E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপ ফান্ডের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ 

২০১৮ সেপ্টেম্বর ১৭ ১৭:২১:১৩
সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপ ফান্ডের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ 

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : প্রতি বছর একই উপকরণ দেখিয়ে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ১৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ অর্থবছরসহ গত তিন বছরের পিইডিপি-৩ এর আওতার স্লিপ ফান্ডের বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। 

সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে সরজমিনে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় গুলো পরিদর্শন সূত্রে জানা যায়, ৩য় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় (পিইডিপি-৩) সরকার ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সারাদেশের ন্যায় রায়গঞ্জ উপজেলার ১৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য স্ব-স্ব বিদ্যালয়ে ৪০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয় সরকার।

ওই টাকায় আয়না,ডায়াস, ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাপ্রোস ও কাপদলের জন্য ৬ষ্ঠ ড্রেস ক্রয়ের কথা বলা হলেও নিম্নমানের উপকরণ কিনে ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

এছাড়া ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রতিটি বিদ্যালয়ের ওয়েটমেশিন,শ্রেণীকক্ষ সজ্জিতকরণ,প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয়, বিদ্যালয়কে আকর্ষণকরণ ও প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর জন্য পাটের তৈরি মাদুর, সাউন্ডবক্স, গ্লোব, সিটিজেন চার্টার,গণহত্যার ইতিহাস সংবলিত বই ক্রয় করার কথা থাকলেও তা কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে ফরর্মূলা মেইন্টেইন করেছে মাত্র।

এযেন‘কাজির গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ এমন অবস্থা। প্রতি বছর একই উপকরণ দেখিয়ে এসব বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্লিপ ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। এতে সরকারের লাখ টাকা ভেস্তে যেতে বসেছে।

এ ব্যাপারে অত্র উপজেলার ব্রম্মগাছা ইউনিয়নের চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালেয়র প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ হাওয়া খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,বিদ্যালয়ের কিছু কাজ করা হয়েছে। গত তিন বছরে প্রায় কাজই করা হয়েছে। কি কি ক্রয় করা হয়েছে গত তিন বছরে সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলেন,আমি কিছু জানিনা আপনার কিছু জানার থাকলে সভাপতিকে জিজ্ঞাসা করেন। এমন চিত্র শুধু চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নয় নলকা ইউনিয়নের বোয়ালিয়াচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সোনাখাড়া ইউনিয়নের সোনাখাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় সবগুলো বিদ্যালয়ে।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বিদ্যালয়ের বিল-ভাউচার শিক্ষা অফিসে জমা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অত্র উপজেলার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন,প্রতিটি বিদ্যালয়ে এই স্লিপ ফান্ডের টাকা সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যৌথ ভাবে শিক্ষা অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজসে সিংহভাগ টাকা আতসাৎ করে। গত দুই অর্থ বছরে কী উপকরণ ক্রয় করার কথা ছিল সেই প্রশ্নের জবাবে বলেন,গত দুই বছর গুলোতে টুকিটাকি যা ক্রয় করা হয়েছিল সে গুলোর কারনেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সভাপতির পক্ষে ভূয়া-ভাউচার তৈরি করা বেশ সহজ।

এছাড়া অত্র উপজেলার বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকার সাথে কথা হলে তারা অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন,এ বছরের বিল-ভাউচার জমা দেয়া হয়েছে। তবে গত দুই অর্থ বছরের কোনো কাজের হিসাব বা তথ্য দিতে পারেননি তারা । পাঙ্গাসী ইউনিয়নের নাড়ুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়,গত তিন বছরে কিছু উপকরণ ক্রয় করা হলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে কোনো কাজই করা হয়নি।

এ ছাড়াও পুরাতন কাজগুলোকে নতুন কাজ বলে চালিয়ে দিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, উপজেলা সদরে অনেক শিক্ষক নেতা রয়েছেন যারা অফিস ম্যানেজ করে শিক্ষকদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন।

ভয়ে সাধারণ শিক্ষকরা মুখ খুলতে সাহস পান না। বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে সাধারণ শিক্ষকদের কাছে থেকে চাঁদা আদায় করে থাকেন তারা, যা সুষ্ঠু তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে একটি বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন,এ বছর স্লিপ ফান্ডের কিছু প্রতিষ্ঠানে ৭০ ভাগ কাজ হয়েছে আর বাকী গুলোতে চলতি বছর ও বিগত বছর গুলোতে খুব দুর্নীতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের এই টাকা গুলো আসলে জলে চলে গেছে। পেট ভরেছে অসাধু শিক্ষক ও স্কুল কমিটির সভাপতিদের।

এ ব্যাপারে রায়গঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, বিগত বছর গুলোর তুলনায় মনিটরিং বাড়ানোর কারণে এবার দুর্নীতি কমেছে। তবে যদি আমরা কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাই তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন এ শিক্ষা কর্মকর্তা।

(এমএএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test