E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আখড়াখোলার সংখ্যালঘুদের নাভিঃশ্বাস

সাতক্ষীরায় চোরাচালানী জামায়াত কর্মী আলাউদ্দিন বাহিনীর দৌরাত্ম্য

২০১৮ অক্টোবর ২৭ ২৩:৩৬:৩৫
সাতক্ষীরায় চোরাচালানী জামায়াত কর্মী আলাউদ্দিন বাহিনীর দৌরাত্ম্য

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বিজিবির সোর্স পরিচয়ে চোরাচালানী পন্য ছিনতাই, বেতনা নদীতে নৌকাভর্তি পণ্য ছিনতাই, অন্যের ঘরে অগ্নিসংযোগ করে জমি জবরদখলের চেষ্টা, জালিয়াতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের জায়গা জবরদখলকারি জামায়াতের সক্রিয় কর্মী সাতক্ষীরা সদর উপাজেলার আখড়াখোলা বাজারের আলাউদ্দিন সরদার ও তার বাহিনী সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করা না হলে যে কোন সময় সাম্প্রদায়িক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে শনিবার সকালে সাতক্ষীরা সদরের আখড়াখোলা বাজারে গেলে সন্তোষ কুমার সাধুখাঁ জানান, তার জ্যাঠামহাশয় দুলাল চন্দ্র সাধুখাঁ এসএ ১৪৭ দাগে পৈতৃক ১০ শতক জমির মালিক হলেও ভুলবশতঃ ৩০ শতক জমি তার নামে রেকর্ড হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি ১৯৮১ সালের ১১ আগষ্ট ভাই শিবুপদ ও গুরুপদ এর নামে ১০ শতক করে পৃথক দুটি দলিল করে দেন। এরপর দুলাল সাধুখাঁ’র শিশু সন্তান সুমনকে হত্যার হুমকি দিয়ে ১৪৭ ও ১৪৬ দাগে তার পৈতৃক ২৫ শতকের পরিবর্তে ৩০ শতক জমি নামমাত্র টাকায় ২৬৬৯/৮৪নং দলিল করে নিয়ে তাকে ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেন আলাউদ্দিন। ওই দলিলে সনাক্তকারি হিসেবে আখড়াখোলা গ্রামের ছোবহান সরদার সাক্ষর করেন।

একইভাবে এস এ রেকর্ডে দুলাল সাধুখাঁ’র বেশি অংশ দেখানোর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারতে অবস্থানকারি রেকডীয় জমির মালিক দুলাল সাধুখাঁ, সনাক্তকারি হিসেবে ছোবহান সরদার ও ইসাদী হিসেবে কাটিয়ার রমজান আলীর সাক্ষর জালিয়াতিসহ অনৈতিক কাজের মাধ্যমে ১৯৮৫ সালের ২৪ জুলাই ৭১৭৭/৮৫ নং দলিল সৃষ্টি করে ২০ শতক জমির দাবি করতে থাকেন। এমনকি ওই জাল দলিলমুলে গুরুপদ ও শিবপদ সাধুখাঁ’র পুকুরের মাছ ধরা শুরু করলে বাধা দেওয়ায় তাদের উপর হামলা করে আলাউদ্দিন ও তার সহযোগিরা। সেটেলমেন্টের বিগত ৩০ ও ৩১ ধারার জরিপ চলাকালে সোহরাব সরদার অফিসে হাজির হয়ে আলাউদ্দিন ১৯৮৫ সালে তার সাক্ষর জাল করে ৭১৭৭/৮৫ নং জাল দলিল সৃষ্টি করেছে বলে উল্লেখ করেন।

এ সময় উপস্থিত তৎকালিন ঝাউডাঙা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদও সাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। যা’ ৩০ ও ৩১ ধারার রেকর্ডে সোহরাব ও আব্দুল মজিদের বরাত দিয়ে আলাউদ্দিনের ওই দলিল জাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, দুলাল সাধুখাঁ’র কাছ থেকে ৫ শতক জমি বেশি লিখে নেওয়া ও একটি জাল দলিল তৈরি করায় ওইসব জমি দখলের উদ্যোগ নিলে আলাউদ্দিনের সঙ্গে তাদের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে আলাউদ্দিন দুলাল সাধুর কাছ থেকে কেনা ১৪৭ দাগের ১০ শতক জমির একাংশে ২০০২ সালে নয়টি দোকন ঘর নির্মাণ করে। পরবর্তীতে সেটেলমেণ্ট কর্মকর্তাকে মানেজ করে বর্তমান মাপ জরিপে দু’টি বাটোয়ারা দাগ দেখিয়ে ১৩শতক জমি রেকর্ড করে নেন। সে অনুযায়ী গত জুন মাস থেকে তাদের শরীকদের তিন শতক জমি দখল করার উদ্যোগ নিয়ে তাতে নতুন ভবন নির্মাণ শুরু করে।

