E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মোংলা বন্দরে এসছে ট্রানজিট সুবিধায় নেপালের প্রথম পণ্য

২০১৮ অক্টোবর ০৫ ১৫:২২:১৫
মোংলা বন্দরে এসছে ট্রানজিট সুবিধায় নেপালের প্রথম পণ্য

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : মোংলা বন্দর ব্যবহার করে এই প্রথম ট্রানজিট চুক্তির আওতায় ভারতের মধ্য দিয়ে নেপালে পণ্য রপ্তানীর কাজ শুরু হয়েছে। নেপালের জন্য চীন থেকে আমদানীকৃত প্রায় ২৫ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন সার মোংলা বন্দরে নিয়ে এসেছে আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান খুলনার দেশ ট্রেজিং করপোরেশন। 

সেন্ট ভিনসেনের পতাকাবাহী এমভি ঠেটো টোকজ জাহাজে করে আনা এই সার বৃহস্পতিবার রাতে মোংলা বন্দরের আউটার এ্যংকরেজ হাড়বাড়িয়ায় খালাসের কাজ শুরু হয়েছে। মোংলা বন্দরে সার খালাসের পর এসব সার লইটার জাহাজে করে নৌপথে যশোরের নওয়াপাড়া নেয়া হবে। তারপর যশোর থেকে মালবাহী ট্রেনে করে ভারতের বীরগঞ্জ হয়ে যাবে নেপালে। গত দেড় মাস আগে চীন থেকে নেপালের সার নিয়ে এই জাহাজটি মোংলা বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে।

আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান জানায়, বাংলাদেশের বন্দর ও ভূখন্ড ব্যবহার করে ভারত, ভুটান ও নেপাল ট্রানজিট সুবিধায় এই প্রথম নেপালের ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরে এসেছে। এমভি ঠেটো টোকজ জাহাজ মোংলা বন্দরের আউটার এ্যংকরেজ হাড়বাড়িয়ায় পশুর চ্যানেল থেকে খালাশের পর প্রাথমিক ভাবে ছোট লাইটার কার্গো জাহাজে করে এসব সার যশোরের নওয়াপাড়ায় নেয়া হবে।

এরপর এসব ট্রানজিট পণ্য নওয়াপাড়া থেকে মালবাহী ট্রেনে করে যশোর-বেনাপোল হয়ে ভারতের বীরগঞ্জের উপর দিয়ে নেপালে যাবে। নেপালের সাথে ট্রানজিট চুক্তির পর মোংলা বন্দরের মাধ্যমে এই প্রথম পণ্য রপ্তানী হচ্ছে বলেও জানান সৈয়দ মর্তুজা আলী বাপ্পী। তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার রাতের পালা থেকে ওই জাহাজে শ্রমিক বুকিং করে সার খালাস কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাহাজের পুরো পণ্য খালাস শেষ হবে।

গত দেড় মাস আগে চীন থেকে এ জাহাজটি মোংলা বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। জাহাজে করে আনা নেপাল সরকারের এ সারের আমদানী মূল্য ১ কোটি ১১ লক্ষ ৫৪ হাজার এবং তার রপ্তানী মূল্য ১ কোটি ৩২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৭৭০ টাকা বলে জানিয়েছেন সার আমদানী ও রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান দেশ ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক মো. আমিনুর রশিদ।

তিনি আরো বলেন, চীন থেকে নেপালের জন্য প্রতি এক হাজার মে. টন ৪৪০ ডলার দিয়ে ঢালাই সার আমদানি করে তা স্থানীয় ভাবে মোড়কজাত করে ৫২২ দশমিক ২০ ডলারে প্রতি হাজার টন সার রপ্তানী করা হচ্ছে। প্রথম দফায় মোট ২৫ হাজার ৩৫০ মে. টন সার আমদানি হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ট্রানজিটের বিপরিতে কোনো শুল্ক আদায় করার সুযোগ নেই। তবে এই পণ্য পরিবহণের অবকাঠামো ব্যবহার, তা রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদির সেবার জন্য মাশুল আদায় করা যাবে। বার্সেলনা কনভেনশনের ধারা ৩ এ ট্রানজিটের অধিকার দিতে কোনো ধরণের অর্থ গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে তবে ট্রানজিট পরিচালনা ব্যয় নির্ধারণ করে তা আদায় করার সুযোগ রেখেছে।

গ্যাটের পঞ্চম ধারার ৩ থেকে ৬ উপ-ধারার শর্ত অনুসারে দুই ভাগে মাশুল আদায় করা যায়। পণ্য প্রবেশ ও বর্হিগমন পয়েন্টে বিভিন্ন সেবার বিনিময়ে মাশুল ও সার্ভিস চার্জ আদায় ও ট্রানজিট পণ্যবাহী যানবাহনের ওপর নিবন্ধন ফি, শুল্ক ও কর, টোল ইত্যাদি অথবা মাশুল আদায় করা যায়। স্থানীয় পরিবহণ ও ট্রানজিট পরিবহনের জন্য এসব ফি একই হারে প্রযোজ্য হবে। তবে বাংলাদেশের শুল্ক আইনে ট্রানজিট বাবদ ফি ও সার্ভিস চার্জ আরোপ-সংক্রান্ত ধারা ১২৯ অর্থবিল ২০১১-১২ দ্বারা বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে ট্রানজিট মাশুল আরোপের আপাতত কোনো সুযোগ নেই।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স নুরু এন্ড সন্সের মালিক এইচ এম দুলাল ও মেসার্স খুলনা ট্রেডার্সের মালিক সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, ট্রানজিটের ফলে মোংলা বন্দরের ওপর চাপ বাড়বে। এজন্য বন্দরের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। বন্দরের ফেয়ারওয়েতে ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন, জেটিতেও আমাদের আট মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে তার জন্য ড্রেজিং করতে হবে। ড্রেজিং না করার কারণে বেশিরভাগ জাহাজের অর্ধেক পণ্য চট্রগ্রাম বন্দরে খালাস করতে হয়। জাহাজের পুরো পণ্য মোংলা বন্দরে খালাস করতে পারে সেক্ষেত্রে অনতি বিলম্বে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। গত ১৭ সেপ্টেম্বরের বাংলাদেশের সাথে ভারত, নেপাল ও ভুটানের ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষতির হয়।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর একেএম ফারুক হাসান বলেন, মোংলা বন্দরে ট্রানজিটের ব্যাপারে আমরা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত আছি। এখন ট্রানজিট সেবা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত মোংলা বন্দর। তবে বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়াতে বেশ কয়েকটি নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলেও জানান বন্দর চেয়ারম্যান।

(এসএকে/এসপি/অক্টোবর ০৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test