E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মহম্মদপুরে ছাত্রলীগের সভাপতির সংসার চলে চা বিক্রির টাকায়

২০১৮ সেপ্টেম্বর ২৫ ১৬:০৩:৪৮
মহম্মদপুরে ছাত্রলীগের সভাপতির সংসার চলে চা বিক্রির টাকায়

দীপক চক্রবর্তী, মাগুরা : সারাদিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে দিনের শেষে মজুরী মিলতো ৩শ টাকা। তাও আবার ইট টানা, পানি টানা, বালি, সিমেন্ট, খোয়া মিশিছে কখনও ২য় তলা আবার কখনও ৩য় তলায় নিয়ে রাজমিস্ত্রীর জোগান দিয়ে সন্ধ্যায় চাল ডাল কিনে বাড়ি ফিরতে হতো। সারাদিন কাজ করে তিন’শ টাকা মাইনে পেয়ে ৫ সদস্যের পরিবারের সংসার চলতো না কামরুলের। 

বছর দুয়েক আগে এনজিও থেকে লোন নিয়ে উপজেলা শহরের খাদ্য গুদামের পাশে চায়ের দোকান শুরু করেন। সাথে বিস্কুট, কলাসহ মুদি সামগ্রী বিক্রি করে যা উপার্জন হত তা দিয়ে কিছুদিন বেশ ভালই চলছিল কামরুলের সংসার। কিন্তু এনজিও’র কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সম্প্রতি দোকানের বেহাল অবস্থা। ছয়মাস ব্যবসা চালাতে চায়ের দোকানেই বাকি পড়ে ষাট হাজার টাকা। টাকা চায়তে গেলে অধিকাংশ সময় দেনাদারের ধমক খেয়ে ধমক খেয়ে ফিরে আসতে হয় তাকে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আজ সোমবার চায়ের পাতি কিনতে না পেরে দোকান খুলতে পারেননি তিনি। সরজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায় একজন এনজিও কর্মী কিন্তির টাকা নিতে দাড়িয়ে আছেন দোকানের সামনে।

অবশেষে তার বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ বৃদ্ধ পিতার কাছ থেকে জানা যায়, এনজিও’র কিস্তির টাকা যোগাড় করতে না পেরে ভয়ে আজ দোকান না খুলে শ্রমীকের কাজে গেছেন। চা বিক্রেতা কামরুল হাসানের বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামে।

কামরুল হাসান ২০০২ সালে এসএসসি পাশ করে মহম্মদপুর আমিনুর রহমান কলেজে ভর্তি হয়। এসময় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। তার রাজনৈতিক দুরদর্শীতা ও সাহসীকতা দেখে দলীয় নেতৃবৃন্দ ২০০৪ সালে মহম্মদপুর আমিনুর রহমান কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মনোনিত করেন। তখন ক্ষমতায় বিএনপি সরকার। ছাত্রলীগের সভাপতি মনোনিত হওয়ার পর বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন তিনি।

২০০৫ সালে এইসএসসি পাস করেন। ২০০৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর তার খরব কেউ নেয়নি আর। সংসারের অভাব-অনাটনের কারনে আর লেখাপড়া আর করতে না পেরে সংসারের অভাব মোচন করতে চাকরির জন্য অনেক নেতার পেছনে ধরণা ধরেছেন কিন্তু অর্থ এবং তদবিরের অভাবে সোনার হরিণ নামের চাকরি ভাগ্যে জোটেনি তার। পরে তিনি নিজের স্ত্রীর চাকরির জন্যেও অনেক চেষ্টা করেও চাকরি মেলাতে পারেনি। তার স্ত্রী রেহেনা বেগমও এইসএসসি পাস। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান।

