E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাণীনগরের পারইল ইউনিয়নে ঘর দেয়ার নামে ঘুষ বাণিজ্য

২০১৮ অক্টোবর ২৬ ১৪:৩২:০৬
রাণীনগরের পারইল ইউনিয়নে ঘর দেয়ার নামে ঘুষ বাণিজ্য

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়নে ঘর দেওয়ার নামে চলছে ঘুষ বাণিজ্য। যেন দেখার কেউ নেই। টাকা দিলেই মিলবে ঘর এমনটা আশা করে পারইল ইউনিয়নের অসহায় অতিদরিদ্র মানুষ এমনকি সুদের উপর টাকা নিয়ে ঘর পাওয়ার আশায় ঘুষ দিয়েছে ওই ইউনিয়নের মেম্বারদের বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মেম্বার শ্রী: দীনেশ, জাহিদ ও মহিলা মেম্বার এর স্বামী মো: মবকুল এর বিরুদ্ধে। তারা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অসহায় অতিদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে।

জানা গেছে, আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর ‘জমি আছে ঘর নেই’ এই প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে তৃনমূল স্তরের অসহায় অতিদরিদ্র পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প দিচ্ছে বিনা মূল্যে সরকার। আর এটাকেই পুঁজি বানিয়ে নওগাঁর রাণীনগরের পারইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা জোগসাজগে পারইল ইউনিয়নের অসহায় অতিদরিদ্র মানুষকে একটি করে ঘর দেওয়ার নাম করে কাউকে থেকে ৫ হাজার, ৮ হাজার, ১০ হাজার এমনকি তার বেশিও টাকা নেওয়া হয়েছে এমনি অভিযোগ রয়েছে। প্রায় ১ থেকে দেড় মাস আগে অনেক অসহায় অতিদরিদ্র পরিবারের লোকজন ঘর পাওয়ার আশায় মেম্বারদের টাকা দিয়েছে। ঘুষ নেওয়ার এমনি অভিযোগ রয়েছে পারইল ইউনিয়নের মেম্বার শ্রী: দীনেশ, জাহিদ ও মহিলা মেম্বার এর স্বামী মো: মবকুল এর বিরুদ্ধে।

পারইল সরদারপাড়া গ্রামের আরফান এর ছেলে মো: রহিদুল জানান, পারইল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার শ্রী: দীনেশ আমাকে ঘর দেওয়ার কথা বলে ৮ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি এখনো ঘর পাইনি।

পারইল পশ্চিমপাড়া গ্রামের যতীনন্দ্রনাথ সাহার ছেলে শ্রী: দিবারন চন্দ্র সাহা (ব্যবসায়ী) জানান, মেম্বার শ্রী: দীনেশ আমাকে ঘর দেওয়ার কথা বলে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে।

পারইল গুচ্ছ গ্রামের সায়েদ প্রামানিক এর ছেলে আব্দুল আলীম জানান, পারইল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার শ্রী: দীনেশ আমাকে ঘর দেওয়ার কথা বলে ৪ হাজার টাকা নিয়েছে।

ঘর দেওয়ার নাম করে অসহায় অতিদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করে পারইল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার শ্রী: দীনেশ বলেন, আমি না সমন্নয় গোটা ইউনিয়ন। পারইল ইউনিয়ন পরষিদের চেয়ারম্যান মো: মজিবর রহমান গোটা ইউনিয়ন এনজিও’র মারফতে সমন্নয় করিয়েছে। আমি ১৫-১৬ জনকে থেকে টাকা নিয়েছি। কাউকে থেকে ৩ হাজার, ৪ হাজার কাউকে থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছি তাদের নির্দেশে। তিনি আরো বলেন শুধু আমি না এই ইউনিয়নের সকল মেম্বাররা এই ঘরের নামে টাকা তুলছে।

এছাড়াও পারইল গ্রামের খোরশেদের স্ত্রী মোছা: পারভীন জানান, আমি গরীভ অসহায় মানুষ আমাকে ঘর দেওয়ার নাম করে পারইল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো: জাহিদ আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। সেই টাকা আমি সুদের উপর নিয়ে দিয়েছি এখন সেই ৫ হাজার টাকার ৩ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়েছে। জাহিদ মেম্বার আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চেয়েছিলো আমি সুদের উপর নিয়ে ৫ হাজার টাকা দিয়েছে। আমি এখনো ঘর পাইনি।

ঘর দেওয়ার নাম করে অসহায় অতিদরিদ্র পারভীন এর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে পারইল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো: জাহিদ বলেন, ঘর পাবে ভাই ওযেট এ্যান্ড সি। টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কৌশলে আচ্ছা অচ্ছা বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন তিনি।

অপর দিকে, পারইল গ্রামের মহেন্দ্রনাথ প্রামানিক এর ছেলে শ্রী: সুরেশ জানান, পারইল ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ফরিদার স্বামী মো: মকবুল আমাকে ঘর দেওয়ার নাম করে ১০ হাজার টাকা নেয়। আমি এখনো ঘর পাইনি।

পারইল পশ্চিমপাড়া গ্রামের শ্রী: চন্দন জানান, আমাকেও মহিলা মেম্বার ফরিদার স্বামী মো: মকবুল ঘর দেওয়ার নাম করে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে।

এ ব্যাপারে মহিলা মেম্বার ফরিদার সাথে কথা বলা যায়নি, তবে তার স্বামী মো: মকবুল ঘর দেওয়ার নাম করে ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি কোন টাকা নেয়নি।

এ ব্যাপারে পারইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মজিবর রহমান এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নে ঘরের কোন সরকারী বরাদ্দ নাই। অন্যান্য ইউনিয়নে বাড়ি ঘর হচ্ছে তাই এনজিও মাঠে নেমেছে। পারইল ইউনিয়নে কেউ কোন টাকা দেয়নি তাই এখানে কোন বরাদ্দ আসেনি। এই বরাদ দিয়ে তারা মেম্বারদের সাথে জোগসাজসে হয়তো কিছু টাকা তুলেছে। যদি কেউ কোন মেম্বারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে তাহলে মেম্বারদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন মুঠোফোনে বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন কিছু জানা নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(এসকপি/এসপি/অক্টোবর ২৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test