E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মান্দায় নকল সার ও কীটনাশক তৈরীর কারখানার সন্ধান, গ্রেফতার ১

২০১৮ সেপ্টেম্বর ১৫ ১৭:৫২:১০
মান্দায় নকল সার ও কীটনাশক তৈরীর কারখানার সন্ধান, গ্রেফতার ১

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দা উপজেলার বৈদ্যপুর বাজারে একবছর ধরে চলমান বিভিন্ন নামী দামি কোস্পানির মোড়কে বাজারজাতকৃত নকল সার ও কীটনাশক তৈরির একটি কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। ওই কারখানা থেকে বিপুল পরিমান সরঞ্জাম জব্দসহ মুলহোতা আরিফ হোসেনকে (৪৮) গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আরিফ হোসেন খুলনার খানজাহানআলী উপজেলার শিরোমনি উত্তরপাড়া এলাকার মৃত শওকত হোসেনের পুত্র। সংবাদ পেয়ে কৃষি অধিদপ্তর ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। 

মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহবুব আলম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানার এএসআই রবিউল ইসলাম শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈদ্যপুর বাজারের অদুরে গোড়রা এলাকায় কারখানাটির সন্ধান পান। এরপর অনুসন্ধান চালিয়ে নকল সার ও কীটনাশক তৈরির সত্যতা পাওয়া যায়। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে শনিবার সকালে কারখানাটিতে অভিযান চালানো হয়। এসময় বিপুল পরিমান উপকরণ ও সরঞ্জামসহ কারখানাটির মুলহোতা আরিফ হোসেনকে পাশের একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে বলে তিনি জানান।

স্থানীয়রা জানান, বৈদ্যপুর বাজারের গোড়রা এলাকার আনিছুর রহমান আন্টু ও আজিজুল ইসলামের বাসা ভাড়া নিয়ে গ্রেফতারকৃত খুলনার আরিফ হোসেন, যশোরের মুকুল হোসেন, মধু চন্দ্র ও এমদাদুল হক এবং নিলফামারী জেলার রফিকুল ইসলাম একবছর ধরে কারখানাটির কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। কারখানাটি বাজার থেকে একটু দুরে নির্জন এলাকায় হওয়ায় সেখানে কি তৈরি হচ্ছে এ বিষয়ে তারা অবহিত ছিলেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, কারখানাটির সামনে প্রতিনিয়ত ট্রাক ভর্তি করে বালু ও মাটি নিয়ে আসা হত। এগুলো দিয়ে কারখানার ভিতরে কি কাজ করা হত, সেটি তারা জানতেন না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ইসলাম, গোলাম মোস্তফাসহ আরও অনেকে জানান, কারখানার মালিকরা আন্টু ও আজিজুলের ৩টি বাসা মাসিক ২ লাখ ২৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালু করেন। মাসিক বেতনে ৩৫ জন কর্মচারি সেখানে নিয়মিত কাজে নিযুক্ত ছিল। এলাকার কতিপয় ব্যক্তির ছত্রছায়ায় কারখানটিতে নকল সার ও কীটনাশক উৎপাদনসহ বাজারজাত করে আসছিলেন অভিযুক্তরা।

শনিবার সকালে কারখানাটিতে গিয়ে দেখা গেছে, তিনটি ভবনের একটিতে জিংক সার তৈরির উপকরণ, মিক্সার মেশিন, স্তুপকৃত মাটিসহ অসংখ্য মাটি ভর্তি বস্তা ও মোটা দানার বালুর (ডোমার বালু) স্তুপ পাওয়া যায়।

এ ভবনের অন্য একটি কক্ষে বালুতে রঙ মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে দানাদার কীটনাশক। অপর ভবনে মিক্সার মেশিন, বালু ভর্তি বস্তা, ডায়াজিনন, বাসুডিন, ফুরাডান, ব্রিফার ৫জি, জেডফুরান থিয়োভিট পাউডার, গ্রীণ জিংকসহ বিভিন্ন নামী দামি কোম্পানির মোড়কে নকল কীটনাশক পাওয়া গেছে। অন্য ভবনটিতে মোড়ক সেলাই করার মেশিনসহ পাওয়া গেছে অন্যান্য সরঞ্জাম।

সংবাদ পেয়ে কৃষি অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি কারখানাটির কার্যক্রম দেখে বিস্মিত ও হতবাক হয়ে যান। কারখানাটির উপকরণ দেখে তিনি মন্তব্য করেন, এখানে উৎপাদিত সার ও কীটনাশক নকল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। যা কৃষকের সঙ্গে চরম প্রতারণা। জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শান্তি হওয়া দরকার।

এদিকে শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নওগাঁ পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন ও মান্দা সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার হাফিজুল ইসলাম। পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন জানান, কারখানাটির সন্ধান পাওয়া পুলিশের একটি বড়ধরণের সাফল্য। কারখানার মালামাল জব্দ ও তদন্ত অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর সঙ্গে জড়িত সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে।

(বিএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test