E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে নিহত দুই নেতার জানাযায় জনরোষে এমপি মোজাম্মেল, জুতা নিক্ষেপ

২০১৮ অক্টোবর ০২ ২১:২৫:৪৭
বাগেরহাটে নিহত দুই নেতার জানাযায় জনরোষে এমপি মোজাম্মেল, জুতা নিক্ষেপ

বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি  : বাগেরহাটের উপজেলার দৈবজ্ঞহাটীতে দলীয় কোন্দলে নিহত দুই নেতার নামাজে জানাযায় এসে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ কয়েক হাজার মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়েন বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় এমপি ডা. মোজাম্মেল হেসেন।

জানাজা শুরুর পূবৃ মুর্হুতে এমপি ডা. মোজাম্মেল উপস্থিত হয়ে মাইকে কিছু বলতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ কয়েক হাজার মানুষ তাকে চলে যেতে বলে। এরপরও এমপি ডা. মোজাম্মেল কথা বলার চেষ্টা করলে তাকে উদ্দ্যেশ করে শত-শত জুতা-স্যানন্ডেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগসহ পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করলে এমপি ডা. মোজাম্মেল দিকে তেড়ে আসতে থাকে জনশ্রোত। তখন পুলিশ দ্রুত কর্ডন করে এমপিকে উদ্ধার করে নিরাপদে দৈবজ্ঞহাটী সেলিমাবাদ কলেজ মাঠের বাইরে নিয়ে আসেন। পরে এমপি ডা. মোজ্জাম্মেল হোসেন দুই নেতার জানাযা না পড়েই বাগেরহাট ফিরে যান। নিহত দুই নেতাকে সন্ধ্যায় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটীতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আনসার আলী দিহিদার ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য শেখ শুকুর আলী সোমবার বিকালে দৈবজ্ঞহাটীতে দলীয় প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হন। এঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এমপি মোজ্জামেল গ্রুপের নেতা দৈবজ্ঞহাটী ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফকিরসহ ৪ জনতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ৩টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করে। এই দুই নেতাকে হত্যার পর থেকে এলাকা উত্তাল হয়ে ওঠে।

এদিকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটীতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আনসার আলী দিহিদার ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য শেখ শুকুর আলীকে ধরে নিয়ে ‘বোরখা পরিয়ে’ হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ ক্ষুব্দ এলাকাবাসি দৈবজ্ঞহাটি বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সোমবার বিকালে দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়ন পরিষদ চত্তরে এই হত্যাকান্ডের পর এখনো থানায় কোন মামলা হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতা আনছার আলী দিহিদারসহ ২ নেতাকে হত্যার ঘটনার পর দৈবজ্ঞহাটি বাজার এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনার পর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে নিহত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আনছার আলী দিহিদারের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দলীয় কর্মী শুকুর শেখের ময়না তদন্ত বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। নিহত যুবলীগ নেতা শুকুর শেখের শরীরে বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের কোপ ছাড়াও পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ময়না তদন্তকারী মেডিকেল বোর্ড। দৈবজ্ঞহাটী সেলিমাবাদ কলেজ মাঠে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহত দুই নেতার নামাজে জানাজায় কয়েক হাজার মানুষ আংশ নেন। নামাজে জানাজার শুরুতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাগেরহাট- ৪ ( মোড়েলগঞ্জ-শরনখোলা) আসনের আওয়ামী লীগের মনোয়ন প্রত্যাশী এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ এই দুই নেতার হত্যাকান্ডে জড়িত সকল সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আশ্বাস দেন।

