E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বেহাল সত্রহাজারী-ব্রাহ্মনডাঙ্গা সড়ক

ঠিকাদারের গাফিলাতিতে সীমাহীন দুর্ভোগ দুই গ্রামের মানুষ

২০১৮ অক্টোবর ৩০ ১৫:৪১:১০
ঠিকাদারের গাফিলাতিতে সীমাহীন দুর্ভোগ দুই গ্রামের মানুষ

নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সত্রহাজারী-ব্রাহ্মণডাঙ্গা সড়কটির হান্দ্রলা গ্রামে দুই কিলোমিটার সড়ক গত এক বছর আগে কেটে রাখা হয়েছে পাঁকাকরণের জন্য। সড়কটি পাঁকা হবে জেনে ভীষণ খুশি হয়েছিলো এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণীপেশার মানুষ। কিন্তু ঠিকাদারের অবহেলা ও গাফিলতিতে এ সড়কটি এখনও পাঁকা হয় নি।

কিন্তু আর কোন অগ্রগতি নেই। রাস্তাটি কাটার পর বালু ভরাটও করা হয়নি। এলাকাবাসীর জন্য অভিশপ্ত হয়ে ওঠে। ধান-পাটসহ অন্যান্য মালামাল আনা নেওয়াতো দূরের কথা, মানুষ হেটেও চলাচল করতে পারেনি। সরকারের উন্নয়ন যেন এখানেই ম্লান হয়ে গেছে।

নড়াইল এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল জেলা শহরের সাথে লোহাগড়া উপজেলার উত্তরাঞ্চলের লাহুড়িয়া, শালনগর ও নোয়াগ্রাম ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার মানুষের সংক্ষিপ্ত সময়ে জেলা শহরে যাতায়াতের জন্য সত্রহাজারী-ব্রাহ্মণডাঙ্গা সড়কটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটি বাড়িভাঙ্গা, হান্দলা দেবী গ্রামের মধ্যদিয়ে সত্রহাজারী বাজারে গিয়ে মিশেছে। সত্রহাজারী হতে লাহুড়িয়া ইউনিয়ন, শালনগর ইউনিয়ন, মানিগঞ্জ বাজার হয়ে লোহাগড়া উপজেলা শহরের সাথে সংযোগ সৃষ্টি করেছে।

সত্রহাজারী বাজার থেকে ব্রাহ্মণডাঙ্গা বাজারের দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। ইতিমধ্যে সড়কটির ৫ কিলোমিটার পাকা হলেও হান্দলা গ্রামের মধ্যে ২ কিলোমিটার সড়ক কাঁচা থাকায় চলাচলে ভীষণ অসুবিধার সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে সড়কটি কার্পেটিং এর জন্য এলজিইডি নড়াইল দরপত্র আহবান করে। কাজটি পান ফরিদপুরের ঠিকাদার আকরাম হোসেন রাজা।

তিনি গত বছরের অক্টোবরের দিকে রাস্তাটি গর্ত করে কেটে ফেলেন। ওই রাস্তায় প্রথমে বালু ভরাট এবং পরে বালূ ও খোয়ার মিশ্রিত করে পর্যায়ক্রমে কাপের্টি এর কাজ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারের অবহেলা ও গাফিলাতির কারনে রাস্তাটি ওভাবেই পড়ে আছে।

ফলে গত এক বছর ধরে ওই রাস্তা দিয়ে পায়ে হেটেও চলাচল করা যায় না। অসুস্থ্য রোগীদের নিয়ে যেন আরো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সড়ক উন্নয়নের নামে এমন দুর্ভোগে যেন নাভিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে ভুক্তভোগীদের মাঝে।

হান্দলা গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া জানান, রাস্তা খুচে রাখার কারনে ওই রাস্তা দিয়ে মাঠে পাওয়ার ট্রিলার নিয়ে মাঠে যাওয়া যায় না। ধান, পাট কেটে গাড়িতে আনার কোন ব্যবস্থা নেই। ফসল বহু কষ্ট করে মাথায় করে আনতে হয়েছে। বাজারে বিক্রি করতে নেওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।

