E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনকে অভয়ারণ্য ঘোষণায় শরণখোলায় ২০ হাজার মানুষের মানবেতর জীবনযাপন

২০১৮ সেপ্টেম্বর ১৮ ১৮:৪৭:৩৫
সুন্দরবনকে অভয়ারণ্য ঘোষণায় শরণখোলায় ২০ হাজার মানুষের মানবেতর জীবনযাপন

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ৭৩ শতাংশ বনকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। তবে এ ঘোষণা করা হয়েছে বনের ওপর নির্ভরশীল জেলে ও বাওয়ালদের পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা না করেই। এ অবস্থায় জীবিকার অভাবে গত ৩ মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে শরণখোলার অন্তত ২০ হাজার মানুষ। যাদের অধিকাংশই জেলে পরিবারের সদস্য।

শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদী ও খালের পাশে জেলেদের মাছ ধরার নৌকাগুলো পড়ে আছে। কোনো কোনো নৌকা রাস্তায় উঠিয়ে রাখা হয়েছে। এ সময় কথা হলে চরপাড়া গ্রামের জেলে আল আমিন বলেন, তিন মাস ধরে বনের মধ্যে নদীতে মাছ সংগ্রহ করতে যেতে পারছি না। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে চলছিলাম বেশ কিছুদিন। এখন দাদনও মিলছে না। এখন আমার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের চার সদস্য নিয়ে খুবই সমস্যায় আছি। কীভাবে দাদনের টাকা ফেরত দেব তাও বুঝতে পারছি না।

শরণখোলা চরপাড়া গ্রামের জেলে আল আমিন (৩৫) বলেন, পনের বছর বয়স থেকেই সুন্দরবন থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছি। গত ৩ মাস ধরে বনের মধ্যে মাছ সংগ্রহ করতে যেতে পারছি না। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে চলছিলাম বেশ কিছুদিন। আমার উপর নির্ভরশীর পরিবারের চার সদস্য নিয়ে এখন খুবই সমস্যায় আছি। খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় দাদন (মাছ প্রদানের জন্য অগ্রীম টাকা গ্রহন) হিসেবে নেয় ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা ফেরত নিতে প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছেন মহাজনেরা। কিভাবে টাকা ফেরত দিব তা ভেবে পাচ্ছি না।

জেলে মামুন আকন (৩২) বলেন, সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ৭৩ শতাংশ অঞ্চল অভয়ারণ্য ঘোষনার পর, ২৭ শতাংশ এলাকায় মাত্র ২‘শ থেকে ৩‘শ জন জেলে মাছ আহরণ করতে পারে। যার ফলে বেকার হয়ে পড়েছে অন্য জেলেরা। বর্তমানে সবাই অভাবের মধ্যে রয়েছে। অথচ চাঁদপাই রেঞ্জের মাত্র ১৮ শতাংশ এলাকাকে অভয়ারণ্য ঘোষনা করেছে বন বিভাগ। অভয়ারণ্য ঘোষণার পর বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে সপ্তাহখানেক দিনমজুরের কাজ করছিলাম। এক ছেলে এক মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে না পেরে আবার ফিরে এসেছি বাপের ভিটায়। অন্যান্য এলাকারমত শরণখোলা রেঞ্জের অভয়ারণ্যও কমিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

চালিতা বুনিয়া গ্রামের জেলে রেজাউল (৩৬) বলেন, সুন্দরবন থেকে মাছ সংগ্রহ করে ভালভাবে জীবন চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বনে যাওয়া বন্ধ হওয়ায় খুবই বিপদে পড়েছি। কোরবানির ঈদে ছেলে মেয়েকে মাংস কিনে খাওয়াতে পারিনি। মহাজনের কাছে ৮০ হাজার টাকা দেনা। সরকারের কাছে দাবি অভয়ারন্য কমিয়ে আমাদেরকে মাছ ধরার সুযোগ দেয়া হোক।

শরণখোলা বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী জালাল মোল্লা বলেন, মাছ আহরণের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে পাঠাতে গেলে দাদন দিতে হয়। ঐ দাদনের একটি অংশ পরিবারকে দিয়ে এবং বাকি অংশ জেলেরা সুন্দরবনে অবস্থানকালে ভোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করে নিয়ে যায়। এ অবস্থায় শতাধিক জেলের কাছে আমার প্রায় ২১ লক্ষ টাকা দাদন দেয়া রয়েছে। আমার কাছেও অন্য বড় বব্যসায়ীরা টাকা পাবে। গত তিন মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ। দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

সাউথখালী ইউপি সদস্য বাচ্চু মুন্সি বলেন, ৩ মাস ধরে স্থানীয় জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছে। নতুন কর্মসংস্থানের জন্য কেউ কেউ ইতোমধ্যে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জামিয়েছে। যারা আছে তারাও মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ অবস্থা থাকলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের জেলেদের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ বন্যপাণী সংরক্ষ আইন ১৯৭৪-এর ক্ষমতাবলে সুন্দরবন পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিন অঞ্চলের ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬‘শ ৯৯ হেক্টর বন এলাকাকে বন্যপ্রাণী অভায়রণ্য ঘোষনা করা হয়। এ অবস্থায় সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল অনেকে বেকার হয়ে পড়ে। এসব বেকারদেরকে পুনর্বাসনের জন্য ৪ শত ৬ টাকা ব্যয়ে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প আসছে। যার মধ্যে ৫ বছর মেয়াদী লাইভলিহুড ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামে ২ শত ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে বনজীবীদের পুনর্বাসনের জন্য। আসা করছি এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ণ হলে জেলেদের বেকার সমস্যা সমাধাণ হবে।

(এসএকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test