E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

২০১৮ সেপ্টেম্বর ১৭ ১৭:০৩:৫৪
কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ায় গড়াই নদীর উপর সদ্য নির্মিত কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু নদী ভাঙ্গনের কবলে চরম ঝুঁকিপূর্ন এবং সমগ্র জনপদের রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা, ঘরবাড়ি ও জায়গা জমি নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার হাত থেকে রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

আজ সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও নদীভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির উদ্যেগে গড়াই নদীর বাম তীরস্থ সেতু সংলগ্ন নদী ভাঙ্গন আক্রান্ত পাড়ে এই মানববন্ধন অুনষ্ঠিত হয়।

একর্মসূচীতে ইউনিয়নের সর্বস্তরের নারী পুরুষ, শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

ইউপি চেয়ারম্যান এম সম্পা মাহমুদের সভাপতিত্বে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব হাসান আলী।

এছাড়া দাবি আদায়ের এই কর্মসূচীতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি কুষ্টিয়া জেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুব আলী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বোধন থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা লালিম হক, কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অসিত সিংহ রায়, হাটশ পরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, স্থানীয় জামে মসজিদের সভাপতি জালাল উদ্দিন সেখ প্রমুখ।
এসময় নেতৃবৃন্দ বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি অসম্পূর্ণ ডিজাইনে কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু নির্মান করার ফলেই নদী তার গতিপথ পরিবর্তনের সুচনা করেছে যার অবসম্ভাবি পরিনতিতে গোটা জনপদটি এখন চরম আকারে বিলুপ্তির হুমকিতে। কিন্তু এর সমাধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ দায় নিতে রাজি না হওয়ায় ঝুঁকির মাত্রা ক্রমশ: তীব্র থেকে তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এছাড়া সেখানে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১নং হাটশ হরিপুর ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু নির্মানের মধ্যদিয়ে জেলার অন্যতম জনগুরুত্বপূর্ণ দাবি বাস্তবায়ন করেছেন বর্তমান সরকার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার হোসেন লি: কর্তৃক ২২ডিসেম্বর,২০১৩ কার্যাদেশ প্রাপ্ত এবং ১৬ ডিসেম্বর,২০১৫ সমাপ্তির ধার্যকৃত সময় থাকলেও প্রকল্প সম্পন্ন করে ২৪মার্চ ২০১৭ তারিখে আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর ও উদ্বোধনের মাধ্যমে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ঘোষনা করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি। এরফলে কুষ্টিয়া জেলায় বর্তমান সরকারের এই যুগান্তকারী উন্নয়নের দৃশ্যত: ছাপ ফেলেছে এই জনপদে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় মৃত্যুকুপে দাঁড়িয়ে আজ বলতে হচ্ছে- সর্বশেষ বাস্তব চিত্রে কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন গড়াই নদীর উপর নির্মিত কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু ত্রুটিপূর্ন ডিজাইনে নির্মান সম্পন্ন করেছে বাস্তবায়নকারী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। ফলে সেতুর উজান থেকে পার ভেঙ্গে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটেছে। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের সাথে আমরা জানতে পেরেছি, অসম্পূর্ণ ডিজাইনে নির্মিত হওয়ায় অবসম্ভাবী পরিনতি হতে যাচ্ছে গড়াই নদীর বাম তীর ভেঙ্গে সেতুর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অত্র ইউনিয়নের ২নং হাটশ হরিপুর ওয়ার্ডের প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বসতভিটাসহ গোটা জনপদের মসজিদ, মাদ্রাসা, সরকারী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাস্তা-ঘাট নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে আজকের জনবসতির উপর দিয়ে নদীর স্রোত প্রবাহ বয়ে যাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

