E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরে একটি পাড়া, দু’টো দেশ!

২০১৮ অক্টোবর ২৫ ১৬:০১:৩৯
দিনাজপুরে একটি পাড়া, দু’টো দেশ!

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : একটি পাড়া, দু’টো দেশ। পাড়ার অর্ধেক বাংলাদেশের বাঘমাড়া। অন্যটা ভারতের হাড়িপুকুর। কিন্তু দু’পাড়ার মাটি, মানুষ, ভাষা, ইতিহাস, সংস্কৃতি সবই এক। আজও একটি পাড়ার দু’টো দেশ। একই রকম আটপৌরে জীবন প্রবাহ। শুধু ওরা ভারতীয় আর আমরা বাংলাদেশী। দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে রয়েছে এ আজব পাড়া।

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর থেকে মাত্র অর্ধ কিলোমিটার উত্তরেই এই সীমান্ত গ্রাম। গ্রামের মাঝ পথে রয়েছে মাত্র চিহিৃত কয়েকটি সীমানা পিলার। যা অনিমেয় লেভেল ক্রসিং। শুধু আছে দু’পারে উর্দিধারীদের অবিশ্বাসের চোখ রাঙানি। দু’পারেই রয়েছে সীমান্ত পাহারারত অস্ত্রঘাড়ে পোষাকধারী বিজিবি-বিএসএফ। সীমান্ত পারাপারের নেই কোন উপায়, এর মাঝে উভয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হুংকার।

বিজিবি বলছে, আর এগুবেন না। ওরা যতই মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ থাকুক না কেন, সেটা উচ্চ পর্যায়ের ব্যাপার। লেবেল ক্রসিং পেরুলেই গুলি ছুঁড়বে ওরা। শেষে ঢাকা-দিল্লি দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়ে যাবে আপনার জন্য। কি অদ্ভুদ, ওদের আর আমাদের মাঝে হাস্যকর বিভাজন। নিরাপত্তা চোখ বেষ্টনী ভেঙ্গে ওপার থেকে এলো বৃদ্ধ মহিতোষ বিশ্বাস।

তার সাথে আলাপকালে বললেন, মনে আছে ছোট বেলায় বাবার হাত ধরে ওই যে দেখছো হিলি ষ্টেশন, ওখান থেকেই ট্রেনে চড়ে বেশ ক’বার শেয়ালদহ গিয়েছি। সকাল ৭ টায় ট্রেন ছিল। বাবা কতবারই না কলতাকা গিয়ে বাজার টাজার করে নিয়ে বাড়ি ফিরতেন, রানাঘাট-দর্শনা হয়ে পদ্মা পেরিয়ে রাজশাহী হয়ে এই দিনাজপুরের হিলি। তখনতো আর এতজোরের ট্রেন চলতো না! তবু ৬/৭ ঘন্টার মাঝেই কলকাতা চলে যাওয়া যেত। এখনতো আর সেই অবস্থা নেই? চোখের পলকে দ্রুত পালিয়ে যায় ট্রেন। আবারও যদি চলতো দার্জিলিং ও আসাম মেইল, বেঁচে থাকতেই আর একবার না হয় চড়তাম। এত কথার ফাঁকে দেখলে কানে পড়লো ঝমঝম আওয়াজ, ওই যে চলে গেল চোখের পলকে দ্রুত পালিয়ে গেল ট্রেনটি উত্তরের পার্বতীপুর- চিলাহাটির দিকে !লেবেল ক্রসিং এপারে পান বিড়ির দোকান দিয়ে বসে আছেন দোকানী।

ওপার আর এপার সীমান্তে কি হচ্ছে আর না হচ্ছে, সবকিছুই তার নখদর্পনে। ইতিহাস বড়ই নিষ্ঠুর। দেশ ভাগের পর দিনাজপুর হলো দু’ভাগ, হিলিও হলো দু’ভাগ সাথে হাড়িপুকুর গ্রামটিও হলো দু’ভাগ। মৌজাটা যে রয়েছে সেটাও দু’ভাগ। ১০ বছর আগে ছিল ৮০/৯০ টি পরিবার, এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭শ পরিবার। স্থানীয় ভাষাই বলা হয়, না- এপার-না ওপার। ওদের কারো শোয়ার ঘর ভারতে, রান্না ঘর বাংলাদেশে। হিন্দুধর্মাম্বলীদের জন্য রয়েছে মন্দির, মুসলমানধর্মাম্বলীদের জন্য রয়েছে মসজিদ। মসজিদটি বাংলাদেশের সীমানায় হলেও ভারত সীমানা মাড়িয়েই যেতে হয় মসজিদে। যেন ওরা সবকিছু সীমান্ত আইনের বাধ্যকতা সবকিছু ভুলে একে অপরে আষ্টেপৃষ্টে এভাবেই চলে আসছে ৬৬ বছর ধরে। এপারেও হিলি ওপারেও হিলি।

পান বিড়ি দোকানী বললেন, সন্ধে হলেই এখানে শুরু হয় হরেক রকম ব্যবসা। এখানে পাবেন নেশা সামগ্রী, আগ্নেয়াস্ত্র, ভারতীয় শাড়িসহ নানা রকম প্রসাধনী সামগ্রী ও পণ্য। এছাড়াও বসে মাদক বিক্রির হাট। আরও বসে চোরাকারবারীদের হাটবাজার। বসে থাকেন লাইনম্যান নামক সিন্ডিকেট সদস্যরা। সীমান্তরক্ষীদের টাকা না দিলেও সিন্ডিকেটদের দিতেই হয় টাকা ।

(এসএএস/এসপি/অক্টোবর ২৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test