ভবন নির্মাণের সময় আলাউদ্দিন ও তারসহযোগীরা তুলসী সাধুর বসত ঘরের টালির চাল ভাঙচুর করে। প্রতিবাদ করায় আলাউদ্দিন, তার ছেলে ডালিম, সেলিম, ভাইপো বাবলু ও ভাটপাড়ার কানকাটা খায়রুলসহ কয়েকজন তুলসী ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এনিয়ে এলাকায় শালিসি বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি জমি মাপ জরিপ করা হলেও মানেনি আলাউদ্দিন। উপরন্তু ১৪৬ দাগে ৫ শতক জমি জবরদখল করার জন্য সীমানা পিলার বসিয়েছে সে। গত মঙ্গলবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজমল হোসেনের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের বসাবসির কথা থাকলেও চেয়ারম্যান ও আলাউদ্দিন না থাকায় সভা হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি গত শুক্রবার বিকেলে থানায় আসেনি আলাউদ্দিন। ফলে আজ রোববার বিকেলে থানায় বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আখড়াখোলা গ্রামের নাছিমা, মরিয়ম বেগম, মোস্তফা মিস্ত্রীসহ কয়েকজন জানান, এগার আনি থেকে উঠে এসে আলাউদ্দিন ও তার সহযোগিরা যেভাবে সাধুখাঁ পরিবারগুলোর উপর জুলুম ও অত্যাচার চালাচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। দুলাল সাধুকে তাড়িয়ে এবার তাদের শরিকদের তাড়ানোর জন্য নতুন ফন্দি এটেছে আলাউদ্দিন। কলারোয়ার ক্ষমতাসীন দলের এক নেতাকে ভাগ্নে পাতিয়ে তার সহায়তায় এখানকার হিন্দু পরিবারগুলোকে উৎখাত করার চেষ্টা চালাচ্ছে সে।

স্থানীয়রা জানান, আলাউদ্দিন সরদার একজন কুখ্যাত চোরাচালানী। বিডিআর এর সোর্স হিসেবে আখড়াখোলা এলাকায় ব্যবসায়িদের ধরিয়ে দেওয়ার নামে ব্যাপক চাদাবাজি করেছে। লুটপাট করেছে তাদের ভারতীয় মালামাল। বেতনা নদীতে নৌকা ভর্তি মালামাল লুটপাট করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আফছার ধোপার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে জমি দখল করতে যাওয়ার অভিযোগে আলাউদ্দিনকে দীর্ঘদিন জেল হাজতে থাকতে হয়।

এ ছাড়া এগাররানি এলাকায় একটি হত্যা মামলায় তাকে জেল খাটতে হয়। সম্প্রতি লাবসার বৌবাজারে জালিয়াতির মাধ্যমে জমি কিনে সেখানে এক নারীর হাতে লাঞ্ছিত হয় আলাউদ্দিন। আলাউদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা কট্টর জামায়াতপন্থী উল্লেখ করে তারা বলেন, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারি পরবর্তী সময়ে তারা বিভিন্ন নাশকতার কাজে জড়িত ছিল। এমনকি আখড়াখোলা বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা ডাঃ মিজানুর রহমানের চেম্বার পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় আলাউদ্দিন, তার ছেলে ডালিম, সেলিম, ভাইপো বাবলু ও ভাটপাড়ার কানকাটা খায়রুলের হাত রয়েছে। কলারোয়ার ভাগ্নে আওয়ামী লীগ নেতার শেল্টারে থেকে ওই সময়কার বিভিন্ন অপকর্মের হোতা হয়েও আলাউদ্দিন ও তার সহযোগিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে আলাউদ্দিন সরদার নিজেকে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, সংখ্যালঘুর নাম ভাঙিয়ে সন্তোষ সাধু ও তাদের শরীকরা তাকে ন্যয্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। তিনি কোন অনিয়ম ও দূর্ণীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test