E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় মন্দিরের তালা ভেঙে সাতটি মূর্তিতে অগ্নিসংযোগ, পিতলের মুর্তি চুরি

২০১৮ সেপ্টেম্বর ২৯ ১৬:১২:০৯
সাতক্ষীরায় মন্দিরের তালা ভেঙে সাতটি মূর্তিতে অগ্নিসংযোগ, পিতলের মুর্তি চুরি

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দুর্বৃত্তরা মন্দিরের তালা ভেঙে সাতটি মূর্তিতে আগুণ ধরিয়ে দিয়েছে। এ সময় তারা চুরি করে নিয়ে গেছে একটি পিতলের গোপাল মুর্তি। শুক্রবার রাতে সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙা ইউনিয়নের ওয়ারিয়া গ্রামের রাধা গোবিন্দ মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ওয়ারিয়া রাধা গোবিন্দ মন্দিরের পুজারী অবারিত দাস মোহন্ত জানান, পুজা অর্চনা শেষে শুক্রবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে তিনি মন্দিরের দরজায় তালা লাগিয়ে বাসায় ঘুমোতে যান।

অপর এক পুজারী রঞ্জন কুমার পাল বলেন, শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তিনি পুজা দেওয়ার জন্য মন্দিরের সামনে এসে দরজার তালা ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান। পরে মন্দিরে ভিতরের দরজা খোলা অবস্থায় দেখেন। তারপর ভিতরে ঢুকে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব, সুভদ্রা, বলরাম, রাধা, কৃষ্ণসহ সাতটি মুর্তির পরিহিত বসন আগুনে পোড়ানো অবস্থায় দেখে মন্দির কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করেন। মন্দিরের ভিতরে পিতলের নির্মিত গোপাল মুর্তিটি চুরি করে নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি। প্রতিমার আশে পাশে দেশলাই এর কয়েকটি পোড়া কাটি দেখে ধারনা করেন যে, কোন প্রকার দাহ্য পদার্থ ছাড়াই প্রতিমাগুলোর পরিহিত বসনে আগুন দেওয়া হয়েছে।

ওয়ারিয়া সার্বজনীন রাধা গোবিন্দ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহন কুমার ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ পাল জানান, ১৯৯২ সালের ৭মে ১০ শতক জমির উপর এ মন্দির নির্মিত হয়। সেখান থেকে যথারীতি এখানে পুজা অর্চনা হয়ে আসছে। শুক্রবার রাতে মুর্তিতে কে বা কাহারা আগুন দিয়েছে এটা জানা যায়নি। এ ঘটনায় পুজারী রঞ্জন পাল বাদি হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় থানায় মামলা করবেন।

সরেজমিনে শনিবার সকালে ওয়ারিয়া রাধা গোবিন্দ মন্দিরে যেয়ে দেখা গেছে মন্দিরের ভিতরের পরিহিত কাপড় একেবারেই পুড়ে যাওয়ায় বিকৃত হয়ে গেছে ছয়টি মুর্তি। একটি মুর্তির আংশিক কাপড় পুড়ে গেছে। মুর্তির পাশেই পড়ে আছে কয়েকটি দেশলাই এর জ্বালানো কাঠি। মন্দিরের পাশে তিন সপ্তাহ আগে নির্মিত য়েছে সাতক্ষীরা ফুড নামের একটি বেকারী। মালিক শামীম হোসেন বেকারীর ব্রয়ললার মন্দিরে সামনেই নির্মান করার সময় নির্মল ঘোষ ও পরিমল ঘোষের ভাড়াটিয়া পুরোহিত অশোক চক্রবর্তীর সঙ্গে বচসা হয় বেকারীতে ব্যবহৃত ডিমের খোলা ফেলা নিয়ে।

এক সপ্তাহ আগে আশোক চক্রবর্তী বাড়িতে চলে যাওয়ায় তারই ভাড়া নেওয়ার ঘরের একটি বেকারী মালিক ভাড়া নিয়ে মন্দিরের সামনে কর্মচারিদের রান্না করার জন্য ব্যবহার করছেন। সেখানে রান্নার জন্য এক নারী চার দিন আগে থেকে কাজ করছেন। শুক্রবার রাতে ওই বেকারীতে নৈশ প্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন কলারোয়া উপজেলার বুইমা গ্রামের সবুজ হোসেন ও সাতক্ষীরা সদরের কামারবায়সা গ্রামের জাকির হোসেন। তবে ভোর চারটার দিকে কাজ শেষে চলে যাওয়া সবুজ হোসেন বলেন, তিনি আগুন লাগার ব্যাপারে কিছুই জানেন না।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকেলে মহাপুলিশ পরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী সাতক্ষীরা ছেড়েছেন। তিনি সাতক্ষীরায় অবস্থান করাকালে ওয়ারিয়া থেকে এক কিলোমিটার দূরে তুজুলপুর সার্কাসের আড়ালে রমরমা জুয়া চলেছে। শনিবারও চলবে। জুয়ায় সাধারণ মানুষ আসে না। সার্কাসের নামে অনুমোদনবিহীন জুয়ার আসর চালাতে দিয়ে স্থানঅয় কৃষি ক্লাবের সভাপতি ইয়ারব হোসেন সমাজ বিরোধী ও অসামাজিক লোকজন সেখানে জমায়েত হওয়ার সুৃোগ দিয়েছেন। পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে জানিয়েও কোন লাভ না হওয়ায় বুধবার রাতে স্থানীয়রা জুয়ার বোর্ড ভেঙে দিলেও পুলিশ পাহারায় বৃহষ্পতিবার থেকে আবারো শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে দুর্বৃত্তরা মন্দির ভেঙে মুর্তিতে আগুন দিলে দায়ভার নেবে কে?

সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। শনিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত এ নিয়েথানায় কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।

তবে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান পুলিশ পাহারায় জুয়া চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ইয়ারবকে বারবার বলার পরও তিনি কোন কথা রাখছেন না।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test