E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পোষ্টমর্টেম ছাড়াই লাশ দাফন!

নোয়াখালীতে গৃহবধূকে হত্যার ১ মাস ৬ দিন পর লাশ উত্তোলন

২০১৮ অক্টোবর ২৫ ১৪:৫২:১৬
নোয়াখালীতে গৃহবধূকে হত্যার ১ মাস ৬ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীতে গৃহবধূকে হত্যার ১ মাস ৭ দিন পর লাশ উত্তলন করা হয়েছে । এসময় নিহত রিনার স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে পুরো এলাকা, লাশের গলায় কাটা দাগ ও গলায় শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে।

নোয়াখালী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেড শফিকুল ইসলাম জানান, কিছু আলামত আমরা দেখেছি বাকিটা ময়নাতন্তের পর জানা যাবেৎ। লাশ উত্তোলনের সময় পাশে ছিলেন না অভিযুক্তরা, বাড়ীতে গিয়ে দেখাযায় কেউ বাড়ীতে নেই।

এলাকাবাসী জানান, পুলিশ আসবে জেনে নিহতের ৩ বছরের শিশু সন্তান রিয়ানকে নিয়ে সবাই বাড়ী থেকে পালিয়ে যায়। মামলার করার ১ মাস ৭ দিন পর কোর্টের নির্দেশে গতকাল ২৪ অক্টোবর বুধবার নিহত রিনার লাশ উত্তোলন করে নোয়াখালী পিবিআই ও নোয়াখালী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেড এর নেতৃত্বে সুধারাম থানা পুলিশ ।

নিহতের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে এ বিষয়ে নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মামলা নং৭৯৫। আর্জিতে তিনি উল্লেখ করেন, জেলার সুধারাম থানা এলাকায় লক্ষ্মীনারায়ণপুরের কাজী আমীনুল হক মেম্বার বাড়ীর নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. হাসান (২৯) এর সাথে রীনার বিয়ে হয় ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল। তাদের সংসারে জিহান নামের ৩ বছরের শিশু সন্তান রয়েছে।

যৌতুকের জন্য রীনাকে প্রায়ই নির্যাতন করতো। ঘটনার দিন দুপুরে পারিবারিক বিষয়ে কথা কাটাকাটি হয়। রাতে রীনাকে হত্যা করে। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, থানা পুলিশ মিলে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে লাশ দাফন করে।

জাহানারা বলেন, লাশের ময়না তদন্ত করতে চাইলে তারা আরেকটা হত্যাকাণ্ডের হুমকি দেয়। আমরা ভয়ে নিরুপায় হয়ে পড়ী। এলাকার কোন মানুষ তাদের ভয়ে কথা বলতে চায়না। শুধু চোখের পানি ঝারছে। পরে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে বলে আপোষ করো। আমরা আপোষ চাইনা। বিচার চাই। আর কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয়।

খুন করে লাশ ঘরের ভিতরে আটকে রাখে হত্যাকারিরা, গ্রাম পুলিশ হাশেমের পারায় রাখা হয় রিনার লাশ কেউকে দেখার জন্য ও দেয়া হয়নি এমনি নিহতের পরিবারের কাউকে লাশের পাশে কোরআন পাঠ করতে দেয়নি বলে ও অভিযোগ করেন নিহত রিনার বোন। খুনের বিষয়টি জানতে পেরে রিনার আত্বীয়রা জোর করে প্রবেশ করে দেখেন রিনার যৌনাঙ্গে রক্ষক্ষরন হচ্ছে, গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপানো দাগ এবং পুরো শরিরে নির্যাতনের চিহ্ন।

