E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় হত্যা-চাঁদাবাজির মামলায় বিএনপির সাবেক সাংসদ হাবিব কারাগারে

২০১৮ অক্টোবর ০৭ ১৮:১৩:৪২
সাতক্ষীরায় হত্যা-চাঁদাবাজির মামলায় বিএনপির সাবেক সাংসদ হাবিব কারাগারে

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

রবিবার তিনি হত্যা ও চাঁদাবাজির চারটি মামলায় আদালতে আত্মসমর্পন করলে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তী তাকে তিনটি মামলায় জামিন না’মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অপর এক চাঁদাবাজির মামলায় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোখলেছুর রহমান তার জামিন মঞ্জুর করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে হাবিবুল ইসলাম হাবিব তালা উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনকে হত্যার অভিযোগে হত্যা ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি ও চাঁদাবাজির একটি মামলায় দীর্ঘ তিন বছরের বেশী সময় ধরে পলাতক থাকার পর রবিবার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয় আদালত) এর বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তীর আদালতে আত্মসমর্পন করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানী শেষে বিচারক তার জামিন না’মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

অপরদিকে ২০০৭ সালের পহেলা আগষ্ঠ শহরের ইটাগাছার ঠিকাদার আবু নাসের মোঃ আবু সাঈদের দায়েরকৃত দু’ কোটি টাকার চাঁদাবাজির একটি সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেন।

আসামী পক্ষে জামিনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মজিদ(২), অ্যাড. মিজানুর রহমান পিণ্টু, অ্যাড. কামরুজ্জামান ভুট্টো, অ্যাড. আকবর আলী, অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম, অ্যাড. শাহীন, অ্যাড. মোস্তফাজামান ও বিএনপি’র প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুর রহমানের স্ত্রী শাহানা পারভিন । সরকার পক্ষে ছিলেন জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. ওসমান গনি, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. তপন দাস, অতিরিক্ত পিপি কার্তিক দাস, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আব্দুস সামাদ, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. সৈয়দ জিয়াউর রহমান, অ্যাড. মোস্তফা নুরুল আলম, অ্যাড. শাহানাজ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ৪ মে রাত ৯টার দিকে তালা উপজেলা বিএনপি সভাপতি আলতাফ হোসেনকে পাটকেলঘাটা পাচ রাস্তার মোড়ে বোমা মেরে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় তালা উপজেলার সেনপুর গ্রামের আব্দুর রহমান বাদি হয়ে দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও প্রকাশ সরকারের নামসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরদিন তালা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি’র সহকারি পুলিশ সুপার সুখরঞ্জন সমাদ্দার ২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি বিএনপি নেতা ও সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা প্রণব ঘোষ বাবলুসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে আদালতে পৃথক দু’টি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি হত্যা মামলায় জামিন পান বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। ২০১৫ সালের ৭ জুন আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। একইভাবে ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি জামিন পেলেও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ২০১৫ সালের ৭ জুন তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

এ ছাড়া ২০০৫ সালের ১২ অক্টোবর ৩৩ শতক জমি তার নামে লিখে না দেওয়ায় বা জমির পরিবর্তে ৩০ লাখ টাকা না দেওয়ায় কলারোয়ার জালালাবাদ গ্রামের নুরুল ইসলাম বাদি হয়ে ২০০৮ সালের ১৯ জানুয়ারি কলারোয়া থানায় বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, বজলুর রহমান ও আব্দুর জব্বারের নামে চাদাবাজির মামলা দায়ের করেন। ওই বছরের ৩০ এপ্রিল মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক ফরিদ হোসেন এজাহারভুক্ত তিনজনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।এ মামলায় জামিন নেওয়ার পর বিএনপি নেতা হাবিব দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে পলাতক থাকার পর রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের ভারপ্রাপ্ক বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তী তার জামিন না’মঞ্জুর করেন।

অপরদিকে ২০০৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরার মেসার্স জয়েন্টস ব্রিকস ট্রেডার্স কলারোয়ার কেড়াগাছিতে এক কোটি ৮৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি স্লুইজ গেট নির্মাণের বরাদ পায়। এর আগের দিক প্রতিষ্ঠানটির মালিক আব্দুস সবুরের ছেলে আবু নাসেরমোঃ আবু সাঈদকে বাড়িতে ডেকে এনে বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব ওই কাজ তাকে করার পক্ষে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।

একপর্যায়ে তার বাবার কাছ থেকে কয়েটি সাদা প্যাডে সহি করিয়ে আনতে বলে কাজের টাকা হাবিবের স্ত্রী শাহানা পারভিনের এফডিআর এর অনুকুলে চেক দিতে বলেন। চারটি চেক মারফৎ এক কোটি ৭১ লাখ টাকা নেওয়া হয়।

এ ঘটনায় আবু নাসের মোঃ আবু সাঈদ ২০০৭ সালের পহেলা আগষ্ট বাদি হয়ে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নামে চাদাবাজির মামলা দায়ের করেন। সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল কাদের বেগ ২০১০ সালের ১০ ডিসেম্বর আদালতে হাবিবুৃল ইসলাম হাবিবরে নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। জামিন নেওয়ার পরও হাবিব দীর্ঘ তিন বছর পলাতক থাকলেও যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোখলেছুর রহমান দু’ হাজার টাকা বণ্ডে তার জামিন মঞ্জুর করেন।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ০৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test