সম্ভাব্য এই বিপন্ন পরিস্থিতির কারণ হিসেবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, সড়ক ও জনপথ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারী প্রকৌশল বিভাগে কর্মরত প্রকৌশলী গণর উল্লেখ করেছেন, বিধিমতে কোন সেতু নির্মানের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ডিজাইনের সাথে অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে প্রতি ১মিটার সেতু দৈর্ঘের সাথে অনুপাতিক হারে (১:১.৫ মিটার) উজানে এবং ভাটিতে (১:.৫মিটার) দৈর্ঘের গাইড বাঁধ সংযোজনসহ ডিজাইন চুড়ান্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু নির্মানে সেই রুলস প্রতিপালিত না হওয়ায় পাড় ভেঙ্গে নদীর গতিপথ পরিবর্তণের যে সূত্রপাত হয়েছে তাতে খুব শীঘ্রই সেতুর উজানের জনপদ নদীর গর্ভে বিলিনসহ রাস্তাঘাট নদীতে তলিয়ে যাবে। এতে সেতু নির্মানের মধ্যদিয়ে বর্ষিত আশির্বাদ অভিশাপ হয়ে দেখা দেবে সুবিধাভোগী এই জনপদে। নদীর মাঝখানে সেতু থাকবে কিন্তু এর সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ থাকবে না। যার সূত্রপাত ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে।

গত ৩১ আগষ্ট ২০১৮ থেকে শুরু হয়ে অদ্য সময়কাল পর্যন্ত গড়াই নদীর পার ভাঙ্গনের মধ্যদিয়ে কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু ক্ষতিগ্রস্তসহ হুমকিগ্রস্ত এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিগণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি কুষ্টিয়া কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করলে জবাবে কর্তৃপক্ষ ছাপ জানিয়ে দেন- নদীর পাড় ভেঙ্গে সেতু ঝুকিতে পড়লেও এলজিইডি’র কিছুই করার নেই; এ বিষয়ে সম্ভাব্য হুমকির কথা জানিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী,২০১৭ তারিখে এলজিইডি কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর হতে প্রেরিত পত্রে সেতুকে নদী ভাঙ্গন থেকে ঝুঁকিমুক্ত করতে উজান এবং ভাটিতে দুইপাশে মোট ২কি:মি: পাড় রক্ষা বাঁধ নির্মানের অনুরোধ করা হয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদ্বয় ছাপ জানিয়ে দেন গড়াই নদীর বাম তীরে ভাঙ্গন আক্রান্ত ঐ জোনের সেতু রক্ষার দায়িত্ব আমাদের নয়; সেতু রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।

অথচ সরকারী এই দুই দপ্তরের কেউই কোন দায়িত্ব নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যেগী না হওয়ায় বিপর্যয়ের হুমকি ক্রমশ: তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে চলেছে। যদিও এই দুই দপ্তরের কোন কর্তৃপক্ষই দায় এড়াতে পারেন না। কারণ প্রথমত, আক্রান্ত এলাকা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গড়াই পূনরুদ্ধার প্রকল্পভুক্ত জোন প্যাকেজ। দ্বিতীয়ত, সেতুটি নির্মিত হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে। তাহলে আপনারাই বিচার করুন এই দুই দপ্তরের দায় এড়ানোর কোন পথ আদৌ আছে কি না। সেকারণে এমন অবসম্ভাবী বিপন্নের মুখে দাড়িয়ে উপায়ন্তর না পেয়ে আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এবং মাননীয় প্রদানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক জরুরী ভিত্তিতে এই মৃত্যুকুপ থেকে পরিত্রাণের দাবি করছে ভুক্তভোগী ইউনিয়নবাসী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা মহান মুক্তিযুদ্ধের মহা নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ললিত স্বপ্ন- সোনার বাংলা গড়ে তোলার উন্মেষ ঘটিয়ে গ্রাম-শহরের ব্যবধান দুর করতে সুষম উন্নয়নের এক অনন্য ধারা সৃষ্টি করেছেন। সোনার বাংলা গড়ে তোলার অকুন্ঠ দৃঢ়তায় শত সহস্র প্রতিকুলতা পেরিয়ে দেশ আজ সমৃদ্ধির মডেল রোলে পরিনত হয়েছে তাঁর বিচক্ষন নেতৃত্বে।

আমরা দৃঢ়তার সাথে আরও বিশ্বাস করি গনতন্ত্রের পথিকৃত মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নেতৃত্বে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখিয়েছেন কিভাবে অসম্ভবকেও সম্ভব করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়। সে কারণে আমাদেরও প্রার্থনা প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে ত্রুটিপূর্ণ ডিজাইনে নির্মিত এবং নদী ভাঙ্গনে হুমকিগ্রস্ত কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতুটি রক্ষাসহ বিপন্নের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ইউনিয়নের অস্তিত্ব নদী গর্ভে বিলিনের হাত থেকে রক্ষায় দুই দপ্তরের রশি টানা টানির অবসান ঘটিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

(কেকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test