E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কক্সবাজার-৩ : কাকে নিয়ে সমীকরণ মিলাচ্ছে দলীয় হাইকমান্ড

২০১৮ অক্টোবর ১০ ১৫:১৪:৪০
কক্সবাজার-৩ : কাকে নিয়ে সমীকরণ মিলাচ্ছে দলীয় হাইকমান্ড

বিশেষ প্রতিনিধি : যতই দিন যাচ্ছে ততই আলোচনা বাড়ছে কক্সবাজার সদর আসন নিয়ে। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন খুব বেশি দুরে নয়। মাঝখানে দুটি মাস। পরের ডিসেম্বর কিংবা পরের মাসেই হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। শেষ সময়ে এসে জটিল হয়ে উঠেছে কক্সবাজার-০৩ (সদর-রামু) আসনের নির্বাচনী ভোটের সমীকরণ।

কোন সম্ভাব্য প্রার্থী এগিয়ে, চট করে বলতে পারছেন না কেউ। কেননা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর মতো কোন নির্বাচন নয়। জনগণের ভোটে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে বিধায় আ’লীগের দলীয় হাইকমান্ড সদর আসনের প্রতি খুব গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন বলে জানা যায়।

নানা সরকারি-বেসরকারি জরিপ আর তৃণমূলের ইচ্ছা অনিচ্ছার পরও বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমল এমপি এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয়’কে নিয়ে ভোটের জটিল সমীকরণ মিলাচ্ছে কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক কমিটি ও দলীয় হাইকমান্ড। এমনটি খবর নিশ্চিত করেছেন অসমর্থিত একটি সুত্র।

তবে হিসাব কষে দেখা যাচ্ছে, এবার কক্সবাজার সদর আসনে আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হবে মহিলা ও নতুন হওয়া ভোটারেরা। এ আসনে মোট তিন লাখেরও উপরে ভোটারের অর্ধেকেরও বেশি ভোটারই মহিলা। ফলে শহর জুড়ে গুঞ্জন উঠেছে- ‘ সদর রামু আসনে যে কোন দলের এমপি হবেন মহিলা ও তরুণদের ভোটে'।

শহরের দৃশ্যপট দেখলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ভোটের মাঠের আমেজ আর কে এগিয়ে আছেন। এমপি কমল না তরুণ মনোনয়ন প্রত্যাশী ইশতিয়াক । গত সপ্তাহে ঈদগাও’তে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল এর নির্বাচনী প্রচারের পথ সভায় কক্সবাজারে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নৌকা প্রতীকের সমর্থনে ইশতিয়াক এর নেতৃত্বে বিশাল গণমিছিল বের হয়ে ওবায়দুর কাদেরের নির্বাচনী পথসভায় যোগ দেন।

অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারের কোন আগাম পথসভা করছেন না জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সাবেক ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত সাবেক এমপি লুৎফর রহমান কাজল। তবে মাঝে মধ্যে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি ধানের শীষের পক্ষে নীরব ভোট বিপ্লবের আহ্বান জানান।

ভোটের যত ফ্যাক্টর :প্রচার-প্রচারণা শেষ হওয়ার মুহূর্তে ভোটের সমীকরণ নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। স্থানীয়রা জানান, এবার কক্সবাজার সদর আসনে ভোটের প্রধান ফ্যাক্টর এখানে বসবাসকারী শহরে ভাড়াটে ভাসমান অনেক ভোটার ও মহিলারা।

ফলে তাদের ভোট টানতে মরিয়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই দলের প্রার্থীরা। স্থানীয় এক নেতা জানান, বর্তমানে কমপক্ষে ৬৫ শতাংশ কক্সবাজারবাাসীর ভোট নৌকার পক্ষে যাবে বলে মনে করেন।
অন্যদিকে বিএনপির স্থানীয় নেতারা জানান, শহরের বড় একটা অংশ আগে থেকেই বিএনপির সমর্থক বা তাদের ভাষায় 'অ্যান্টি আওয়ামী লীগ'। ফলে এ ভোট ব্যাংকের বেশির ভাগই যাবে ধানের শীষের পক্ষে।
এর বাইরে কক্সবাজারে এবার ভোটের ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে এলাকার উন্নয়ন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কাজল যদি জেতেনও লাভ কী? আবার তিনিও দৌড়াদৌড়ির মধ্যে থাকবেন। তার চেয়ে নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিলে তিনি এলাকার উন্নয়ন আরো করতে পারবেন।' এমন ভাষায় বললেন শহরের বড়বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার পাশা।

