E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কেন্দুয়ায় স্কুলছাত্র জনিকে হত্যার পর গুম করতে বস্তাবন্দি লাশ পুকুরে

২০১৮ সেপ্টেম্বর ১৯ ১৮:৪৮:৩৩
কেন্দুয়ায় স্কুলছাত্র জনিকে হত্যার পর গুম করতে বস্তাবন্দি লাশ পুকুরে

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : চরম শত্রুতা সাধনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেই কেন্দুয়া গগডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র জনিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর গুম করার জন্য লাশ বস্তাবন্দি করে পুকুরে ফেলে রাখা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গগডা গ্রামের তমিজ উদ্দিন ফকিরের (তমু ফকির) ছেলে সবুজ মিয়া (৩০) এ চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করে। পরে আদালতে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকটও সবুজ মিয়া স্কুল ছাত্র জনির চাঞ্চল্যকর হত্যার তথ্য প্রদান করেছে।

জনি হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানা পুলিশের এস.আই সামেদুল হক বুধবার জানান, সবুজ মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তথ্যের সূত্র ধরে স্কুল ছাত্র জনির মা মেহেরা আক্তার এবং একই গ্রামের মৃত আবু ফকিরের ছেলে সনতু মিয়াকে (৪৫) মঙ্গলবার আটক করা হয়েছে। তাদের দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদের পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেড়িয়ে আসে।

বুধবার দুপুরে তাদেরকে নেত্রকোনা আদালতে পাঠানো হয়েছে। জনির মা মেহেরা ও তার সহযোগী সনতু মিয়াকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা।

চলতি বছরের গত ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালে নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় বলে প্রচার দেয় জনির মা মেহেরা আক্তার। নিখোঁজ সন্তানের সন্ধান পেতে জনির বাবা আব্দুস সোবহান ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে শনিবার সারাদিন এলাকায় মাইকে প্রচার করে। রোববার সকালে জনির বড় বোন রত্না আক্তার (১৬) তাদের বাড়ির সামনে আব্দুল বারেকের পুকুরে একটি চটের বস্তা ভেসে থাকতে দেখে বাড়ির লোকজনকে খবর দেয়। লোকজন বস্তাটিকে পাড়ে ভিড়াতে টান দেয়া মাত্রই বস্তার মুখ খুলে একটি মানুষের হাত বেড়িয়ে আসে।

এ ঘটনাটি পুলিশকে জানালে, নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়ার নেতৃত্বে ওই দিন দুপুরে আব্দুল বারেকের পুকুর থেকে একটি বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। লাশ দাফন কাফনের পর জনির বাবা আব্দুস সোবহান বাদী হয়ে ১১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কেন্দুয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় উল্লেখ করেন, একই গ্রামের মৃত শাহেদ বেপারীর ছেলে বাচ্চু, বাবুল, মাজু মুন্সি ও মৃত আরাফাত আলীর ছেলে রইছ উদ্দিন এবং সাইফ উদ্দিনের সঙ্গে জমি জমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের ঘটনায় তাদের সঙ্গে শত্রুতা চলে আসছিল। এই শত্রুতার ফলেই তারা জনিকে হত্যা করতে পারে বলে তার সন্দেহ।

পুলিশ বাবুল, বাচ্চু, মাজু মুন্সি, রইছ উদ্দিন, সাইফ উদ্দিনকে ও সবুজ মিয়াকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের পর ৫ জনকে ছেড়ে দিলেও সবুজ মিয়াকে আদালতে পাঠানো হয়। সবুজ মিয়া পুলিশের কাছে ও আদালতে স্কুল ছাত্র জনিকে হত্যার ঘটনার তথ্য প্রকাশ করে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চরম শত্রুতা সাধনের জন্যই জনিকে হত্যা করে তার লাশ বস্তাবন্দি করে পুকুরে ফেলে রাখা হয় বলে সে জানায়।

নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া বলেন, জনির মা মেহেরা এই হত্যাকন্ডের সঙ্গে জড়িত বলেই ধারনা করা হচ্ছে। তাকে এবং তার অপর সহযোগী সন্তু মিয়াকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। উল্লেখ্য আজ থেকে ১১ বছর আগে জনির জন্মের ১ দিন পর তার নিঃসন্তান চাচা আব্দুল ক্বারীর হাতে তাকে তুলে দেয়া হয়।

জনির বাবা আব্দুস সোবহান কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফরপুর ইউনিয়নের গগডা আটকান্দিয়া গ্রামে বসবাস করলেও জনির পালিত বাবা আব্দুল ক্বারী কেন্দুয়া পৌর এলাকার চন্দগাতী গ্রামে বসবাস করেন। জনির পালিত মা ঝরণা আক্তার তাকে সন্তান স্নেহে এতদিন লালন পালন করেন।

৬ মাস আগে তিনি জনিকে তার গর্ভধারিনী মা মেহেরা আক্তারের কাছে রেখে তিনি সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে চলে যান। পারিবারিক সূত্র জানায় মোবাইল ফোনে তিনি জনি হত্যার খবর পেয়ে দেশে ফিরছেন। আগামী ২/১ দিনের মধ্যেই তিনি তার নিজ বাড়িতে এসে তার ছেলে হত্যার বিচার দাবী করবেন বলেও জানাগেছে।

(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test