E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়ার ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করছে না পুলিশ 

২০১৮ অক্টোবর ০৬ ২২:৩৮:৫০
মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়ার ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করছে না পুলিশ 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার খোকসা ডিগ্রী কলেজের প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া তরনীর আত্মহননের জন্য দায়ী ধর্ষক শাহীনের বিরুদ্ধে পুলিশ ধর্ষণ মামলা গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। 

কুষ্টিয়ায় এ ঘটনায় অবিলম্বে ধর্ষক শাহীনকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে।

শনিবার (৬ অক্টোবর) সকালে শাহীনের বিচার দাবিতে বিক্ষুদ্ধ খোকসা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে এসে মানববন্ধন করে। পরে তারা কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।

জানা যায়, খোকসা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে এসে মানববন্ধন করে। পরে তারা কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা লম্পট শাহীনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে নানা শ্লোগান দিতে থাকে।

পরে পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। ছাত্র-ছাত্রীরা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাস গেটে অবস্থান নেয়। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলা গ্রহণ করে শাহীনকে গ্রেপ্তার করা না হলে রবিবার সকালে কঠোর কর্মসূচি পালন করবে বলে আল্টিমেটাম দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের সাথে সাধারণ মানুষও এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

নিহত ছাত্রীর পরিবার জানায়, বৃহস্পতিবার বিকালে ছাত্রীর খাতায় লিখে যাওয়া সুইসাইড নোটটি পাওয়ার পর থেকে তারা মামলা করার জন্য একাধিকবার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলুর রহমানের সাথে দেখা করেছেন। কিন্তু থানা মামলা না নিয়ে নানা টালবাহানা করছে।

তাদের অভিযোগ, খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলুর রহমান ধর্ষণ মামলা এন্ট্রি করতে কোনোভাবেই রাজি হচ্ছেন না। বলছেন শাহীনকে অন্য মামলায় জড়িয়ে তাকে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা তিনি করে দেবেন। তাদের অভিযোগ, ছাত্রীর লিখে রেখে যাওয়া ওই সুইসাইড নোটটিও পুলিশ আর ফেরত দিচ্ছে না। যে কারণে এখন তারা আদালতে মামলা দায়ের করতেও যেতে পারছেন না।

প্রথম বর্ষের বিজ্ঞান শাখার মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া তরনী অসুস্থ খালাকে দেখতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া জেলা শহরে যাওয়ার জন্য মামার শ্বশুর শাহীনের সাথে মোটর সাইকেলে রওনা হয়। পরে শাহীন তাকে পদ্মা নদীর চরে নিয়ে য়ায় এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। সে রাতেই ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী তার মা রেশমী পারভীন বন্যাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। কিন্তু মান-সম্মানের ভয়ে তার মা বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন। ক্ষোভ, লজ্জা ও ঘৃণায় পরের দিন শনিবার সন্ধ্যায় নিজের ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া তরনী আত্মহত্যা করে। তরনীর আত্মহত্যার পর থেকে শাহীন গা ঢাকা দিয়েছে। শাহীন কমলাপুর গ্রামের মকবুল হোসেন মজনুর ছেলে। শাহীন খোকসা হেলথ কেয়ার নামের একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের অংশীদারি মালিক।

নিহত ছাত্রীর চাচা ইস্তেকবাল চয়ন জানান, তারা মেয়ের আত্মহননের কারণ বুঝতে না পেরে সে সময় তারা অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন। সুইসাইড নোট পাওয়ার পর ওইদিনই তারা সেটি থানায় জমা দেন এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলা গ্রহন করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ এ ঘটনায় মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
ওই ছাত্রীর বাবা খোকসা পৌরসভার কর্মকারী আজমল হোসেন ও মা রেশমী পারভিন বন্যা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, পুলিশ মামলা না নিয়ে তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলুর রহমানের সাথে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত জানান, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা বিষয়টি তার জানা নেই। বিষয়টি জেনে তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

(কেকে/এসপি/অক্টোবর ০৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test