উপায়ন্তর না পেয়ে কামরুল পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে শ্রমীকের কাজ শুরু করেন। সেখানে তার উপার্জন দিয়ে সংসার চালাতে ব্যর্থ হয়ে বর্তমানে তিনি চা বিক্রি করে সংগ্রামের মধ্যেই প্রবাহিত করছেন নিজের জীবন। কিন্তু ছাত্র জীবনের সেই সেই রাজনৈতিক সংগ্রাম আর বর্তমান সময়ের জীবন সংগ্রামের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। মধুমতি নদীর করাল গ্রাসে স্বর্বস্ব হারানো তার পরিবারটি এখন নদীতীরবর্তী এলাকায় চার শতাংশ জমির উপর তার বসবাস।

এছাড়া আর কোন জমিজমা নেই তার। অসুস্থ বাবা মুসা মিয়া শয্যাশায়ী, মা জবেদা বয়সের ভাবে মুহ্যমান। স্ত্রী রেহেনা গৃহস্থালির কাজকর্ম করেন। তাদের ঘরে ৮ বছরের রোমান নামের শারিরীক প্রতিবন্ধী অসুস্থ একটি সন্তান। তার চিকিৎসা দিতে মাসে খরচ হয় দুই হাজার টাকার বেশী। সব মিলিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সংগ্রামী সেই ছাত্রনেতা কামরুল এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

ছাত্র জীবনে দলীয় নেতৃবৃন্দ যাকে এক সময় আন্দোলন সংগ্রাম এবং দলীয় কর্মকান্ডে ব্যবহার করেছেন সেই নেতাদের এখন গাড়ি-বাড়ি বিস্তর আধিপত্য কিন্তু সংগ্রামী সেই ছাত্র নেতা কামরুল হাসানের জীবন এখন বিভিষিকাময় অন্ধকার। অর্থাভাবে তিনি পারছেন না অসুস্থ পিতা এবং প্রতিবন্ধি সন্তানের চিকিৎসা খরচ চালাতে।

কামরুলের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার স্বপ্নের কথা, তার ইচ্ছের কথা। তার ইচ্ছে ছিলো লেখা-পড়া শেষ করে চাকরি করে সংসারের অভাব মোচন করবে। কিন্ত তার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়। পরিশেষে বেলোয়ারি কাঁচের চুড়ির মত ভেঙ্গে যায় তার লালিত সেই মধুর স্বপ্ন গুলো।

অশ্রুভেজা চোঁখে তিনি বলেন, টাকার অভাবে চায়ের দোকানটি ও এখন চালাতে পারছেন না। অন্যদিকে এনজিও থেকে লোন নিয়ে দোাকনটি শুরু করেছিলেন তিনি। দোকানে মালামাল না থাকায় আগের মত বেচা-বিক্রিও নেই। তাই এনজিও’র কিস্তির টাকা সংগ্রহ করতে না পারায় তাদের ভয়ে আজ দোকান খোলেননি। বাধ্য হয়ে তিনি নির্মাণ শ্রমীকের কাজে আজ যোগ দিয়েছেন তিনি।

তার অভিযোগ প্রায় একযুগ ধরে চরম দুরাবস্থার মধ্যে থাকলেও কখনো কোন নেতা তার পাশে এসে দাড়ায়নি। সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি কেউ। বরং অনেক সময় নেতারা তার দোকান থেকে চা খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে গেছেন এমন অভিযোগও বেরিয়ে আসে ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুলের মুখ দিযে।

মহম্মদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মামুনুর রশীদ বিপ্লব বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল কখনো কোনো বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসেননি। তবে আমার শ্রীঘ্রই মিটিং ডেকে তার জন্য কিছু করার চেষ্টা করবো। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, আমি তার দুরাবস্থার খবর জানতে পেরেছি। এতদিন দলীয়ভাবে তার জন্য কিছু করা উচিৎ ছিল । তা যখন হয়নি তবে দলীয়ভাবে মতবিনিময় করে আমরা দ্রুত তার জন্য কিছু করার উদ্যোগ গ্রহণ করব।

(ডিসিপি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test