যৌতুকের দাবীতে স্বামী, ভাসুর দেবর ননদ জাঁ মিলে হত্যা করেছে আমার সোনার টুকরাকে। পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আমাকে ফোনে জানায়। আমি চট্টগ্রাম থেকে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখি মাটিতে পরে আছে আমার সোনার টুকরার নিথর দেহ। দারোগা পুলিশ আছে। কিন্তু লাশের কাছে আমাদের ভিড়তে দিলনা। আমার বড় মেয়ে ভিড় ঠেলে গিয়ে দেখলো মেয়েটার শরীর জখমেভরা। ঘাড়-থুতুনিতে কালো দাগ, মনে হলো ঘুমিয়ে আছে। চিৎকার দিয়া কইলাম আমার মেয়েটারে এভাবে হত্যা করলো কে? আমার কথা কেউ শোনল না। ভয় দেখিয়ে থানা পুলিশ মেম্বার মিলে সাদা কাগজে আমার থেকে স্বাক্ষর নিলো। লাশ দাফন করলো। তখন মোবাইলে অনেকে ভিডিও করল। ছবি তুলল, পোষ্টমর্টেম করল না, লাশের সুরতহালও করল না। পুলিশ লাশ নিতে চাইছে। কিন্তু মেম্বারের বাধার কারণে পারেনি। থানায় গেলাম, অভিযোগ দিলাম। তারা আপোষের কথা বলে। নিরুপায় হয়ে আদালতে মামলা করেছি। আদালত যেই স্যারের কাছে তদন্ত করতে দিছে সেই স্যারও বলল আপোষ করো। আমি বলছি আপোষ চাইনা। বিচার চাই। কঠিন বিচার। এভাবেই বলছিলেন হতভাগ্য রীনা আক্তারের বাবা জয়নাল আবেদিন।

জয়নাল লক্ষীপুর জেলার কমলনগর থানা এলাকার ৩নং চর ফলকনের স্থায়ী বাসিন্দা। নোয়াখালী জেলার সুধারামপুর থানা এলাকায় ১নং চর মটুয়া লক্ষ্মীনারায়ণপুরে কাজী আমীনুল হক মেম্বারের বাড়ীতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বর্ণনার চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে। অভিযোগ উঠেছে জনপ্রতিনিধি এবং থানা পুলিশ মিলে একটি সাদা কাগজে নিহতের বাবার স্বাক্ষর নিয়ে ‘হত্যা’ ঘটনা চাপা দেয়ার চেষ্টা করে।

বিষয়টি জানতে চাইলে কাজী আমীনুল হক মেম্বার বলেন-‘এলাকায় আসেন, দেখে যান। আমিও চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক।’ পুলিশ লাশ নিতে চাইলে বাধা দেয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এখনতো অনেকে অনেক কথা বলবে। কিন্তু আমি চাই আসল সত্য বেরিয়ে আসুক। দোষীদের শাস্থি হোক

এ বিষয়ে সুধারাম থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা সুরতহাল করেছি। ভিকটিমের অভিভাবকের ইচ্ছায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ তাদের কাছে হন্তান্তর করা হয়েছে। আদালতে মামলার বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন- ‘আদালতে মামলা করে থাকলেও তো আমার কাছে আসবে।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন থানার উপ পরিদর্শক ইসমাইল হোসেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন-‘সুরতহাল রিপোর্ট আমি তৈরি করি। তাতে যা পাওয়া গেছে আমি প্রয়োজন হলে আদালতে উপস্থাপন করবো। নিহতের অভিভাবক লাশের পোষ্টমর্টেম করতে চায়নি বলে লাশ তাদের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে থানায় একটি ইউডি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।’

মামলাটি আইনজীবী নোয়াখালী প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, রীনার মৃত্যু নিছক একটি মৃত্যু নয়। একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। থানা পুলিশ মামলা নেয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা আদালতে মামলা করেছি। আশা করছি আদালতে ন্যায় বিচার পাবে নিহতের পরিবার। এজাহারটি গ্রহণ করে বিজ্ঞ আদালত পিবিআইকে তদন্তে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলাটি তদন্ত করছেন পিবিআই কর্মকর্তা কেএম আবদুলøাহ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে। আদালত তদন্তে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি সে মতে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছি। আদালতের নির্দেশের বাইরে তো আমাদের কিছু করার থাকে না।

এছাড়া এই প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেননি ১নং চর মটুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বাবলু। আর ফোন রিসিভ করেও কথা বলেননি মামলার ১নং আসামী ও নিহতের স্বামী মো. হাসান। যেকারণে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বহু সাধারণ মানুষ ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেছেন। শাস্থি দাবি করেছেন অপরাধীদের। তারা বলছেন, আইন শৃংখলা বাহিনী আর জনপ্রতিনিধি মিলে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা চাপা দেয়ার চেষ্টা সত্যি দু:খজনক।

(আইইউএস/এসপি/অক্টোবর ২৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test