E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বাল্যবিয়ে থেকে বাঁচতে পালিয়ে যান স্কুলছাত্রী মরিয়ম

২০১৮ অক্টোবর ০৬ ২২:৪৯:২৩
বাল্যবিয়ে থেকে বাঁচতে পালিয়ে যান স্কুলছাত্রী মরিয়ম

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : এ যেন কোন গোয়েন্দা সিনেমার দৃশ্যপট। ঠান্ডা মাথায় পুলিশ ও হাজারো মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে এক লোমহর্ষক ঘটনার জন্ম দিয়ে পালিয়ে যান নবম শ্রেণির স্কুল ছাত্রী মরিয়ম আক্তার (১৪)। টানা ১৬ দিন পালিয়ে থাকলেও গত শুক্রবার (৫ অক্টোবর) পুলিশের হাতে আটক হন মুল পরিকল্পনাকারী স্কিপ্ট লেখিকা মরিয়ম।

ঢাকার মুগদা থানার মদিনা বাগের খালপাড় রোডস্থ রুনা ফ্যাশন গার্মেন্টে কর্মরত তাকে উদ্ধার করা হয়। অথচ এই স্কুল ছাত্রী খুন ও গুম হয়েছে এমন আশংকায় গত ১৬ দিন ধরে তার পরিবার ছিল চরম শঙ্কায়। শনিবার দুপুরে পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মইনুল হাসান মরিয়ম উদ্ধারের অভিযান ও তার পালিয়ে যাওয়ার কারণ বর্ণনা করেন।

যে কারণে এ পরিকল্পনা করেন মরিয়ম

মহিপুর খানাবাদ কলেজ সংলগ্ন মরহুম বাবুল মল্লিকের মেয়ে মহিপুর কো-অপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়মকে এক খালাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু বিয়েতে অমত মরিয়মের। বিয়েতে তার অমতের কথা জানালেও পরিবারের কেউই তার মতামতকে গুরুত্ব দেয়নি। এ কারনে ঘটনার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক সপ্তাহ আগে এ পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে মরিয়ম। বিষয়টি একাকী বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তার পরিকল্পনার কথা জানতে পারেণি কেউই।

যেভাবে বাস্তবায়ন করে তার গুম ও হত্যার পরিকল্পনা

গত ১৮ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) রাতের খাবার খেয়ে মা নুরজাহান বেগম, ভাই হামিমকে (৩) নিয়ে ঘরের নিচের এক খাটে ঘুমাতে যায় মরিয়ম। মাঝরাতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও রাত তিনটার দিকে তার বড়বোন রেশমা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে বের হয়। এ সময় ঘুমের ভান ধরে ঘুমিয়ে থাকে মরিয়ম। রাত সাড়ে তিনটার পর বাড়ির সবাই যখন গভীর ঘুমে অচেতন তখন ঘরের পালিত একটি রাজহাঁস ঘরে এনে জবাই করে ঘরের মেঝে সহ সর্বত্র রক্ত ছিটিয়ে দেয়। এরপর হাঁসের বুকের দুই টুকরা মাংস মেঝেতে ফেলে রাখে। নিজের মাথার চুল ও পায়ের নুপুরে রক্ত মেখে ফেলে রাখে ঘরের কোনে। তাকে দূবৃত্তরা হত্যা করে লাশ টুকরা করে গুম করে ফেলেছে মানুষকে এ ঘটনা বিশ্বাস করাতে সে এই নাটক সাজায়।

