E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নেত্রকোনা-৩ : হেভি ওয়েট সম্ভাব্য দুই প্রার্থীর কার ভাগ্যে শিকে ছিড়বে ? 

২০১৮ সেপ্টেম্বর ১৯ ২২:২৪:২৮
নেত্রকোনা-৩ : হেভি ওয়েট সম্ভাব্য দুই প্রার্থীর কার ভাগ্যে শিকে ছিড়বে ? 

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ ছেড়ে সম্ভাব্য সব প্রার্থীরা এখন কেন্দ্রে মনোনয়ন দৌড়ে ব্যস্ত রয়েছেন। কেউই কারো থেকে কোন অবস্থাতেই চেষ্টা কম করছেন না। নিজ নিজ কৌশল অবলম্বন করে প্রত্যেকেই চাচ্ছেন আওয়ামীলীগের টিকিট আনতে। কিন্তু কার ভাগ্যে শিকে ছিড়বে এ নিয়ে এখনও কেউই নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলতে পারছেন না। তবে সব প্রার্থীই নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারন জনতাকেও আশ্বস্থ করছেন তিনিই পাবেন নৌকার টিকিট। এ ধুম্র জালের মধ্যেই অবস্থান করছেন নেতাকর্মী সমর্থক ও সাধারন জনগণও।

নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মী সমর্থক ও জনগনের বিচারে বিভিন্ন দিক বিশ্লেষন করে সম্ভাব্য দুই প্রার্থীকেই তারা হেভি ওয়েট প্রার্থী বলে দাবী করছেন। এদের মধ্যে একজন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ৯০’র গণ আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা অসীম কুমার উকিল, অপর জন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারীদের অন্যতম নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো: সাইদুর রহমান মানিক।

নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চুল ছেড়া বিশ্লেষনে বেড়িয়ে আসে, অসীম কুমার উকিল ছাত্রজীবন থেকেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান দিয়ে রাজপথ কাপিয়ে তুলেছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৯০’র এরশাদ বিরোধী গণআন্দোলনে নিজের জীবনকে বাজী রেখে আন্দোলন ছেড়ে যান নি। সে সময় বাংলাদেশের ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবীব এরশাদ সরকারের চাপের মুখে দলের পদ ছেড়ে চলে যান।

এর পর বিভিন্ন সময় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অসীম কুমার উকিল গ্রেফতার হয়েছেন, কারা বরণ করেছেন তবুও শেখ হাসিনা নেতৃত্ব ও দলকে ছেড়ে যেতে আপোস করেননি তিনি। রাজনীতির দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় একজন সৎ, আদর্শিক এবং বিজ্ঞান মনষ্ক নেতা হিসেবে সমাজে ও সারা দেশে তার একটা পরিচিতি আছে। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সঙ্গে এবারই তিনি জোরে সোরে নেত্রকোনা- ৩ আসন থেকে দলের মনোনয়ন চাইছেন এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মাঠে কাজ করছেন অনেক আগে থেকেই। তিনি শেখ হাসিনার অতি কাছের একজন কর্মী। তাছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসীম ও অপু উকিলের বিয়ের ঘটক ছিলেন বলে প্রচারনা আছে। সে হিসেবে তিনিও তার খুব কাছের মানুষ। নির্বাচনী মাঠে এবারতিনি মনোয়ন পাচ্ছেন এটা সবার মুখে মুখে আলোচনায় ফিরছে।

অপরদিকে মো: সাইদুর রহমান মানিক ১৯৭১ সনে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। নিজের জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করতে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে অনেক ঝুঁকি এসেছে তার জীবনে, তবু তিনি যুদ্ধ থেকে পিছপা হননি। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাংলার মাটিথেকে মুছে ফেলতে ১৭৭৫ সনের ১৫ আগস্ট কাল রাতে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রে বিপথগামী সেনাবাহীনির সদস্যরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ পরিবারের সব সদস্যদের নৃশংস ভাবে হত্যা করে। সেদিন রেহাই পায়নি ৮ বছরের শিশু শেখ রাসেলও। বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় আজ আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন তারা। সেদিন জীবনের কথা চিন্তা না করে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সকালে কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী হিসেবে যে কয়জন মিলে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন এর মধ্যে মো: সাইদুর রহমান মানিক অন্যতম। সে সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করা কতযে কঠিন ছিল তা দেশের সব মানুষেই জানেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ করার অপরাধে মো: সাইদুর রহমান মানিক দীর্ঘ ৭ বছর ছদ্মবেশ ধারন করে জীবন যাপন করতে হয়েছে ঢাকা সহ সারা দেশে। এই কঠিন অধ্যায় পার করে তিনি ঢাকায় আইন পেশায় জড়িত হন। একই সঙ্গে চলচ্চিত্র প্রযোজকেরও দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আইনজীবী সংগঠনের ঢাকা আইনজীবী সতিমির সরাসরি ভোটে অংশ নিয়ে সভাপতি হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন। আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনার মনোনিত প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বিপুল ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এডভোকেট মো: আব্দুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে গিয়ে বিজয়ের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

তিনি ঢাকা বারের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সারা দেশের আইনজীবীদের মধ্যে তার নাম সফলতার সঙ্গে ছড়িয়ে পরে। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকারের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে বিপুল পরিমান উন্নয়নমূলক কাজ করেন তিনি। যার ফলে ঢাকাস্থ কেন্দুয়া সমিতির আয়োজনে তাকে দেয়া হয় ঢাকায় বিশাল সংবর্ধনা। সেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রী এডভোকেট মো: কামরুল ইসলাম। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। এছাড়া বর্তমানে তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ আইনজীবী কল্যান পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সব দিক বিবেচনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এডভোকেট মো: আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ ও সম্পর্ক রয়েছে।

এলাকার মানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে এবং উপর মহলের নির্দেশে তিনি এক বছর আগে নেত্রকোনা- ৩ আসনের আওয়ামলীগের একজন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষনা দিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এই এক বছরেই তিনি কেন্দুয়া ও আটপাড়া উপজেলার দলের নেতাকর্মী সমর্থক ও সাধারন কৃষক শ্রমিক জনাতার মাঝেও একটি আস্তার জায়গা দখল করতে পেরেছেন। নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে সাইদুর রহমান মানিকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেন্দুয়া ও আটপাড়া উপজেলায় ৫ শতাধিক মোটর সাইকেল বহর নিয়ে একটি স্মরকালের আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে সকলের মুখে মুখে সাইদুর রহমান মানিক আলোচনায় উঠে এসেছেন।

কেন্দুয়া উপজেলা কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক রাণা আহম্মেদ খান পাঠান (মামুন) ও বলাইশিমুল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আতিকুর রহমান তালুকদার চুন্নু বলেন, নেতাকর্মী সমর্থক ও জনতার নিখুঁত বিচার বিশ্লেষনে নেত্রকোনা- ৩ আসনে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য এই দুই প্রার্থীই হেভি ওয়েট প্রার্থী বলে সবার মুখে মুখে আলোচনায় আছেন।

এখন মনোনয়ন কার ভাগ্যে জুটে তা এই মুহুর্তে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তবে প্রার্থী হিসেবে এ দুজনই হেভি ওয়েট। মনোনয়ন পেয়ে এম.পি নির্বাচিত হলে দুজনের গাড়িতেই উড়তে পারে পতাকা। এক কথায় তাঁরা দুজনের মধ্যে যে কেউই একজন এম.পি হন, মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা দুজনেরই অনেক বেশি।

(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test