E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুরে থামছে না মা ইলিশ ধরা, ১৮ দিনে আটক ১২০০ 

২০১৮ অক্টোবর ২৫ ১৫:২২:৩০
শরীয়তপুরে থামছে না মা ইলিশ ধরা, ১৮ দিনে আটক ১২০০ 

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছেনা জেলেদের। মা ইলিশ রক্ষা অভিযানকে কেন্দ্র করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে শরীয়তপুরের জেলেরা। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রকৃত জেলেদের চেয়ে মৌসুমী জেলেরা অভিনব উপায়ে শিকার করছে মা ইলিশ। নদীতে অভিযান করতে যাওয়া পুলিশ সদস্য, কোস্টগার্ড, মৎস্য অফিসের লোকজন এমনকি নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেডদের উপরও হামলা করা হচ্ছে সংঘবদ্ধভাবে। এর মধ্যদিয়েও ১৮ দিনে প্রায় ১ হাজার ২শত জন জেলে, বিপুল পরিমানে মা ইলিশ ও কারেন্ট জাল আটক করেছেন অভিযানকারি দল। এলাকার সচেতন মহল মনে করছেন দক্ষ ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবলের অভাবে শরীয়তপুরে এ বছর ব্যর্থ হয়েছে সরকারের এই অভিযান।

গত ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর ২২ দিন ব্যাপী শুরু হয়েছে ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ শিকার বন্ধে অভিযান। এই মৌসুমে মা ইলিশ শিকার করা, আহরণ করা করা, ক্রয়-বিক্রয় করা, পরিবহন করা, মজুদ বা সংরক্ষন করা ইত্যাদির ওপর আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। সর্বনিন্ম ৫ হাজার টাকা জরিমানা থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের জন্য। ৭ থেকে ২৪ অক্টোবর এই ১৮ দিনে অভিযানে আটক করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২ শত জন জেলে। এদের মধ্যে ৮৫০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটক করা হয়েছে প্রায় ১৪ মেট্রিক টন ইলিশ ও ৬০ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল।

শরীয়তপুর জেলা মৎস বিভাগ জানিয়েছে, এবছর শরীয়তপুর চারটি উপজেলা জাজিরা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাটে পদ্মা নদীর প্রায় ৭০ কিলোমিটার নৌ সীমানাকে ইলিশের প্রজনন এলাকা বা অভায়শ্রম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এতটা বৃহৎ এলাকায় অভিযান পরিচালনার জন্য দক্ষ ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল নেই জেলা মৎস বিভাগের। ফলে, এবছর মা ইলিশ রক্ষা অভিযান অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে বলে ধরে নিয়েছেন সচেতন সমাজ।

এ বছর অভিযানের শুরু থেকেই জাজিরা উপজেলার কিছু প্রভাবশালী লোক শত শত স্পীড বোট বা সী বোট ভাড়ায় নিয়ে জেলেদের দিয়ে অবৈধভাবে মা ইলিশ শিকার শুরু করে। একই সাথে বাইরের জেলা থেকেও অসংখ্য জেলে ভাড়ায় এনে তারা মাছ শিকার করতে থাকে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জাজিরার পালেরচর থেকে শুরু করে নড়িয়ার নওপাড়া পর্যন্ত শত শত স্পীড বোট দিন-রাত ইলিশ শিকার করছে। এছারাও পদ্মা নদীর ওয়াপদা এলাকা থেকে গোসাইরহাট উপজেলার সাতপাড় পর্যন্ত হাজার হাজার নৌকা দিন-রাত শিকার করছে মা ইলিশ। তাদের আহোরিত মা ইলিশগুলো বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করার পাশাপাশি নদীর তীরবর্তি গ্রামগুলোতে খুচরা ক্রেতাদের কাছে খুব কম দরে বিক্রি করছে।

