E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝালকাঠিতে রাতের আঁধারে ইলিশ শিকার, বিক্রি ১০০ থেকে ৪০০ টাকায়

২০১৮ অক্টোবর ১৪ ১৬:৫৯:২৫
ঝালকাঠিতে রাতের আঁধারে ইলিশ শিকার, বিক্রি ১০০ থেকে ৪০০ টাকায়

রাজাপুর (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি : ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে জেলেরা রাতের আঁধারে শিকার করছেন ইলিশ। আর প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ওইসব মা ইলিশ। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়। 

রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া গ্রামের বিষখালী নদীতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের তত্বাবধায়নে মাছ শিকার বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে প্রকাশ্যে। থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পূর্বেই মাছ ভাগ হয়ে যায় বলে গ্রামবাসীর অভিযোগ। এই এলাকায় কেউ অপরাধ করে ফেঁসে গেলে প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধির মধ্যস্থতায় সমাঝোতা হয়ে যায়। ফলে অনেকেই পার পেয়ে যান।

শনিবার দুপুরে রাজপুর ও নলছিটিতে ৩ জেলেকে মাছ ধরার সময় আটক করে কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রকাশ্য দিবালোকে এবং রাতের অন্ধকারে জেলেরা অবাধে মা ইলিশ ধরছে। জেলার নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর সরই, মাটিভাঙ্গা, ফেরিঘাট, নাইয়াপাড়া, খোঁজাখালী, অনুরাগ, দপদপিয়া পুরাতন ফেরিঘাট, ভবানীপুর, হদুয়া, বিষখালী নদীর ভেরনবাড়িয়া ও নলবুনিয়া খেয়াঘাট, রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া, বাদুরতলা এলাকার নদীতে জেলেদেরকে মাছ ধরতে দেখা গেছে। তাদের মনে নেই কোন আতঙ্ক। যদিও মাঝে মাঝে সরকারিভাবে দু’একটি ট্রলার মহড়া দিলেও এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাওয়ার পূর্বেই খবর পেয়ে যায় জেলেরা। ঘণ্টা খানেক জাল ফেলে রাখলেই অনেক ইলিশ ধরা পড়ে তাদের জালে।

জেলেরা প্রতিদিন এলাকায় ঘুরে এসব ইলিশ নির্বিঘেœ বিক্রি করছে। স্থানীয়রা জানান, সরকারিভাবে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এক শ্রেণির লোভী জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করছে। সকাল ১০টায়, দুপুর ৩টায়, রাত ১০টায় ও ভোর ৪টায় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে অবাধে মা ইলিশ নিধন করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিগত বছরগুলোতে যেভাবে অভিযান পরিচালিত হতো, হয়তো এ বছর তেমনটা হচ্ছে না। এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে এলাকাবাসী উপজেলার ভৈরবপাশা এলাকায় সুগন্ধা নদী সংলগ্ন একটি খাল থেকে নৌকা ও জালসহ তিন জেলেকে আটক করে মৎস্য কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। পরে তাদেরকে রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

নলছিটির ভৈরবপাশা ইউনিয়ন সাবেক চেয়ারম্যান নলছিটি উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা আ. হক চেয়ারম্যানের ভাই দুলাল, রুহুল আমিন মল্লিক, পারভেজ মল্লিকের নেতৃত্বে ভৈরবপাশা এলাকায় অসাধু জেলেরা অবৈধভাবে মৎস্য শিকার করে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ও ভৈরবপাশা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিব হোসেন জানান, এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে আমরা মাছ ধরার সময় ২ জেলেকে নৌকা ও জালসহ আটক করে নলছিটি থানার এসআই আজিজের হাতের তুলে দেই। নলছিটি ফেরিঘাটে ওসি (তদন্ত) আ. হালিম তালুকদারের উপস্থিতিতে তাদের জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়। পরে থানা থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা আটক ২ জেলেকে ছাড়িয়ে আনেন।

এ ব্যাপারে নলছিটি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমাদের বরাদ্দ কম, জনবলও কম এবং একটি মাত্র ট্রলার দিয়ে অভিযান চালানো কষ্টসাধ্য।

নলছিটি থানার ওসি শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শুভ নামে এক ছাত্রলীগের কর্মীর নামে জোর করে মাছ ধরার জন্য চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ এক জেলে নলছিটি থানায় দিয়েছেন। অভিযোগটি এসআই আজিজ তদন্ত করে দেখছেন। আটক ২ জেলের কথা তিনি জানেন না’।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা শনিবার বিকেলে বলেন, ‘বর্তমানে দিয়াকুল, বাদুরতলা, জাঙ্গলিয়া, নলছিটি ফেরিঘাটে অভিযান চলছে। সাত দিনে ৫০টি অভিযানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হয়েছে ২৪টি। অভিযানে ১ হাজার একশত ৪৫ কেজি ইলিশ ও ১ লক্ষ ২৫ হাজার মিটার জাল আটক করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১৩টি, জরিমানা করা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা, ১২ জন জেলের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত’।

(জেএস/এসপি/অক্টোবর ১৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test