যেভাবে পালিয়ে যায় মরিয়ম

ফজর নামাজের আগেই ঘর থেকে বের হয়ে যায় মরিয়ম। যাওয়ার সময় জবাই করা হাঁসটি বাড়ির দূরে একটি খালে ফেলে যায়। যা পরদিন পুলিশ উদ্ধার করে। ভোর রাতে ঘরের মধ্যে রক্তের ¯্রােত ও মাংসের টুকরা পড়ে থাকতে দেখে এবং খাটে ঘুমানো মরিয়মকে না দেখতে পেয়ে চিৎকার দেয় তার মা নুরজাহান। এ ডাকচিৎকারেরও শব্দ শুনতে পায় মরিয়ম। প্রতিবেশী,স্বজনসহ সবাই যখন তার কঠিন পরিকল্পনার ভয়াবহ দৃশ্য দেখে হতবাক,আতংকিত,উদ্বিগ্ন ঠিক সেই সময়ে প্রথমে আলীপুর মৎস্য বন্দরে যান। সেখান থেকে বাস যোগে কলাপাড়ায় আসেন এবং সকাল আটটায় ঈগল পরিবহনের একটি গাড়িতে ঢাকায় চলে গিয়ে ওই গার্মেন্টে কাজ নেয়।

মরিয়ম কি একাই পালিয়েছে

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহিপুর থানার এসআই কামাল হোসেন জানান, প্রাথমিক তদন্তে মরিয়ম একাই পালিয়েছে বলে অনুমান করছেন। কেননা এতোবড় একটি ঘটনা যদি একা মঞ্চায়ন না করতেন তাহলে এভাবে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত বলতে পারতেন না। তারপরও পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।

পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মইনুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার মুগদা থানার মদিনা বাগের খালপাড় রোডস্থ রুনা ফ্যাশন গার্মেন্টে কর্মরত অবস্থায় ৫ অক্টোবর রাতে কথিত লাশ গুমের পরিকল্পনাকারী ও আত্মগোপনকারী মরিয়মকে উদ্ধার করা হয়েছে। মরিয়মের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার পরিবার এক খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে জোরকরে বিয়ের আয়োজন করলে মরিয়ম পলায় এবং নিজেকে হত্যাকান্ডের এ নাটক সাজায়। ঘটনার রাতে বাড়ির একটি সাদা রংয়ের রাজাহাঁস জবাই করে তার বুকের দুই টুকরো মাংশ রক্ত ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। পায়ের নূপুর ও অন্যান্য আলামত ঘরের মেজেতে রেখেই ঢাকায় পালিয়ে যায় মরিয়ম। উদ্ধার করা মরিয়মকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর এ ঘটনার পরদিন মরিয়মের মা নুরজাহান বেগম মেয়ে হত্যা ও লাশগুমের অভিযোগ এনে মহিপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। লোমহর্ষক এ গুম ও হত্যা ঘটনা মঞ্চায়নের কারনে পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, সিআইডিসহ সরকারি বিভিন্ন বিভাগ এ ঘটনার অনুসন্ধানে নামে। প্রথমে এলাকায় হত্যা ও গুমের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লেও ঘরের মধ্যে মা ও ছোট ভাইয়ের উপস্থিতিতে কিভাবে ১৪ বছর বয়সী এক স্কুল ছাত্রীকে হত্যা ও লাশ টুকরা করে এ প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। তবে পুৃলিশ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করায় ঘটনার ১৬ দিনের মাথায় এ মরিয়ম অন্তর্ধাণ রহস্য উদঘাটিত হলো। এ জন্য মরিয়মের সহপাঠী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং স্বস্তি ফিরে এসেছে গোটা কলাপাড়া জুড়ে।

যে প্রশ্নের উত্তর জানা হয়নি

মরিয়ম উদ্ধার হলেও সবার মনে একই প্রশ্ন শুধু কি বিয়ে দিতে চাওয়ার কারনে এভাবে গোয়েন্দা সিরিজের গল্পের ষ্টাইলে নিজেকে হত্যা ও গুম নাটক সাজিয়েছে মরিয়ম নাকি এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে। পুলিশ বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করতে পারবে বলে আশা করছে মরিয়মের প্রতিবেশী ও স্বজনরা।

(এমকেআর/এসপি/অক্টোবর ০৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test