E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উজিরপুরে ইউপি চেয়ারম্যান নান্টু হত্যার বিচারের দাবিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

২০১৮ সেপ্টেম্বর ২২ ১৮:৫৪:২০
উজিরপুরে ইউপি চেয়ারম্যান নান্টু হত্যার বিচারের দাবিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুকে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে ওই হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫জনকে আটক করেছে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে বিপুল সংখ্যক আইন শৃংখলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকারীদের কঠোর বিচারের আশ্বাস দিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি।

এদিকে চেয়ারম্যান নান্টু হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার জনতা উজিরপুরের কারফা বাজারের জল্লা গ্রামের সেকেন্দার সরদারের ছেলে সোহাগ সরদারের রড, সিমেন্ট ও গ্যাসের দোকান সরদার ট্রেডার্সসহ ৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এসময় কারফা বাজার সংলগ্ন সোহাগ সরদারের একটি তিন তলা ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়।

খবর পেয়ে বরিশাল এবং উজিরপুর থেকে ফায়ার সার্ভিস এবং গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থলে যেতে চাইলেও স্থানীয় বিক্ষুব্ধদের সড়ক অবরোধ করে বাধার মুখে তারা ঘটনাস্থলে যেতে না পেরে অসহায় অবস্থায় ক্ষয়ক্ষতি দেখেছেন। সাংবাদিকরাও কোন ছবি তুলতে বা ভিডিও ধারন করতে পারেনি। ছুবি তুলতে গিয়ে এক সাংবাদিক বিক্ষুব্ধদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন।

বিক্ষুব্ধরা পথিমধ্যে বাধা দিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি গাড়ি ভাংচুর করে। নান্টু হত্যায় আওয়ামী লীগ দলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস এমপি’র ব্যক্তিগত সহকারী মো. সাঈদ জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

সাঈদসহ হত্যাকারীদের ফাসির দাবিতে গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ। তারা এমপি’র ব্যক্তিগত সহকারী সাঈদসহ অন্যান্যদের কঠোর বিচার দাবী করেন। যে কোন অনাকাংখিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওই এলাকায় অতিরিক্ত র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

অপরদিকে বরিশাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শনিবার দুপুর সোয়া দুই টায় নান্টুর লাশ জল্লা ইউয়িন আইডিয়াল কলেজ মাঠে পৌছলে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ শোকার্ত জনগন তাদের প্রিয় চেয়ারম্যান নান্টুকে এক নজর দেখার জন্য সেখানে ছুটে যান।

খবর পেয়ে দলীয় চেয়ারম্যান নকটুকে দেখতে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি।

এ সময় বিক্ষুব্ধরা স্থানীয় এমপি তালুকদার মো. ইউনুসের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. সাঈদের কঠোর বিচার দাবীতে মুর্হূমুর্হূ শ্লোগান দেন। স্থানীয় এমপি ইউনুস ওই এলাকায় যাওয়ার পথে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের খবর পেয়ে জনরোষের কারনে নির্বাচনী এলাকা থেকে ফিরে যান।
এসময় বিক্ষুব্ধ হাজারো জনতা এমপি হাসানাতকে ঘিরে ধরে চেয়ারম্যান নান্টু হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ প্রকাশ করে। হত্যাকারীদের দৃষ্ঠান্ত মুলক শাস্তির আশ্বাস প্রদান করেন এমপি আবুল হানানাত আবদুল্লাহ।

এদিকে নান্টুর লাশ তার গ্রামের বাড়ি বিলগাববাড়ি পৌছলে শনিবার সন্ধ্যায় পারিবারিক শ্মশানে তার অন্তোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী নান্টুর সামনের দোকানের ঔষধ ব্যবসায়ি বিনোদ বিহারী সমদ্দার জানান, শুক্রবার রাত পৌনে নয়টা। আগের দিন থেকে এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিলনা। কারফা বাজারে নিজের কাপড়ের দোকানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু বসেছিলেন সেখানে ৩০-৩৫ বছরের অজ্ঞাত এক ব্যাক্তি তার দোকানে ঢুকে খুব কাছ খেকে লক্ষ্য করে নান্টুকে একটি গুলি করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই ব্যাক্তি পরপর আরও তিনটি গুলি করে নান্টুকে। এসময় নান্টুর ভাগ্নে নিহার হালদার দুবিৃত্তকে লক্ষ করে একটি চেয়ার ছুড়ে মারলে ওই দুর্বিত্ত তাকেও গুলি করে। এর পর ওই দুর্বিত্ত দোকানের বাইরে রেড়িয়ে দুটি ফাঁকা গুলি করে আতংক সৃষ্টি করে আগে থেকে পাতানো মোটরসাইকেলে কারফা বাজার থেকে পূর্ব দিকে ধামুরা রোডে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, কাছ থেকে গুলি করলেও তাতে তেমন শব্দ ছিল না। হয়ত হত্যাকারী আগ্নেয়াস্ত্রে সাইলেন্সার লাগানো ছিল ! তার ধারণা হত্যাকারীরা অনেক একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে এই হত্যাকান্ড চালায়। এর আগে তারা পুরো বাজার রেকি করে। কারণ বাজারে অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের আনাগোনা ছিল দু’দিন আগে থেকেই। তাদের দলে আরও লোক না থাকলে একা ওই হত্যাকারী পালিয়ে যেতে পারত না। স্থানয়িরা এগিয়ে এসে নান্টুকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক নান্টুকে মৃত ঘোষণা করে। এর পরই বিক্ষোভে ফেটে পরে তার নির্বাচণী এলাকার সাধারণ জনগন।

প্রত্যক্ষদর্শী বিনোদ বিহারী আরও বলেন, তিনি বাজারের দক্ষিণ পাশে সোহাগ সরদারের তিন তলা বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ওই বাড়িতে আরও পাঁচটি হিন্দু পরিবার ও একটি এনজিও অফিস রয়েছে। শনিবার সকালে ওই বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় বিক্ষুব্ধরা সোহাগের তিন তলা ভবনে হামলা চালিয়ে ভাংচুর চালায়। এসময় তার দোকান থেকে গ্যাসের সিলিন্ডার এনে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। তিনিসহ অপর এজন ওই ভবনে আটকা পরেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসেন। বাজারের পূর্ব, দক্ষিণ, ও উত্তর পাশে বিক্ষুব্ধরা ব্যারিকেট সৃষ্টি করে হামলা, অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট চালায়। বেরিকেটের বাইরে পুলিশের অবস্থান থাকলেও তাদের কিছুই করার ছিল না।

দলীয় অভ্যন্তরীন দ্বন্ধের কারনে নান্টু হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে দাবী করে এ ঘটনায় মামলা দায়েরসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test