E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজস্ব টিকিট না দেয়ায় সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

আগৈলঝাড়ায় পল্লী বিদ্যুতের বিল দিতে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা

২০১৮ অক্টোবর ২৪ ১৭:১৪:০১
আগৈলঝাড়ায় পল্লী বিদ্যুতের বিল দিতে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : আগৈলঝাড়ায় পল্লী বিদ্যুতের বিল প্রদান করতে পদে পদে হয়রানীর শিকার হচেচ্ছন গ্রাহকেরা। দু’একটি ব্যাংকের শাখায় বিল গ্রহণ করলেও অধিকাংশ ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় বিদ্যুৎ বিল নেয়া বন্ধ করে দেয়া ও বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সাথে ব্যাংক ষ্ঠাফদের দুর্ব্যবহার ও বাক বিতন্ডার অহরহ ঘটনার পাশাপাশি ব্যাংক ষ্টাফদের কারণে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। বিল প্রদানে চরম ভোগান্তি আর হয়রানীর শিকার থেকে মুক্তি পেতে উপজেলা সদরে একটি বুথ স্থাপনের মাধ্যমে বিল প্রদান সুযোগের দাবি জানিয়েছে পল্লী বিদ্যুতের হাজার হাজার গ্রাহক।

উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহক মো. সাইফুল ইসলাম রব অভিযোগে বলেন, আগে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন ব্যাংক শাখাগুলোতে পলøী বিদ্যুৎ বিল নেয়া হত। বর্তমানে আগৈলঝাড়া কৃষি ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক শাখা ছাড়া বিদ্যুৎ বিল নেয় না অন্য ব্যাংকগুলো। তাও আবার দুপুর একটার পরে ব্যাংকে বিল নেয় না তারা। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার কোন বিলই গ্রহণ করেনা ব্যাংক। ফলে গ্রাহকেরা বিল দিতে গিয়ে লাইন দিয়ে দাড়িয়েও বিল দিতে না পেরে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছে। বিল প্রদানের নির্দ্দিষ্ট শেষ তারিখে বিল দিতে না পেরে অনেক গ্রাহকই বিলম্ব মাশুল দিয়ে বিল দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিলের খুচরা টাকা আদান প্রদান নিয়ে গ্রাহকদরে সাথে অহরহ বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়ে পরছেন ব্যাংকের বিল গ্রহণকারী ষ্ঠাফরা। এসকল বিড়ম্বনায় পরে অনেকে বিল দিতে না পেয়ে মাসের বিল বকেয়াই ফেলে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়াও ৪শ টাকার উপরে বিল হলে গ্রাহকের প্রদান করা বিলে সরকারী রেভিনিউ ষ্ঠাম্প লাগানোর সরকারী নিয়ম থাকলেও অসাধু ব্যাংক কর্মচারীরা ওই ষ্ট্যাম্প না লাগানোর ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। দিন শেষে হিসেব করে সরকারের ওই রাজস্ব চলে যায় তাদের পকেটে।

শুধু সাইফুল ইসলামই নয়, তার মতো বিল প্রদানে হয়রানীর শিকার হওয়া পয়সারহাট গ্রামের এনামুল সিকদারসহ গ্রাহকেরা অভিযোগে বলেন, উপজেলা সদর থেকে জোনাল অফিস গৈলার দূরত্ব তিন কিলোমিটারেরও বেশী। গৈলা ও আশপাশের এলাকা এবং যাদের বিদ্যুৎ অফিসে কাজ থাকে এমন গ্রাহক ছাড়া জোনাল অফিসে গিয়ে শতকরা ২০ ভাগ গ্রাহকও বিল প্রদান করে না। বাকী গ্রাহকেরা বাধ্য হয়ে সব রকম প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ব্যাংকগুলোতে বিল প্রদান করে আসছেন। ব্যাংকের হয়রানী আর খামখেয়ালীরে কারণে বেশীরভাগ গ্রাহকই ব্যাংক বিমুখ হয়ে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে প্রদানকৃত বিলের ১০টাকা হারে বাড়তি দিয়ে বিদ্যুৎ বিল প্রদান করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিকাশে প্রদান করা বিলেও কোন এজেন্টা ব্যবহার করছে না কোন রাজস্ব ষ্ট্যাম্প। ফলে সেখানেও সরকার বিপুল পরিমান রাজম্ব হারাচ্ছে। লাভবান হচ্ছে ফোন কোম্পানী ও এজেন্ট মালিকেরা।

গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল গ্রহনের জন্য উপজেলা সদরে বিদ্যুৎ অফিসের একজন ষ্ঠাফের মাধ্যমে একটি বুথ স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকেরা। বুথ স্থাপন হলে বিল প্রদানের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে বহু গুন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২এর আওতাধীন গৌরনদী জেনাল অফিস থেকে গ্রাহকদের সেবা প্রদানের সুবিধা প্রদানের জন্য ২০০৮ সালের ২৪ নভেম্বর আগৈলঝাড়ার গৈলায় স্থাপন করা হয় পল্লী বিদ্যুতের আগৈলঝাড়া জোনাল অফিস।

আগৈলঝাড়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. হযরত আলী জানান, স্থানীয় সাংসদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র সহযোগিতায় বরিশাল জেলার মধ্যে সর্বপ্রথম আগৈলঝাড়া উপজেলাকে একমাত্র শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসেবে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

সূত্র মতে, উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের ৭১৭৯ জন, রত্নপুর ইউনিয়নে ৬৪১২, বাকাল ইউনিয়নে ৫৭৬০, বাগধা ইউনিয়নের ৬৫৮৬, রাজিহার ইউনিয়নের ৯৬০২টি পরিবারের মধ্যে এখন সবাই বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়েছেন। উপজেলায় বানিজ্যিক ও আবাসিক মিলিয়ে পাঁচটি ইউনিয়নে বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৪০ হাজার ৮শ ৫৫জন।

অথচ জোনাল অফিস স্থাপনের আগে উপজেলায় গ্রাহক সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩১৩১ জন। পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে ডিজিটাল সেবার আওতায় আনা হয়েছে।

আগৈলঝাড়া কৃষি ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক দেবাশীষ রায় জানান, ব্যাংকের নিজস্ব কাজের চাপে সাথে প্রতিদিন শতশত গ্রাহকের বিল নিতে ষ্ঠাফরা অনেক সময় নির্দ্দিষ্ট সময়ের পর অনীহা প্রকাশ করলেও তিনি নিজে বিল নেয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

ডিজিএম মো. হযরত আলী বলেন, গ্রাহকদের বিল প্রদানের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষর সাথে তাদের চুক্তি রয়েছে। তারা বিদ্যুৎ গ্রাহকের বিল নিতে বাধ্য। বিল প্রদানের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে ষ্ঠাফ সংকটের কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন খুব শিঘ্রই ইসলামী ব্যাংক শাখার মাধ্যমে বিল প্রদান করতে পারবেন গ্রাহকেরা। বিলে রাজস্ব না দেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এমন বিল তাকে দেখালে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আগামী উপজেলা পরিষদ সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে গ্রাহকের জন্য সহজভাবে বিল প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(টিবি/এসপি/অক্টোবর ২৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test