E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অবশেষে সৌদি আরবে পাচার হওয়া সাতক্ষীরার এক নারী ফিরলো মায়ের কোলে

২০১৮ অক্টোবর ৩১ ২২:৫১:১৯
অবশেষে সৌদি আরবে পাচার হওয়া সাতক্ষীরার এক নারী ফিরলো মায়ের কোলে

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সৌদি আরবে হাসপাতালে মোটা অংকের বেতনে সেবিকার কাজের নামে পতিতালয়ে বিক্রি হওয়া সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাগুরা গ্রামের এক নারী(২০)  অবশেষে দেশে ফিরেছেন।  বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে বুধবার সকাল ৬টার দিকে তিনি ঢাকার শাহাজালাল বিমানবন্দরে পৌছান। রাতে তিনি বাবা, খালু ও বোনের সঙ্গে নিজ বাড়িতে আসেন।

বাড়িতে ফিরে সৌদি আরবে অতিবাহিত করা দীর্ঘ সাড়ে আট মাসের কাহিনী বর্ণনা দিতে যেয়ে ওই নারী জানান, তিনি সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনার পর অভাবের কারণে পড়তে পারেননি। হাসপাতালের সেবিকা হিসেবে মাসিক ৪০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করার জন্য চলতি বছরের ফেব্র“য়ারি মাসের প্রথম দিকে তাদের প্রতিবেশি নাছিমা ও খুলনার টুটপাড়ার আল আমিন ওরফে সোহাগ বাবু তাকে সৌদি আরবে পাঠায়। তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপুর কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করে পাসপোর্ট তৈরিতে ব্যবহার করেন নাছিমা ও সোহাগ বাবু।

সৌদি বিমানবন্দরে নামার পরপরই তাকে ফরহাদ দালালের মাধ্যমে সমুদ্র বন্দর ‘দাম্মাম খাবজি’ এর নিকটবর্তী দুম্বা খাটালের মালিক ‘হায়ান ম্যাডাম অরফা’ এর কাছে চার লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়।সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়।

প্রথম দিন থেকেই তাকে বহু পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়। অপারগতা প্রকাশ করায় সারা দিনে মাত্র একটি রুটি ও পানি খাইয়ে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। আপত্তি করায় ইতিমধ্যেই তার দু’ স্তন, উরু, পা ও হাত গরম ইস্ত্রি দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ডান চোখটি ঘুষি মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ ও ২৯ আগষ্ট দু’ পাচারকারি নাছিমা ও সোহাগ বাবুর গ্রেফতার হওয়ায় তার উপর নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। এখানে শুধু সে নয়, বাংলাদেশী আরো বেশ কয়েকজন নারীকে সেখানে এনে একইভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একজন মারা ও গেছেন। কথা বলার একপর্যায়ে ওই নারী তার দেহের উপর নির্যাতনের পাশবিক দগদগে ক্ষত চিহ্নযুক্ত অত্যাচারের দৃশ্য দেখান। আর কান নারী যাতে এভাবে নারকীয় নির্যাতনের শিকার না হয় সেজন্য তিনি নাছিমা ও সোহাগ বাবুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

নির্যাতিতা ওই নারীর বাবা জানান, বরিশাল র‌্যাব -৮ ও খুলনা র‌্যাব -৬ এর কোম্পানাী কমাণ্ডার এর সহযোগিতায় দু’পাচারকারিতে আটকের কথা তুলে ধরে বলেন, সোহাগ বাবুর সঠিক ঠিকানা যাচাই ও কোন এজেন্সীর মাধ্যমে মেয়েকে সৌদিতে পাঠানো হয়েছে তা জানার জন্য মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক অনুপ কুমার দাস তদন্তকালে নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে মামলার বর্তমান তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি (অর্গান) উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, রাইটস যশোর এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ’র ঐকান্তিক চেষ্টায় মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন।

জনেতে চাইলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি’র উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহষ্পতিবার ওই নারীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি করানো হবে।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ৩১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test