এদিকে, পুলিশ মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ‘শহিদুল বাহিনী’র প্রধান দৈবজ্ঞহাটী ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম ফকির, ওই বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডার আবুয়াল হোসেন ফকির, আবুল শেখ ও জুলহাস ডাকুয়া নামে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। তদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৮ রাউন্ড গুলি ও ১টি হাত কুড়াল উদ্ধার করেছে। দৈবজ্ঞহাটী ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুলের নেতৃত্ব তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা ঔ সময়ে দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়ন তাঁতীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক বাবুল শেখ (৪২) ও নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আনসার আলীর বাড়ী ভাংচুরসহ তার স্ত্রী মঞ্জু বেগমকে (৪৫) কুপিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মঞ্জু বেগম ও বাবুল শেখের অবস্থা এখনো আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসরা।

পুলিশ অভিযান গ্রেফতারকৃত ৪জনের কাছ থেকে উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ২ রাইন্ড গুলি ভর্তি ১টি রিভলবার, ৩ রাউন্ড বন্দুকের গুলিসহ ১টি ওয়ান সুটারগান ও গ্রেফতারকৃত ইউপি চেয়ারম্যানের লাইসেন্সকৃত ১টি সর্টগান ও ৩ রাউন্ড বন্দুকের গুলি। এঘটনায় জড়িত অন্য ঘাতকদের গ্রেফতারের পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে বলে জেলা পুীলশ নিশ্চিত করেছে। দুপুরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নিহত দৈবজ্ঞহাটীতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আনসার আলী দিহিদারের লাশে ময়না তদন্ত মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সদস্য শেখ শুকুর আলীর লাশের ময়না তদন্ত বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. মশিউর রহমান জানান, তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড নিহত শুকুর শেখের ময়না তদন্ত করে। নিহতের পিঠে পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। যার মধ্যে তিনটি পিঠ থেকে ঢুকে সামনের পেট দিয়ে বের হয়েছে। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন রয়েছে। দৈবজ্ঞহাটী সেলিমাবাদ কলেজ মাঠে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহত দুই নেতার নামাজে জানাজা শেষে আনসার আলী দিহিদারকে দৈবজ্ঞহাটী ও শুকুর শেখের লাশ জোকা গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় হতাহতরা সবাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাগেরহাট- ৪ ( মোড়েলগঞ্জ-শরনখোলা) আসনের আওয়ামী লীগের মনোয়ন প্রত্যাশী এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের সমর্থক এবং আওয়ামী লীগ দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকিরসহ গ্রেফতারকৃতরা এই আসনের বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেনের অনুসারি বলে এলাকায় পরিচিত।

হামলায় আহত দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন তাঁতীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক বাবলু শেখ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, দৈবজ্ঞহাটি ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুলের সাথে স্থানীয়ভাবে আমাদের রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধের জেরে সোমবার বিকেলে চেয়ারম্যান ফকির শহীদুল ইসলামের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা বাজার থেকে আমাদের জোর করে ইউনিয়ন পরিষদে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমাদের সবাইকে বোরকা পরায়। পরে আমাদের সবাইকে পরিষদ থেকে বাইরে নিয়ে এসে চেয়ারম্যান শহীদুল চিৎকার করে বলতে থাকে আমরা তাকে হত্যা করতে এসেছি। এসময় তার ক্যাডার বাহিনী ধারালো অস্ত্র ও লাঠিেিসটা নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় জানান, সোমবার বিকালে দৈজ্ঞহাটি ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ফকিরকে হত্যার প্রচেষ্টার একটা মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে দেয়। এরপর ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আওয়ামী লীগ নেতা আনছার আলী দিহিদার, যুবলীগ সদস্য শুকুর শেখ ও তাঁতী লীগ নেতা বাবুল শেখকে ইউনিয়ন পরিষদে ধরে এনে কুপিয়ে-পিটিয়ে ও গুলি করে গুরুতর আহত করে।

আহতদের মধ্যে আনছার আলীকে খুলনা মেডিকেলে ও শুকুর শেখকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। আওয়ামী লীগের এই দুই নেতা হত্যার ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুলসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এঘটনার সাথে জড়িত অন্য সন্ত্রাসীদের আটকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

(এসএকে/এসপি/অক্টোবর ০২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test