E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দক্ষিণাঞ্চলের ২৮ নৌরুট লঞ্চ চলাচলের অযোগ্য, খননের দাবি মালিকদের

২০১৮ সেপ্টেম্বর ১৬ ১৮:৫৮:৪৯
দক্ষিণাঞ্চলের ২৮ নৌরুট লঞ্চ চলাচলের অযোগ্য, খননের দাবি মালিকদের

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) : বর্ষা মওসুম শেষ না হতেই দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সঙ্কট। সেই সাথে শঙ্কা বাড়ছে নৌযান পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের। নদী-খাল বেস্টিত ছয় জেলার এই বরিশাল বিভাগে নৌরুটগুলোতে অসংখ্য ডুবোচর, স্থায়ী চর। ফলে দণিাঞ্চলে নৌযান চলাচলে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। 

বিআইডব্লিউটিএর দেয়া তথ্যমতে, দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন নদ-নদী ও খাল মিলিয়ে মোট ৮৮টি নৌরুট রয়েছে। শীতকালে এর মধ্যে ৫৭টি রুট মাঝারি ও হালকা নৌযান চলাচলের মাধ্যমে সচল থাকে। তিনটি নৌরুটে ডুবোচর থাকলেও ডাবল ডেকার লঞ্চ চলাচল করতে পারে। বাকি ২৮টি রুট লঞ্চ চলাচলের পুরোপুরি অযোগ্য হয়ে পড়ে।

ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-পটুয়াখালী, ঢাকা-ভোলা রুটের দোতলা লঞ্চ বাদে অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে সাধারণত চলাচল করে ছোট লঞ্চ। এ লঞ্চ চলাচলের জন্য কমপে ৮-৯ ফুট গভীর পানি প্রয়োজন। আর ডাবল ডেকার লঞ্চের জন্য প্রয়োজন ১০-১২ ফুট গভীরতা। ইতোমধ্যে এ গভীরতা হারিয়ে ফেলেছে বরিশালের নদীগুলো। মূলত জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে বরিশাল-ভোলার কিছু নৌরুটে যোগাযোগ টিকিয়ে রাখা হয়েছে।

লঞ্চ কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব রুটে ৫ ফুট পানিও থাকে না অনেক এলাকায়। এ ছাড়া ভোলা, পটুয়াখালী, বাউফল, গলাচিপা ও দশমিনার নদীতে ব্যাপক ডুবোচর রয়েছে। দিয়ারা চ্যানেলের পানি ৫-৬ ফুটে নেমে গেছে। শীত এলে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, গাবখান চ্যানেলের শাখা-উপশাখায় ২০০ থেকে ৩০০ জায়গায় ডুবোচর থাকে। যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ এসব রুটে নৌ-চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া, কীর্তনখোলা ও পটুয়াখালীর পায়রা আগুনমুখা, তেঁতুলিয়ার বিষখালী, ঝালকাঠির গাবখান চ্যানেল ও ইলিশা নদীতেও শীতে অসংখ্য চর ও ডুবোচর থাকে।

বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, ড্রেজিং চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগও খনন করতে পারছেন না কর্তৃপ। যেটুকু খনন করা হচ্ছে তার বেশির ভাগই বেসরকারি ড্রেজার দিয়ে। ফলে ড্রেজিং হলেও ফি-বছর একই সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে নৌ-বিভাগ।

বিআইডব্লিউটিএর ২০১৬-১৭ সালের সংরণ ও উন্নয়ন ড্রেজিংয়ের ল্যমাত্রা ও অগ্রগতির রিপোর্টে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশে ৪৩২ লাখ ঘনমিটার নদীপথ খননের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু খনন সম্ভব হয়েছে ১২৯ দশমিক ৮৭ লাখ ঘনমিটার এতে দেখা যায় ল্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগও ড্রেজিং করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার দিয়ে খনন করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৭৩ লাখ ঘনমিটার এবং বাপাউবো/বেসরকারি ড্রেজারে খনন করা হয়েছে ৮৮ দশমিক ১৪ লাখ ঘনমিটার নদীপথ।