দেখা গেছে, জাজিরার পালেরচর, বড়কান্দি, বিলাপুর ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি পয়েছে পয়েন্টে ভোর ৬টা থেকেই বসে ইললিশ বিক্রর হাট। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। শত শত লোক কম দরে কিনে নিচ্ছে সেই ইলিশ। কিন্তু প্রশাসন কোন ভাবেই থামাতে পারছেনা এই ইলিশ উৎসব।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কাঁচিকাটা ইউনিয়ন। কাঁচিকাটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে চাঁদপুর জেলার দীপাঞ্চল ক্ষেত রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন । এ দুই ইউনিয়নের প্রায় ৮০ ভাগ লোক মৎস্যজীবী জেলে। এ এলাকার অধিকাংশ জেলেরাই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিদিন পদ্মা নদীতে মা ইলিশ শিকার করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইলিশ বিক্রি করে বেড়ায় আশেপাশের বিভিন্ন আড়তে। এর মধ্যে চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের মান্দের বাজার এলাকায় একটি আড়তে প্রতিদিন বিক্রি হয় লাখ লাখ টাকার মা ইলিশ।

এদিকে কাঁচিকাটা ইউনিয়নের ছাই ফ্যাক্টরী এলাকায় দুটি আড়তে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কয়েক লক্ষ টাকার মা ইলিশ। এছাড়াও প্রভাবশালী কিছু লোক ও জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় ভেদরগঞ্জ উপজেলার মাস্টার ঘাট, আফামোল্যার বাজার, কুবুদ্ধির ঘাট, ছুরির চর, ফেরীঘাট, গৌরাঙ্গবাজার, দুলারচর, বাঁশগাড়ি, কাঁচিকাটা, মোনাই হাওলাদার বাজার, ইলার বাজার, নড়িয়া উপজেলার ওয়াপদা, সুরেশ্বর, চরআত্রা ও নওপাড়া, গোসাইরহাটের চরজালালপুর, চরমাইজারা, কুচাইপট্টি, মাঝেরচর, কোদালপুর ঘাট, চরজানপুর, সাতপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে শিকার করা মা ইলিশ।

অভিযানকারি দলের হাতে আটক হওয়া জেলেরা জানায়, বেআইনী জেনেও অভিযানের সময় তারা মা ইলিশ শিকারে এসেছে পেটের অভাবে। তারা অভিযোগ করে, সরকারের দেয়া চার মাসের ভিজিএফ সহায়তা প্রকৃত জেলেদের অনেকেই পায়না। এছারাও এনজিও‘র কিস্তির টাকা, দাদন ব্যবসায়ীর টাকা, আড়তদারের কিস্তি মেটাতেই তারা ঝুঁকি নিয়ে নিষেঘাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকারে নদীতে নামে।

শরীয়তপুর জেলা মৎস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী বলেন, শরীয়তপুর জেলায় প্রকৃত জেলের সংখ্যা রয়েছে ৩২ হাজার ৩২৪ জন। এদের মধ্যে সরকারের ভিজিএফ সহায়তা পাচ্ছে ১৬ হাজার ৩৫৫ জন। প্রকৃত জেলেদের খুব কম অংশই অভিযান চলাকালে নদীতে নামে। একটি সংঘবদ্ধ অসাধু চক্র বাইরের জেলাগুলো থেকে মৌসুমি জেলেদের ভাড়ায় এনে মাছ শিকার করাচ্ছে।

তিনি জানান, গত কয়েকদিনে ইলিশ শিকার ও ক্রয়-বিক্রি রোধ করতে গিয়ে সংঘবদ্ধ অপরাধীদের হামলার শিকার হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেড, মৎস কর্মকর্তা, নৌ-পুলিশ, কোষ্টগার্ডসহ অভিযানকারি দলের সদস্যরা।

তিনি আরো বলেন, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত লোকবলের অভাবে শতভাগ সফল করা যাচ্ছেনা এই অভিযান। ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় ও টেকসই নৌযান এবং পর্যাপ্ত লোকবলের ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করা হবে অভিযানের পূর্বে।

(কেএনআই/এসপি/অক্টোবর ২৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test