E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরিশালের তালিকাভুক্ত চার রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা

২০১৮ অক্টোবর ০৬ ১৮:৫২:১৮
বরিশালের তালিকাভুক্ত চার রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা বন্দরে অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা ও নারী ধর্ষণের ঘটনায় মানবতা বিরোধী অপরাধে তালিকাভূক্ত রাজাকার এনায়েত হোসেন খানসহ তার তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

উপজেলার মুন্ডুপাশা গ্রামের মন্নান সিকদারের পুত্র কৃষকলীগ নেতা নান্নু সিকদার জানান, গত ৪ অক্টোবর বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল আমলী আদালতে তিনি বাদি হয়ে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেছেন। বিচারক মোঃ গোলাম ফারুক অভিযোগ গ্রহণ করে আগামীকাল রবিবার (৭ অক্টোবর) আদেশের জন্য রেখেছেন বলে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী এ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন শিপু। মামলায় ধর্ষণের শিকার এক নারীসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে স্বাক্ষী করা হয়েছে।

ওই আইনজীবী জানান, বরিশাল জেলার রাজাকারদের বিরুদ্ধে এটাই কোন প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা মামলা। মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জয়শ্রী গ্রামের কলম খানের পুত্র রাজাকার এনায়েত হোসেন খান, দক্ষিণ ধামুরা গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর পুত্র বেলায়েত বিশ্বাস, কচুয়া গ্রামের জব্বার খানের দুই পুত্র জলিল খান ও শাহ আলম খানসহ তাদের সহযোগীরা পাক বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তারা উজিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পক্ষে কাজ করা লোকজনদের বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নারীদের ধর্ষণসহ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন।

১৯৭১ সালের ৮মে পাক বাহিনীদের নিয়ে রাজাকার এনায়েত খানের নেতৃত্বে অপর আসামিরা ধামুরা বন্দরের কুন্ডু বাড়ির সামনে আসে। ওইদিন মামলার একজন স্বাক্ষীর পিতা হিরু মিয়া এবং হরেন ডাঃ নামক দুইজনকে ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে পাক বাহিনী দ্বারা গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া একই বছরের ১৭ অক্টোবর পাক সেনাদের নিয়ে রাজাকার এনায়েত খান ধামুরা বন্দরে আক্রমন চালিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক নিরিহ মানুষকে গণ্যহত্যা করে। একইসময় বন্দরে আগুন দিয়ে লুটপাট চালানো হয়। মামলার ৫নং স্বাক্ষীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে রাজাকার এনায়েত খান। এসব অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করা হয়।

উল্লেখ্য, উজিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কর্তৃক ২০১৬ সালের উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাঠানো ০০১.১৬-৭৮ স্মারকের তালিকাভূক্ত রাজাকারদের তালিকায় ওই চার আসামির নাম রয়েছে। যারমধ্যে তালিকার ২২ নাম্বারে রাজাকার এনায়েত হোসেন খান, ২৯ নাম্বারে রাজাকার বেলায়েত বিশ্বাস, ৩০ নাম্বারে রাজাকার আব্দুল জলিল খান ও ৩১ নাম্বারে রাজাকার শাহ আলম খান।

মামলার বাদী নান্নু সিকদার জানান, তিনি একজন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক হিসেবে মামলাটি দায়ের করেছেন। রাজাকারদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে দেশ ও জাতি কলঙ্ক মুক্ত হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

কে এই রাজাকার এনায়েত

উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী গ্রামের মৃত কলম খানের মেঝ পুত্র তালিকাভূক্ত রাজাকার এনায়েত হোসেন খান উজিরপুরের একসময়ের বহুল আলোচিত সর্বহারা নেতা হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। একাধিকবার র‌্যাবের হাতে আটককৃত এনায়েত খান ৮০ দশকের তুখোড় সর্বহারা নেতা হিসেবে উজিরপুরে বেশ পরিচিতি লাভ করে। সে গৌরনদীর একটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেননকে হত্যা প্রচেষ্টার মামলায়ও সে (এনায়েত) কারাভোগ করেছেন। এছাড়া উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঘুষ দিতে গিয়েও গ্রেফতার হয় এনায়েত খান। তার বিরুদ্ধে রয়েছে হাজারো অপকর্মের অভিযোগ। শিকারপুর এলাকায় শত শত মানুষকে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানী করেছেন এনায়েত খান।

ভুমিদস্যু ও মামলাবাজ হিসাবে খ্যাত এনায়েত খানের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়েরের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পরায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

(টিবি/এসপি/অক্টোবর ০৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test