সংস্থাটির রিপোর্টে দেখা যায়, সংরণ ড্রেজিংয়ের আওতায় ২৭টি নদীর ৩৪টি নৌরুট থেকে ড্রেজিংয়ের আবেদন এসেছে। এর মধ্যে বরিশালের উল্লেখযোগ্য নদী ড্রেজিংয়ের জন্য আবেদন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছ্র তেঁতুলিয়া নদী, কালাবদর নদীর লাহারহাট-ভেদুরিয়া নৌপথ, মেঘনা নদীর ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরিরুট, কীর্তনখোলা নদীর ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটের মিয়ারচর, শেওড়ানালা ও বরিশাল বন্দর এলাকা চ্যানেল, তেঁতুলিয়া ও লালমোহন নদীর বরিশাল-নাজিরপুর-লালমোহন রুট, লোহালিয়া নদীর ঢাকা-দুর্গাপাশা-(কারখানা)-বগা-ঝিলনা-পটুয়াখালী-গলাচিপা-খেপুপাড়া নৌপথ, গাবখান খালের গাবখানা চ্যানেল। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ঢাকা-ভোলা নৌ-রুট (ভোলা নালী), লোহালিয়া নদীর পটুয়াখালী-আমতলী নৌপথ, মেঘনা নদীর চরভৈরবীর পশ্চিমপাড়ে ঘোষেরহাট-নাজিরপুর ও টেংরামারী নালা নৌপথ, খাগদোন নদীর বরগুনা বন্দর এবং বরিশাল পাতারহাট থেকে ইলিশা রুট।

বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য স্বপন খান জানিয়েছেন, বিআইডব্লিউটিএ প্রতি বছর তাদের ইচ্ছামতো ড্রেজিং করে, যেটুকু করার কথা তা করে না। এ ছাড়া খননের সময় বালু অন্যত্র না ফেলে নদীতেই ফেলে। ফলে খননের কোনো সুফল পাওয়া যায় না। বেসরকারি ড্রেজারগুলো নদী খননের ক্ষেত্রে ভালো কাজ দিলেও সরকারি ড্রেজারের সফলতা খুবই কম। তা ছাড়া ঢাকা-বরিশাল রুটের ডেঞ্জার জোন খ্যাত ‘মিয়ার চর পয়েন্ট’র এখনো কোনো উন্নতি হয়নি। আসন্ন শীত মওসুমের আগেই সব নদী পথ সচল রাখার দাবি জানান তিনি।

দক্ষিণাঞ্চলে নদীপথের কোনো কোনো অংশ জরুরি ভিত্তিতে ড্রেজিং প্রয়োজন তা জানিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কাছে লঞ্চমালিক সমিতির পক্ষ থেকে একাধিক আবেদন করা হয়েছে বলে জানান স্বপন খান।

লঞ্চ শ্রমিকদের দাবি, শীতকালে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় বরিশাল অঞ্চলের সাহেবের হাট চ্যানেল দিয়ে চলাচলকারী নৌযানগুলোকে। বরিশালের কীর্তনখোলা নদী থেকে লাহারহাট ফেরিঘাট হয়ে শ্রীপুর পর্যন্ত যেতে ৫-৬ জায়গায় নৌযান আটকে যায়। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানির প্রবাহ ও ভাঙনের ফলে নদীর তলদেশে পলি জমে সৃষ্টি হয় ছোট-বড় অসংখ্য ডুবোচর। শীত আসতেই পানি কমে গিয়ে নদীর বুকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে চরগুলো।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, দেশের ২৪ হাজার নৌপথকে সচল করতে হবে পর্যায়ক্রমে কাজ করে যাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ।

তবে তিনি মনে করেন, আগামী ১০-১৫ বছরের আগে এই সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ দণিাঞ্চলের ২৮টি রুটে যে পরিমাণ পলি জমে তা ড্রেজিং করে আবার নদীতেই ফেলতে হয়। অন্যত্র ফেলার সুযোগ থাকলে হয়তো ডুবোচর বা চর পড়ার মতো সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটানো যেত। কিন্তু নদী ড্রেজিং করে নদীতে ফেলায় দ্রুত সমস্যা সমাধান করা অসম্ভব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নদী ড্রেজিং করে নদীতেই পলি ফেলা আন্তর্জাতিভাবেই স্বীকৃত। কারণ যেদেশে সমুদ্র ড্রেজিং হয় সেখানেও একই সমস্যা। সমুদ্রের তো পাড় নেই।

(এসডি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test