E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নিজ গ্রুপের হাতেই খুন হলেন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ওয়াহিদ 

২০১৮ অক্টোবর ০৬ ১৫:১৩:৫২
নিজ গ্রুপের হাতেই খুন হলেন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ওয়াহিদ 

মতিউর রহমান মুন্না : নবীগঞ্জের পল্লীতে ওয়াহিদ মিয়া (৫০) নামের এক কৃষককে হাত পা ভেঙ্গে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে নিজ গ্রুপের লোকজন। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শক্রবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের বোয়ালজুর গ্রামে। নিহত ওয়াহিদ মিয়া ওই গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার পুত্র। 

সুত্রে জানা যায়, উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের বোয়ালজোর গ্রামের মৃত তাহির উদ্দিন মেম্বারের ছেলে গিয়াস উদ্দিন গ্রুপ ও ৮ ভাই (ফরাস) গ্রুপের মধ্যে প্রায় ৩ যুগ ধরে আদিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। উভয় পক্ষের ৫টি হত্যাকান্ডসহ একাধিক হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন মামলায় একাধিক আসামীর ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক। দীর্ঘদিন ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও গতকাল শুক্রবার বিকেলে নিজ গ্রুপের লোকদের হাতে খুন হন বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী কৃষক ওয়াহিদ মিয়া। নিহত পরিবারের দাবী সম্প্রতি ওয়াহিদ মিয়া গ্রুপ লিডার গিয়াস উদ্দিন ও তার লোকদের কথা না শুনার কারনে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

অপর একটি সুত্রে জানা যায়, একই গ্রুপের গিয়াস উদ্দিনের ভাগনা মোজাম্মেল মিয়া ও তার স্ত্রী হাফছা বেগমের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এই বিরুধের কারনে হাফছা রুস্তুমপুর পিত্রালয়ে চলে যায়। হত্যাকান্ড ঘটনার কয়েক’দিন আগে উক্ত হাফছা বেগমকে পিত্রালয় থেকে ওয়াহিদ মিয়া এনে তার বাড়িতে রাখে। এ ঘটনায় মোজাম্মেল ও ওয়াহিদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এই নারী সংক্রান্ত ঘটনার জেরধরেও ওয়াহিদ মিয়া প্রতিপক্ষের হাতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হতে পারেন। এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় ফের অশান্তি দেখা দেয় বোয়ালজোর এলাকার জনপদ। সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতংক বিরাজ করছে।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, ওয়াহিদ মিয়া গতকাল বিকেলে স্থানীয় আউশকান্দি বাজার থেকে দাউদপুর গ্রামের রোমান মিয়ার সিএনজি অটোরিকশা যোগে বাজার খরচ নিয়ে বাড়ি ফিরেন। বাড়ির রাস্তার মোড়ে নামার পর একই গ্রুপের ২০/২৫ জন লোক তাকে টেনে নিয়ে গিয়াস উদ্দিনের বিলাশ বহুল বাড়ির উঠানে নিয়ে যান। এর প্রায় ২০ মিনিট পরই ওয়াহিদ মিয়াকে হাত-পা ভাঙ্গা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপানো ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় রাস্তায় পেলে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে নিহতের স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। এ সময় ইনাতগঞ্জ ফাড়ি ইনচার্জ শামছ উদ্দিন, ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবী করে দাউদপুর গ্রামের শফিক মিয়ার ছেলে মুহিবুর রহমান এ প্রতিনিধিকে জানায়, সে স্থানীয় হাওর থেকে কাজ করে বাড়ি ফেরার পথে বিকেল সাড়ে ৩ টার সময় গিয়াস উদ্দিন এর বাড়ির সামনে আসা মাত্রই দেখতে পায় বোয়ালজুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের পুত্র জসিম মিয়া, জলিল মিয়ার পুত্র তুহেল মিয়া, সাহেল মিয়া, রাহেল মিয়া, আব্দুর রহিমের ছেলে ফরহাদ মিয়া, মাসুদ মিয়ার পুত্র খালেদ মিয়াসহ ২০/২৫ জন লোক গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে। এসময় ওয়াহিদ মিয়া সিএনজি গাড়ী থেকে নামা মাত্রই উল্লেখিতরা তাকে ধরে নিয়ে যান গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে। এর ২০ মিনিট পরই আবার তাকে রক্তাত্ত অবস্থায় বাহিরে ফেলে যায়। ঘটনাটি সাথে সাথে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও নবীগঞ্জ থানা পুলিশকে জানানো হয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, গিয়াস উদ্দিন এর ভাই শাহীন মিয়া লন্ডনে বসবাস করছেন এবং গিয়াস মিয়অ অনত্র বাসা ভাড়া করে বসবাস করেন। বাড়িতে মাঝে মধ্যে তাদের নিকটাত্মীয়রা থাকেন। নিহত ওয়াহিদ মিয়া ইতিপূর্বে ৮ ভাই গ্রুপের সদস্য ছিল। বিগত কয়েক বছর ধরে সে গিয়াস গ্রুপে ছিল বলে জানান স্থানীয়রা। তবে নিজ গ্রুপের সদস্যদের হাতে কেন এমন নির্মম হত্যান্ডের শিকার হলো ওয়াহিদ মিয়া এমন প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষায় এলাকার লোকজন।

গিয়াস উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাজকাশারা এলাকায় বসবাস করছেন। তাদের বাড়িতে তার পরিবারের কোন লোক থাকেননা। তবে ওয়াহিদ হত্যাকান্ডের ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। এ ঘটনায় তারা কেউ জড়িত নয় বলেও দাবী করেন গিয়াস উদ্দিন।’

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিজেদের গ্রুপিং ও গ্রুপ লিডার গিয়াস উদ্দিনের কথা না শুনার কারণেই ওয়াহিদ মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। এ ছাড়া নিহত ওয়াহিদ ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী ছিল বলেও জানান তিনি।

(এমআরএম/এসপি/অক্টোবর ০৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test