এই গ্রামের ব্যবসায়ী মুনসুর মোল্যা জানান, বাড়ি থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে এই রাস্তার জন্য। বর্ষার সময়ে যে দুর্ভোগ তা কেউ সরেজমিনে না এসে দেখলে বুঝতে পারবে না।
ঘোড়ার গাড়ি চালক জিন্নাহ মিয়া, কবুর হোসেন জানান, এই রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে যেতে তাদের খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু এভাবে কেটে রেখে মানুষের কষ্ট যে দেখার কেউ নেই।

স্কুল শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি বাড়ি থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে নলদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। রাস্তা খুড়ে ফেলানোর আগে মোটর সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতাম। অবর্ননীয় এই দুর্ভোগ থেকে পরিত্রান পেতে নড়াইলের জেলা প্রশাসক, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে দেখা করেছি। কিন্তু ঠিকাদার কাজ করবে বলে শুধু দিনের পর দিন দিয়ে চলেছে’।

এদিকে এই সড়কের পাশেই রয়েছে ৩৩ নং হান্দলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাস্তাটি এক বছর ধরে গর্ত করে রাখায় কোমলমতি শিশুরা ভয়ে স্কুলে আসতে পারে না। অনেকেই বই খাতা নিয়ে গর্তে পড়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। আবার অনেক শিক্ষার্থীকে ভিন্ন কোন স্কুলে ভর্তি করেছে অভিভাবকরা। রাস্তার গর্তে পড়ে শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী মানুষ আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মিথিলা জানান, রাস্তার বেহালদশার কারনে অনেক শিক্ষার্থীকে তাদের অভিভাবক অন্য স্কুলে নিয়ে ভর্তি করেছেন। তাদেরও স্কুলে আসতে ভীষণ কষ্ট হয়। সম্প্রতি দুজন শিক্ষিকা রাস্তার মধ্যে কাদায় পড়ে গিয়ে বেশ অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। শিক্ষা কর্মকর্তারাও কাঁদার কারনে স্কুলে পরিদর্শনে আসতে পারেন না।

অভিভাবক জাকির হোসেন জানান, তার দুটি ছেলেকে হান্দলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়য়ে ভর্তি করেছিলেন। কিন্তু রাস্তা কেটে রাখায় যাতায়াতের সমস্যার কারনে ব্রাহ্মণডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছে।

নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হান্দলা গ্রামের বাসিন্দা এসএম শারফুজ্জামান বোরাক বলেন, ‘এই রাস্তার ঠিকাদার আকরাম হোসেন রাজার বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। তিনি রাস্তাটি খুড়ে রাখার পর আর কখনো আসেনি। ফোনে অসংখ্যবার কথা বলেছি। কিন্তু তিনি কাজ করবে বলে বার বার দিন দিচ্ছেন।

নোয়াগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান কালু বলেন, গত এক বছর ধরে রাস্তাটি খুচে রাখার কারনে ওই এলাকায় আমি যেতে পারি না। সাধারণ মানুষের তোপের মুখে পড়তে হয়। আমি নিরুপায় হয়ে ঠিকাদারের বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছি। কিন্তু আজ কাল করতে করতে এখনও কাজ শুরু করেনি। এই ঠিকাদারের কারনে সরকারের ভাবমূর্তি ম্লান হয়ে যাচ্ছে। শুনেছি ওই ঠিকাদার নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০টি রাস্তা এভাবেই ফেলে রেখেছে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন’।

স্থানীয় সরকার বিভাগ এলজিইডির লোহাগড়া উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ মোশারেফ হোসেন বলেন, নড়াইল জেলার উত্তরাঞ্চলের সাথে জেলা সদরে চলাচলের সুবিধার জন্য সড়কটি পাকাকরণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। ফরিদপুরের ঠিকাদার আকরাম হোসেন রাজা কাজটি পায় এবং বাস্তবায়নের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। রাস্তাটির দুই কিলোমিটার খুঁচে ফেললেও তিনি আর বালু ভরাট বা অন্যান্য কাজ না করায় দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে মানুষের দুর্ভোগের কোন শেষ নেই। সর্বশেষ ঠিকাদারকে জানানো হয়েছে, তিনি কাজ না করলে পুনরায় দরপত্র আহবানের মাধ্যমে চলতি অর্থ বছরেই রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে’।

(আরএম/এসপি/অক্টোবর ৩০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test