E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কেন্দুয়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে কেঁচো সার

২০১৮ সেপ্টেম্বর ২৫ ১৯:০৪:৪২
কেন্দুয়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে কেঁচো সার

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার সর্বত্র দিন দিনই জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে এসব কেঁচো সার উৎপাদন করছে। সার উৎপাদনে আগ্রহও বাড়চ্ছে। তবে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছে কৃষি বিভাগ। 

কৃষি বিভাগ জানায়, জৈব পদার্থ মাটির প্রাণ বা হৃদপিন্ড। মাটির স্বাস্থ্য সুস্থ্য ও সবল রাখার জন্য জৈব পদার্থের প্রয়োজন। ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি অতিমাত্রায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার অবিবেচকের মতো বালাই নাশক মাত্রা অতিরিক্ত আগাছা নাশক ও বিভিন্ন কৃত্রিম হরমোন ব্যবহারের ফলে প্রতি নিয়তই মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে ও জৈব পদার্থের পরিমান কমে যাচ্ছে। মাটির ভারসাম্য রক্ষায় এবং জমিতে ভালো ফলন উৎপাদনের জন্য জৈব সারের কোন বিকল্প নেই বলে দাবী করে কৃষি বিভাগ।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় দলপা ইউনিয়নের বেখৈরহাটি ব্লকে ৩ জন কৃষক কৃষানী ২০১৭ সালে জানুয়ারী মাসে তাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্ঠায় ভার্মি কম্পোষ্ট কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করে। বেখৈরহাটি ব্লকের ৬টি গ্রামে বর্তমানে ১০০ জনের উপরে কৃষাক কৃষানী কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজেরা জমিতে ব্যবহার করছে। তাছাড়া অতিরিক্ত সার বাজারে বিক্রি করে আর্থিক ভাবেও লাভবান হচ্ছেন তারা।

এই ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আখছার খান জানান, কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করে একদিকে যেমন নিজেদের জমিতে প্রয়োগ করছে, অপর দিকে বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবানও হচ্ছেন তারা। তাদেরকে কেঁচো সার উৎপাদনে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি আমরা। তিনি বলেন, অসুস্থ মানুষ যেমন ঠিকমত কাজ করতে পারেন না, তেমনি অসুস্থ মাটিতেও সঠিক ভাবে ফলন উৎপাদন অসম্ভব হয়ে ওঠে। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জৈব সারের কোন বিকল্প নেই। এই জৈবসারের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কেঁচো কম্পোস্ট গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই সার প্রয়োগের ফলে মাটির স্বাস্থ্য ভাল রাখে, মাটির উর্বরতা ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া সাধারন কম্পেস্টের চেয়ে কেঁচোর মলে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের পরিমান বেশি থাকে। এই ক্ষুদ্র প্রয়াস মাঠ পর্যায়ের কৃষক তথা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও মাটির উর্বরতার শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়ে স্বার্থক ভূমিকা পালন করে কেঁচো সার।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চন্দন কুমার মহাপাত্র জানান, কেন্দুয়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের সবখানেই ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদনে কৃষক কৃষানীদের প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। এই প্রশিক্ষন গ্রহণ করে তারা নিজেরাই কেঁচো সার উৎপাদনে খুব আগ্রহী হচ্ছে। কেঁচো সার সব ধরনের ফসলেই ব্যবহার করা যায়। ধান, গম, পাট, আলু, কচু, পেয়াজ, মরিচ, হলুদ, শাক-সবজি, ভূট্টা, ফলদ, বনজ বৃক্ষ, কলা, পেঁপে, লাউ, কুমড়া, চিচিংগা, শসা, ঝিঙা, কড়লা, শীম, পটল, কাকরোল, পানের বরজ ও মৌসুমি ফুল উৎপাদনেও কেঁচো সার ব্যবহার করা যায়।

তিনি বলেন, এই সার প্রয়োগের ফলে মাটিতে জৈব উৎপাদন বৃদ্ধি করে, মাটির পানির ধারন ক্ষমতা বাড়ায়, মাটিতে বাতাস চলাচল বৃদ্ধি করে, মাটির বুনট উন্নত করে, উদ্ভিদের শিকর বিস্তার সহজতর হয়, উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান, রাসায়নিক সারের পরিপূরক হিসেবে ফসল উৎপাদনে খরচ কমায়। জৈব সার কৃষি বিস্তারকে উৎসাহিত করে ফসলের উৎপাদন বাড়ায় এবং উদ্ভিদের অত্যাবশকীয় পুষ্টি উপাদানের প্রায় প্রত্যেকটি জৈব সারে বিদ্যমান থাকে। এই সার বিভিন্ন মাছের পুকুর ও চিংড়ির ঘেরে খাবার তৈরিতে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি মাটির সুস্থ্যতা রক্ষায় সব কৃষকদের কেঁচো সার উৎপাদনের জন্য আহবান জানান।

বেখৈরহাটি বাজারের ব্যবসায়ী কেঁচো সার ক্রয় ও বিক্রেতা মো: রাকি এমরান জানান, এই সার উৎপাদন করে নিজের জমিতে ব্যবহার করে যাচ্ছি, একই সঙ্গে বিক্রি করে আর্থিক ভাবেও লাভবান হচ্ছি। রাকি এমরান আরো বলেন, প্রথমে আমরা দুই তিনজন শুরু করেছিলাম এখন আমাদের দেখা দেখি বেখৈরহাটি এলাকায় প্রায় ১ শ ৫০ জন কৃষক জৈব সার বা কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজেদের জমিতেও ব্যবহার করছে আবার ১০ টাকা কেজি বিক্রি করে আর্থিক ভাবেও লাভবান হচ্ছে। খুব কম খরচেই এই সার উৎপাদন করা যায় বলে দাবী করেন।

(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test