আসনে বার বার পার্থক্য গড়ে দেয় কুতুবদিয়ার ব্যালট বাক্স।

ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন, ভোটের মাঠে লড়তে নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে রাজনৈতিক দলগুলো ও মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের মাঝে। লক্ষ্যনীয় ভাবে চলছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। যার ধারাবাহিকতায় মনোনয়নের আশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন দলীয় একাধিক নেতা।

মহেশখালি কুতুবদিয়া এক আসন হলেও সংসদীয় আসনটিতে দ্বীপের সংখ্যা বেশি। কুতুবদিয়া উপজেলা ও মহেশখালি মিলে মুলত আসনটি। স্থানীয় রাজনৈতিক ভাবাপন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ আসনটি বরাবরেই বিএনপির জন্য সহজ হতে পারে। কিন্তু সরকার দলীয় কাউকে জনগণের ভোটে বিজয়ী হওয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য।

কেননা এবারে বিনাভোটে বিজয়ী হওয়ার পথ রুদ্ধ। আসনটি বিএনপি ও ধানের শীঁষ অধ্যুষিত শক্তিশালী ঘাটি তা একবাক্যে স্বীকার করে সকলে।

ইতিমধ্যে আওয়ামী সমর্থক একাংশের কয়েকজন নেতা মাঠে সক্রিয় রয়েছে। তবে বিএনপি, জাতীয় পার্টি হতেও জোরেসোরে মাঠে লবিং করে যাচ্ছে অনেকে।

তবে এমপি হিসাবে মনোনয়ন প্রত্যাশী দৌঁড়ে এখনো এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক। তিনি বিনাভোটে নির্বাচিত হলেও এলাকায় উন্নয়নমূলক কিছু কাজ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এক সময়ের ক্রাইমজোন খ্যাত মহেশখালি অনেকটা শীতল হতে শুরু করেছে তার শাসনামলে।

তবে তিনি এখনো স্থানীয় দলীয় নেতা কর্মী এবং দলীয় ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে এক করতে পারেননি। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, সরকার দলীয় অনেক ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে তৃণমুলে তার সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে।

আর তার মুল কারণ খোঁজতে গিয়ে দেখা যায়, সকল জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমান সহাবস্থান রক্ষা করতে গিয়ে অনেকে বিষয়টি ভালো ভাবে নেয়নি। অন্যদিকে জেলা পরিষদের প্রশাসক, সদস্য নির্বাচনেও এসব জনপ্রতিনিধিদের অনেকটা চাপে রেখেছিলেন বলে ভেতরে অনেকে চাপা অসন্তোষজনক এমনটি ধারণা।

আগামী নির্বাচনে জনরায়ে ভোটের বিজয়ী হতে হবে জেনেও স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগসহ সকল সংগঠনের নেতা কর্মিদের এক করতে পারছেন না। ফলে বর্তমান চেয়ারম্যানদের মধ্যেও একটি নীরব বৈরীভাব রয়ে গেছে এমপি আশেকের বিরুদ্ধে।

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ সমালোচিত হয়েছে মহেশখালী যুবলীগের কমিটি নিয়ে। যুবলীগের সভাপতি, সম্পাদক বিভিন্ন ইউনিট কমিটি নিয়ে যেভাবে সমালোচিত হয়েছে তা জেনেও এমপির নীরব ভুমিকা। আর কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় আওয়ামী সমর্থকদের।

মহেশখালির অনেক রাজনীতিবিজ্ঞ ও সুশীলজন মনে করেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতাকর্মিদের সাথে দৌরাত্ব কমিয়ে আনতে না পারলে মনোনয়ন পেলেও সফল হতে বেগ পেতে হবে এমপি আশেক’কে।
এদিকে, এমপি আশেকের পাশপাশি নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী এমন যাদের নাম মাঠে শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী সদস্য ও বিশিষ্ঠ পরিবেশ বিজ্ঞানী ডঃ আনচারুল করিম,সমাজ বিজ্ঞানী ডঃ শাহাদত হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা কামরুল হাসান, মোঃ ওসমান গণি, কেন্দ্রীয় উপ কমিটির নেত্রী ইজ্ঞিনিয়ার ইসমত আরা ইসমু।

এছাড়া বিএনপি হতে সাবেক এমপি আলমগীর মুহাম্মদ মাহাফুজ উল্লাহ ফরিদ, কুতুবদিয়ার উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা যায়।

এছাড়াও জাতীয় পার্টি হতে জেলা সভাপতি কবির আহমেদ সওদাগর ও জাপা নেতা মুহিবুল্লাহ মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। অন্যদিকে সাবেক পৌর মেয়র সরোয়ার আজম ও নিজেকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা। কুতুবদিয়া হতে নির্বাচিত জামায়াতের দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আজাদ ও ভিন্ন প্রতীকে বা জোটগত ভোটে প্রার্থী হিসাবে আগাম ইংগিত দিচ্ছে।

বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তাফা এর নাম বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসলেও মুলত তিনি প্রার্থী হচ্ছেন তা ঘোষণা করল গত সপ্তাহে। তাছাড়া বাকিরা ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এর মধ্যে বিভাজনের জন্য কোন একটি তৃতীয় পক্ষ ও কিছু মিডিয়াকে দিয়ে নির্বাচন করার কথা লিখাচ্ছেন বলেও শোনা যায়।

বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ডঃ আনসারুল করিমকে মাঠে দেখা যাচ্ছে। গত উপজেলা নির্বাচনে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ ইব্রাহিমের প্রচারাভিযানে জনগণ মাঠে দেখেছিলেন তাকে। এর বাইরে তিনি নির্বাচনী হাওয়ায় কখনো কোন দলীয় নেতা কর্মি কিংবা মাঠ পর্যায়ে কোন ধরনের সংপৃক্ত হতে দেখা যায়নি পুর্বে।

ছোট মহেশখালীতে সমাজ বিজ্ঞানী ড. শাহাদত হোসেন শুধু মাত্র কেন্দ্রীয় নেতা কর্মিদের মধ্যে লবিং নিয়ে ব্যস্ত মাঠ পর্যায়ে থাকেও দেখা যাচ্ছেনা।

এদিকে প্রবল গনসংযোগ করতে দেখা যাচ্ছে সাবেক ছাত্রনেতা নামধারী ওসমান গণি ও। বিশ্বস্থ সুত্রে জানা যায়, মাঠে সক্রিয় একাধিক আওয়ামী লীগ, বিএনপি আর জাতীয়পার্টির প্রার্থীরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকাতে এসব প্রচার করতে শুরু করেছে বলে প্রচার রয়েছে।

মহেশখালি কুতুবদিয়া আসনে একমাত্র নারী প্রার্থী ইজ্ঞিনিয়ার ইসমত আরা ইসমু নিজের ফেসবুক ওয়ালে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলেও বর্তমানে নীরব। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বসবাস করে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে রাজনৈতিক সু-সম্পর্ক বাড়িয়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়। তবে এর বাইরে মাঠ পর্যায়ে তেমন পরিচিতি নেই তার।

বিশ্বস্থ সুত্রে জানা যায় যে, মুলত সংরক্ষিত মহিলা আসনটির সুযোগ নেওয়ার জন্য নিজেকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছেন তিনি।

সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতা বর্তমান ধলঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ও মনোনয়ন নিতে পারেন। এমনটি খবর রটেছে। তিনিই হতে পারেন এমপি আশেক উল্লাহর রফিকের পাশাপাশি শক্ত প্রার্থী। ইতিমধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।

কারণ তিনি ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসাবে ব্যাপক পরিচিত। শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হয়ে তিনি ইতিমধ্যে তার কার্য্যকলাপ, অফিস আদলতে সততার পরিচয়, বিভিন্ন সভা সেমিনারে তার জোরালো সু-কণ্ঠময় বক্তব্য ইতিমধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে।

মহেশখালীতে সব-সময় উত্তর দক্ষিণ একটি প্রশ্ন থেকে যায়। বিশ্বস্থ সুত্রে, যদি কেহ উত্তর মহেশখালি হতে নমিনেশন পান তাহলে উত্তর মহেশখালীর বিশাল একটি ভোট ব্যাংক অর্জন করতে পারে। এর বাইরে অন্য কোন প্রার্থীর পক্ষে তা কখনো সম্ভব নয়। ফলে বিজয়ী হতে বড় কাজ দেবে নাড়ির টান।

বর্তমানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবাক হচ্ছেন, কেননা একের পর এক ক্ষমতাসীন দলের পদে থাকা নেতারা গত এক সপ্তাহে ধরে মাঠে সক্রিয়। এমপি প্রার্থী হচ্ছেন এমন ঘোষণায় জনগণও কৌশল নিয়েছে সবার মন রাখতে।

সবুজ সংকেত নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলে অনেকের দাবিও। তাই নেতাকর্মীরা চায়ের কাপে কিংবা মাঠে ময়দানে হিসাব কষতে শুরু করে। কে হতে পারেন আগামীতে মহেশখালীর কান্ডারী। জনভোটে এমপি আশেক কি পুনরায় বিজয়ী হতে পারবেন। নাকি গত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনের মতো বহু নাটকের পর নাটক দেখবে জনগণ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যে কেউ নৌকার মনোনয়ন নিয়ে আসলে তার পক্ষে তারা কাজ করবেন। সাধারণ নেতাকর্মীরা মনে করছেন নৌকা সভানেত্রী শেখ হাসিনার,কোন প্রার্থীর নয়, দলীয় প্রতীক।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা জানান, “যে কারো মনোনয়ন চাওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। তবে বুঝে-চিন্তে দল যাকে মনোনয়ন দিবেন তাকে মেনে নেবেন সকলে। একতাবদ্ধ হয়ে যেন নৌকা বিজয় নিশ্চিত হয়”।

মহেশখালী কুতুবদিয়ার বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক জানান, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল। দলের অনেকে মনোনয়ন চাইতে পারে। চূড়ান্ত মনোনয়নের মালিক হচ্ছেন দলের সভানেত্রী । তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা তার পক্ষে ঐক্যবব্ধ হয়ে কাজ করে নৌকাকে বিজয়ী করে আনবো”।

ড. আনচারুল করিম জানান, ‘মহেশখালী স্বপ্নের সিঙ্গাপুর হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়লা বিদ্যুৎসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ করছেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। এসব বিবেচনায় আমি দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’

অন্যদিকে এমপি প্রার্থী ওসমান গণি গণমাধ্যমকে জানায়, ‘নানা প্রক্রিয়ায় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া চলছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীর সব বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন দল। সে প্রক্রিয়ায় মনোনয়ন দিলে আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন বর্তমান এমপি আশেক’কে নৌকা প্রতীকে পুনরায় মনোনয়ন দিলে জনগণ তেমন অবাক হবেনা। তবে বিনা ভোটে নয়,জনভোটে পুনরায় বিজয়ী হওয়ার পথ ততটা সুখকর নয় বলে মন্তব্য অনেকে।

(জেজে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test