E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মদনে মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ দিয়ে মাছ নিধন, অসহায় জেলে ও কৃষক

২০১৮ অক্টোবর ০৮ ১৭:৫০:২০
মদনে মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ দিয়ে মাছ নিধন, অসহায় জেলে ও কৃষক

আল মাহবোব আলম, মদন (নেত্রকোনা) : মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মগড়া নদীর সংযোগ ধলাই নদীসহ উপজেলার বিভিন্ন মুক্ত জলাশয়ে বাশেঁর বানা ফেলে বাঁধ দিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ নিধন করায় অসহায় হয়ে পড়েছে জেলে সম্প্রদায় ও কৃষক। ফলে নদী ও মুক্ত জলাশয় গুলো কার্যকারিতা হারাচ্ছে অপর দিকে দরিদ্র জনগণ এর সুফলতা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।

এলাকার অসাধু প্রভাবশালীরা মসজিদ মাদ্রাসার নাম ভাঙিয়ে মুক্ত জলাশয়গুলো দখলে নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আর সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। দখলদারদের কবলে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে জলাশয়, খাল-বিলের নালা ও নদীর তীর। কর্তৃপক্ষের নজর না থাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী জীবিকা নির্বাহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অন্যদিকে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত, বন্যাপরবর্তী পরিস্থিতি এবং দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষা নিয়ে নানা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সচেতমহল। উপজেলার তিয়শ্রী,মদনসদর,চানঁগাও, ফতেপুর,নায়েকপুর, মাঘান, গোবিন্দশ্রী,কাইটাইল ইউনিয়নের মুক্ত জলাশয় মগড়া, শাখা নদী ধলাই, মরানদী, কাঁঠালচোরা, বনতিয়শ্রী,ছালাকান্দা গ্রামের পেছনে নদী, বয়রাহালা, বর্ণিনদীসহ বিভিন্ন মুক্ত জলাশয়ে গাছের ডাল-বাঁশ পুঁতে মুখে বাঁশের বানা-মাটির বাঁধ দিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ নিধন ও ধান রোপণ করে মুক্ত জলাশয় দখল করে রেখেছে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন সুদৃষ্টি না দেওয়ায় ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে সরকারি সম্পদ।

সোমবার সরেজমিন গেলে ফতেপুর ছত্রকোনার গ্রামের পেছনে ধলাই নদীতে বাশেঁর বায়না ফেলে বাঁধ দিয়ে জাল ও কর দিয়ে মাছ নিধনের এ দৃশ্য চোখে পড়ে। যেখানে কয়েক বছর আগেও এ ধলাই নদীর পার্শ্ববর্তী জমিগুলোতে পাওয়ার পাম্পে সেচসহ এ নদীতে মাছ ধরে শতাধিক দরিদ্র পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে নদীতে বাঁধ দেওয়ায় সবকিছু থেকে বঞ্চিত জেলে ও কৃষকগণ। নৌপথের মোহনায় বাঁধ দিয়ে মাছ নিধন করায় রবি মৌসুমের শুরুতেই শত শত কৃষক নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে হাওরে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। এ নদী পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে শত শত কৃষক হাওরে উৎপাদিত ধান ঘরে তুলতে নানা দ–র্ভোগের সম্মুখীন হবেন বলে সচেতন মহল আশঙ্কা করছেন। এ ব্যাপারে তলার হাওরের কৃষক রোদ্রশ্রী গ্রামের মন্নাফ মিয়া, রঞ্জন সুকুমার বলেন, আমরা এ নৌপথে কৃষির যোগাল-পাতি নিয়ে এবং উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে যাতায়াত করে থাকি। মগড়া ও শাখা ধলাই নদীতে গাছের ডাল, বাঁশ পুঁতে কাটা দেয়ায় এ পথের যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার লক্ষ্যে নদীপথের যাতায়াত সুগম করার জন্য দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন বলে তারা আশা করছেন। এলাকার জেলেরা জানান, আমরা আগে এসব নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন মুক্ত জলাশয়গুলো মসজিদ মাদ্রাসার নাম করে এলাকার প্রভাবশালী লোকজন পত্তন নেয়ায় আমরা মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজে জড়িয়ে পড়ছে। । আমরা মুক্ত জলাশয়গুলোতে অবাধে মাছ ধরার সুযোগ চাই।

ফতেপুর ছত্রকোনা গ্রামের লাট মিয়া ধলাই নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ৭ লাখ টাকা দিয়ে ছত্রকোনার গ্রামের অংশ মসজিদ কমিটি থেকে ১ বছরের জন্য পত্তন নিয়েছি। এর অর্থ মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুক্ত জলাশয়গুলো মসজিদ-মাদ্রাসার নামে ইজারা পত্তন হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি জনগনের ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারছিনা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়াহিদুল আবরার জানান, নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই। তবে জেলেরা মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করবে। কোন প্রভাবশালী মুক্ত জলাশয় পত্তন দিতে পারবে না। মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ দিলে ভূমি অফিস ব্যবস্থা নেবে।

ইউএনও ও ভূমি কর্মকর্তা মো. ওয়ালীউল হাসান জানান, মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ দিয়ে মাছ নিধন করার কোন সুযোগ নেই। যারা অবৈধ ভাবে মুক্ত জলাশয় দখল করছেন তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(এএমএ/এসপি/অক্টোবর ০৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test