কয়েকজন শিক্ষার্থীর বক্তব্যও ওই ব্যবসায়ীর মতো। বিএনপি প্রার্থীর দল ক্ষমতায় না বসলে কাজ করতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কিংবা নৌকার প্রার্থী জিতলে কাজ করতে পারবেন, এ নিয়ে সন্দেহ নেই।' ফলে 'উন্নয়ন' ফ্যাক্টরে এগিয়ে আছেন ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ ।

'উন্নয়ন' ফ্যাক্টরের বিপরীতে সামনে আসছে 'সহানুভূতি' ফ্যাক্টর। এ বছর একাদশ নির্বাচনই বিএনপির বড় ভরসা। অনেক বছর দল ক্ষমতার বাহিরে নানা মামলা আর জটিলতায় নিমজ্জিত সাংগঠনিক কার্যক্রম।
এবার ভোটের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর দুই বড় দলের অভ্যন্তরীণ অবস্থা। শুরু থেকেই বিএনপির প্রচার-প্রচারণা কম থাকায় নানাভাবে দলীয় কোন্দলের বিষয়টি সামনে আসে। স্থানীয় রাজনীতির অন্তর্কোন্দলের প্রকাশ হিসেবে পোলিং বুথে ধানের শীষ এর এজেন্ট পাওয়া নিয়েও সমস্যা হচ্ছে- এমন কথা শোনা যাচ্ছে শহরজুড়ে।

পাশাপাশি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রধান শরিক জামায়াত এখনও গাছাড়া ভাব দেখাচ্ছে। ফলে দল এবং জোট থেকে খুব বেশি সুবিধা নিতে পারছেন না বিএনপির প্রার্থী। যদিও কক্সবাজারের প্রভাবশালী বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান কাজল এবং বিএনপি নাম প্রকাশ না করা অনেক নেতারা বলেন, কোনো ধরনের অন্তর্কোন্দল বিএনপিতে নেই। জোটের সব শরিকও ধানের শীষের জন্য কাজ করছে। সরবে-নীরবে প্রচার চালাচ্ছে। গ্রেফতার আতঙ্ক না থাকলে প্রচার মাঠে আরও সরব থাকত। গায়েবি মামলায় কতদিন দমাতে পারবেন এমন ইংগিত করেন।’

অন্যদিকে এবার আওয়ামী লীগে কোনো কোন্দল নেই। ১৪ দলীয় জোট এবং প্রগতিশীল সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও নৌকার পক্ষে শুরু থেকেই সক্রিয় রয়েছে। কক্সবাজারে সরকারের নানা বড় বড় প্রকল্প আর উন্নয়ন হয়েছে। যা ইশতিয়াক আহমেদ জয় ইতিমধ্যে গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায় জনগণকে বড় পর্দায় দেখিয়েছেন । এর ফলে দলীয় ও জোটগত দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আ’লীগ প্রার্থী।

কক্সাজারের বার্মিজ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও যুবলীগ নেতা আবছার বলেন, এবার নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল শুধু নয়, কক্সবাজারবাসীও ঐক্যবদ্ধ। অভূতপূর্ব গণজোয়ারে নৌকার বিপুল বিজয় হবে ইশতিয়াক যদি মনোনয়ন পায়’।

আয়তন এবং ভোটারের তুলনায় অন্যান্য আসনের চেয়ে কক্সবাজার সদর ছোট নয়। ফলে ভোটের ফ্যাক্টরগুলোও অপেক্ষাকৃত সরল। তবে শেষ মুহূর্তে ভোটের সমীকরণ কিছুটা জটিল হয়ে উঠেছে। চূড়ান্ত সমীকরণ মেলাতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী মাস পর্যন্ত। কেননা কমল নয়, ইশতিয়াক আহমেদ জয়’কে নিয়েই দলীয় হাইকমান্ড ভাবছেন বলে জানা যায়।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test