E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার মিশ্র প্রতিক্রিয়া, সাত হাজার গ্রামবাসির নামে মামলা

২০১৮ সেপ্টেম্বর ১৬ ১৮:৩১:১৬
ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার মিশ্র প্রতিক্রিয়া, সাত হাজার গ্রামবাসির নামে মামলা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার  কালিগঞ্জ  উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান কেএম মোশাররফ হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামী ইউপি সদস্য আব্দুল জলিলকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা সাত হাজার গ্রামবাসির নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কালিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক রাজীব হোসেন বাদি হয়ে শনিবার রাতে থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

এদিকে পুলিশের কাছ থেকে আসামী ছিনতাই করে আব্দুল জলিলকে পিটিয়ে হত্যা ও বাড়ি ভাঙচুর করার ঘটনায় মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম লঙ্ঘন ও চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের পরিবারের সদস্যসহ জাতীয় পার্টির কতিপয় নেতা কর্মী রবিবার দুপুরে কালিগঞ্জ থানা ও সার্কেল অফিসে এসে পুলিশকে যেভাবে সাধুবাদ জানিয়েছেন তাতে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি নিহত ইউপি চেয়ারম্যান কেএম মোশাররফ হোসেনের পরিবার ও তার দলীয় নেতা কর্মীরা ইউপি সদসস্যের লাশ যাতে তার গ্রামে দাফন না করা হয় সেজন্য হুশিয়ারি দেওয়ায় দাফন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে রবিবার সকালে কৃষ্ণনগর বাজার ও শংকরপুর গ্রামে গেলে মমতাজ গাইন. মোমেনা খাতুনসহ কয়েকজন জানান, চেয়ারম্যান কেএম মোশাররফ হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামী ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল গাইনকে আটক করার পর শনিবার রাত ৯টার দিকে অস্ত্র উদ্ধারের নামে কৃষ্ণনগর বাজারে পুলিশ ভ্যান থেকে নামানো হয়। এরপর জলিলকে ছিনিয়ে নেওয়ার নামে যেভাবে পুলিশের সহায়তায় জনগন নাগালে পায় তা আইনের পরিপন্থি। এরপর তাকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার পর তার বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তার পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়েছে।

তারা জানান, চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের বাবা ছৈলদ্দিন কাগুচি ছিলেন কুখ্যাত রাজাকার। কৃষ্ণনগর গ্রামের নাড়– গোপাল অধিকারীর বাড়ি ও জমি জবরদখল করে তাকে স্বপরিবারে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া পাক হানাদার বাহিনী, আল বদর ও রাজাকারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যেভাবে এলাকায় নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে ছিলেন তারই ফলস্বরুপ তাকে মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতার পর গুলি করে হত্যা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসি ভদ্রখালি গ্রামে এক হিন্দু বাড়িতে ডাকাতির সময় ওই বাড়ির এক নারীর সম্ভ্রম নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনর বিরুদ্ধে। ডাকাতি, ২০১২ সালে ফতেপুরে সহিংসতার নেতৃত্ব দেওয়ার ঘটনায় দু’টি মামলাসহ মোশাররফ হোসেন বিরুদ্ধে কমপক্ষে ছয়টি মামলা রয়েছে।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশকে ব্যবহার করে ব্যবসায়ি ও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার অভিযোগ রয়েছে। এলাকার ডাকাতদের পৃষ্টপোষক ও গডফাদার ছিলেন মোশাররফ। তার মৃত্যুতে অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। অথচ চেয়ারম্যানকে হত্যার জের হিসেবে গ্রেফতারকৃত আব্দুল জলিলকে যেভাবে পুলিশের সহায়তার পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম লঙ্ঘন হয়েছে। অপরাধী প্রমানের আগে তাকে কৃষ্ণনগর বাজারের যুবলীগের অফিসের সামনে যেভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হলো ও পরে তার বাড়ি ভাঙচুর করা হলো তা মেনে নেওয়া যায় না। রাজাকারের ছেলে মোশাররফ হোসেনের পরিবারের সদস্যসহ সাবেক এক সাংসদ ও জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতা কর্মী যেভাবে জলিলের লাশ গ্রামে দাফনের বিরোধিতা করেছে প্রশাসন তা সমর্থন করলে তা হবে ন্যয় বিচারের পরিপন্থি।

তবে নিহত আব্দুল জলিলের মা মোমেনা খাতুন, স্ত্রী মুক্ত পারভিন, চাচা মন্তেজ গাইন জানান, যেভাবে জলিলকে পিটিয়ে মারাা হয়েছে তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বাড়ির সামনের দরজা, চারটি এসি ঘরের গ্লাস, ১৪টি সোলার প্যানেলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুরের দৃশ্য দেখিয়ে তারা বলেন, দেশে আইনের শাসন থাকলে এটা হতো বলে তারা মনে করেন না। জলিল হত্যার ঘটনায় তারা ক্ষুব্ধ জনগনের চেয়ে পুলিশকেই বেশি দায়ী করেন। নতুন করে হামলার ভয়ে জলিলের লাশ তারা হাসপাতালে আনতে যাননি বলে জানান তারা।

তবে কৃষ্ণনগর গ্রামের কয়েকজন জানান, জলিল যেভাবে ডাকাতি, হত্যা, ছিনতাই, চাদাবাজি ও লুটপাটের মাধ্যমে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন তা নজিরবিহীন। তারই ক্ষোভ স্বরুপ তার আলীশান বাড়ি ভাঙচুর করেছে জনতা। রবিবার বিকেলে কিষান মজদুর হাইস্কুল মাঠে বসেছে শান্তিসভা। জনগন যেভাবে জলিলকে পিটেয়ে মেরেছে তাতে অন্য ডাকাত সন্ত্রাসীরা সতর্ক হবে।

এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমান জানান, পুলিশের কাছ থেকে জলিলকে ছিনিয়ে নেওয়ার সময় জনগনের সঙ্গে ধস্তাধ্বস্তির একপর্যায়ে ছয় পুলিশ সদদ্য আহত হয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশ পরিদর্শক রাজীব হোসেন বাদি হয়ে শনিবার রাতে সাত হাজার অজ্ঞাতনামা গ্রামবাসির নামে মামলা দায়ের করেছে। রবিবার বিকেলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়না তদন্ত শেষে তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। স্বজনরা কেউ লাশ না নিলে সরকারিভাবে দাফন করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে জাপা নেতা কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান কেএম মোশাররফ হোসেনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় তার বড় মেয়ে সাদিয়া পারভিন ১৯জনসহ অজ্ঞাতনামা ২০ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আটজন আসামীর মধ্যে তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। গ্রেফতারকৃত জলিলকে গ্রামবাসি পিটিয়ে হত্যা করেছে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test