E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সাতক্ষীরায় পাচার মামলা মীমাংসা করতে রাজী না হওয়ায় ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের হুমকি

২০১৮ অক্টোবর ১২ ১৭:৫৬:৫৩
সাতক্ষীরায় পাচার মামলা মীমাংসা করতে রাজী না হওয়ায় ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের হুমকি

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : পাচারের মামলা মীমাংসা করতে রাজী না হওয়ায় আদালত চত্বরে ভিকটিম ও তার স্বজনদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। বৃহষ্পতিবার দুপুর দু’টোর দিকে সাতক্ষীরা জজ কোর্ট ভবনের নীচের তলায় এ ঘটনায় ঘটে।

সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে,২০১১ সালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তুজুলপুর গ্রামের এক নারীকে পাচারের অভিযোগে তার মা বাদি হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় চার্জশীটভুক্ত হাজিপুর গ্রামের চার সহোদর তোহিদুল গাজী, দেদার গাজী, এজাহারুল ও আশরাফুল গাজী ছাড়াও তুজুলপুরের মিন্টু, আব্দুল্লাহ ও যুগিবাড়ির হালিমা জামিন পেয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাক্ষী আব্দুল কাদের, রওশানারা খাতুন ও জামালউদ্দিন আদালতে হাজির করিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতা স্বত্বেও সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার খলিলুর রহমানের সহায়তায় তাদের সাক্ষী করান। আসামীরা বাড়ি যাওয়ার আগে তাদের পক্ষে সাক্ষী না দিলে ভিকটিম ,তার বাবা ও মাকে জীবনে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। গত ১০ সেপ্টেম্বর ভিকটিমের মা আদালতে সাক্ষী দিতে শুরু করার একপর্যায়ে বিচারকের শারীরিক অসুস্থতার কারণে পরবর্তী ১১ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়।

ভিকটিমের অভিযোগ, ১০ সেপ্টেম্বর সে, তার বাবা ও মা সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে নীচে নামলে আব্দুল্লাহ ও তার স্বজনরা ভিকটিমের বাবাকে ঘাড় ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। আগামি দিনে সাক্ষী দিতে না আসার জন্য ভিকটিম ও তার মা প্রতিবাদ করায় তাদেরকে হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। এরপর থেকে ঝাউডাঙার সাবেক যুবলীগ নেতা সোহরাব হোসেন সাজুর নেতৃত্বে একটি মহল আসামীদের জমি বন্ধক রাখিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক, অ্যাড. আসাদুজ্জামান দিলু ও একজন মানবাধিকার কর্মী সাংবাদিকের কাছে দৌড় ঝাপশুরু করেন। তাতে কোন লাভ না হওয়ায় বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আদালতের বারান্দায় অবস্থানকালে তাকেসহ তার বাবা, মাকে মীমাংসার শর্তে সাক্ষী না দেওয়ার জন্য হুমকি দেন। একপর্যায়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তুজুলপুর মোড়ে বাবা ওমাকে মামলা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য সতর্ক করে পরে তাদের বাড়িতে যেয়ে তাকেও কিছু টাকার বিনিময়ে মামলা আপোষ করতে বলে দু’ হাজার টাকা বাবার হাতে গুজে দিতে চান সোহরাব হোসেন সাজু। আগামি ২৫ নভেম্বরের মধ্যে মিটিয়ে না নিলে ফল ভাল হবে না বলে তাদেরকে জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরা সদরের তুজুলপুর গ্রামের এক নারীকে (২৬) ঢাকায় ভাল চাকুরি দেওয়ার নাম করে ২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় একই এলাকার আব্দুল্লাহ ভারতে পাচার করে। এ ঘটনায় আব্দুল্লাহ ও তার চার শ্যালকের নামে ২০১১ সালের ১৩ জুন মামলা করে ওই পাচার হওয়া নারীর মা। ২০১২ সালের ৪ জানুয়ারি বন্দিদশা থেকে ফিরে আসার পর ওই নারী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দিতে মূল পাচারকারী তুজুলপুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে মিণ্টু,যুগিবাড়ি গ্রামের মোস্তফার স্ত্রী হালিমা, তুজুলপুরের আব্দুল্লাহ ও তার চার শ্যালকের নাম বলে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মামলার বাদিকে ভয় দেখিয়ে ২০১১ সালের ২ মে জোরপূর্বক এফিডেফিড করিয়ে নেয় ইয়ারবসহ একটি চক্র। ২০১২ সালের ২০ আগষ্ট সকল আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে বাদির আদালতে নারাজির আবেদন শুনানী শেষে বিচারক মামলার পূণঃ তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর সহাকারী পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।

পিণ্টুর নেতৃত্বে ইয়ারব ও মাজেদ মেম্বর মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়ায় পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবহিত করায় তুজুলপুরের ইয়ারব হোসেন ও মাজেদ মেম্বরের নেতৃত্বে মাদকের আস্তানা উচ্ছেদের নামে ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর ভিকটিমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট শেষে ভাঙচুর করে গুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা সাংবাদিক পরিচয় দানকারি ইয়ারব হোসেনসহ কয়েকজনের নামে থানায় অভিযোগ দিলে মাজেদ মেম্বর পাল্টা অভিযোগ দিয়ে ভিকটিমের বাড়িতে বারবার পুলিশ পাঠিয়ে তাদেরকে এলাকা ছাড়া করে। এমনকি একই এলাকার এক গৃহবধুকে দিয়ে ওই সালের ২৩ নভেম্বর ভিকটিম, তার বাবা, মা ও ভাইয়ের নামে মিথ্যা ও পরিকল্পিত পাচারের মামলা (জিআর- ৮৬৭/১২)করানো হয়। যা’ গত জুন মাসে খারিজ হয়ে যায়।

এ ছাড়া ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি আপোষ মীমাংসার নামে শালিসি বৈঠক বসিয়ে ভিকটিমের বাবা ও মাকে শালিস নামায় জোরপূর্বক সাক্ষর করানো হয়। তাতে সাক্ষর করেন ইয়ারব হোসেন , মাজেদ মেম্বরসহ কয়েকজন। আদালতে দেখানো শালিস নামায় ঝাউডাঙা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সই ও ছিল থাকলেও তিনি ওই সাক্ষর করেননি বলে এ প্রতিবেদককে অবহিত করেন।

জানতে চাইলে সাবেক যুবলীগ নেতা সোহরাব হোসেন সাজু জানান, আর্থিক সুবিধা নিয়ে নয়, এলাকাবাসীর স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে শান্তিস্থাপনের উদ্যোগ চালাচ্ছেন তিনি। বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় তিনিসহ কয়েকজন মীমাংসার কথা বলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ি আসামীপক্ষের দু’ হাজার টাকা পাচার হওয়া ভিকটিমের বাবাকে দিতে গিয়েছিলেন তিনি।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ১২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test