E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সৌদি থেকে উদ্ধার হওয়া সাতক্ষীরার নারীর ডাক্তারী পরীক্ষা ও আদালতে জবানবন্দি

২০১৮ নভেম্বর ০১ ১৬:৫৭:১০
সৌদি থেকে উদ্ধার হওয়া সাতক্ষীরার নারীর ডাক্তারী পরীক্ষা ও আদালতে জবানবন্দি

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সৌদি আরবে পাচারের নয় মাস পর নির্যাতিত এক নারী বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় তার নিজ বাড়ি সাতক্ষীরা সদরের মাগুরা গ্রামে পৌছেছে। বৃহষ্পতিবার  সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে বিচারিক হাকিম রাজীব কুমার রায় এর কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

বৃহষ্পতিবার সকালে সৌদি আরবে অতিবাহিত করা দীর্ঘ নয় মাসের নারকীয় যন্ত্রনার কাহিনী বর্ণনা দিতে যেয়ে ওই নারী (২০) জানান, তিনি সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। হাসপাতালের সেবিকা হিসেবে মাসিক দু’ হাজার রিয়েল বেতনে কাজ করার জন্য চলতি বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিবেশি নাছিমা ও খুলনার টুটপাড়ার আল আমিন ওরফে কামরুজ্জামান ওরফে সোহাগ বাবু তাকে বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের একটি বিমানে সৌদি আরবে পাঠায়। তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপুর কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করে পাসপোর্ট তৈরিতে ব্যবহার করেন নাছিমা ও সোহাগ বাবু। দাবিকৃত এক লাখ টাকার মধ্যে পাসপোর্ট তৈরির সময় ১২ হাজার ও বিদেশে যাওয়ার সময় ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

বিদেশে পাঠানোর আগে তার কোন ভাষা শিক্ষা বা ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়নি। ২ফেব্র“য়ারি সৌদি বিমানবন্দরে নামার পরপরই তাকে ফরহাদ দালাল তাকে নিকটবর্তী একটি হোটেলে তোলে। সেখানে খাবারের সঙ্গে ঔষধ খাওয়ানোর পর তাকে মুখ বেধে ১১জন পালাক্রমে তিন দিন ধর্ষণ করে। পরে তাকে ফরহাদের বাসা খাবজি শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্মরত লাবসা ইউনিয়নের কৈখালি গ্রামের কাকলিকে নির্যাতনের কথা বলে। কাকলি খুলনার সোহাগ বাবুকে বিষয়টি জানালে চার লাখ টাকা দিলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানায়। কাকলির ফোন থেকে বিষয়টি নাছিমা চাচীকে জানানো হয়। ওই দিন তাকে তোতা ও তার স্বামী বান্দির কাছে বিক্রি করা হয়। সেখানে সংসারের কাজের পাশাপাশি বান্দিরা নিজে ও তার বন্ধুদের নিয়ে তার উপর যৌন নির্যাতন চালাতো।

১০ মার্চ তাকে তোতার মায়ের বাসায় নিয়ে গেলে সেখানে উড়িষ্যার মেয়ে সমবয়সী সুনিতার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সুনিতা নির্যাতনের বিষয়টি সোহাগ বাবুকে জানালে সে তোতাকে ফোন করেঅ পরে তোতা তাকে পুরুষের কোমরের বেল্ট খুলে তাকে নির্যাতন করে ঘরের মধ্যে আটক রাখে। পরে সুনিতার সহায়তায় সে পালানোর চেষ্টা করলে খাবজি শহরের মাহদুদ এলাকা থেকে তাকে আবারো ধরে নিয়ে এসে নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় তার ডান চোখ ও ঠোঠ ফাটিয়ে দেওয়া হয়। ১৪ মার্চ তাকে কয়েত সীমান্তের সমুদ্রবন্দর সংলগ্ন ‘দাম্মাম খাবজি’ এলাকার ‘হায়ান - অরফা’ দম্পতির কাছে চার লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। প্রথম দিন থেকেই তাকে বহু পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়।

অপারগতা প্রকাশ করায় সারা দিনে মাত্র একটি রুটি ও পানি খাইয়ে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। আপত্তি করায় ইতিমধ্যেই তার দু’ স্তন, উরু, পা ও হাত গরম ইস্ত্রি ও চামচ গরম করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ডান চোখটি ঘুষি মেরে দ্বিতীয় বার ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। হায়ানের ছেলে শের তাকে ধর্ষণ করতো। সোহাগ বাবুর খালাতো বোন পরিচয়ে মেহেরুন সৌদিতে বসে পাচার কাজে সহযোগিতা করতো। তবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল ও গর্ভপাতের বড়ি সোহাগ বাবু বাংলাদেশ থেকে ফরহাদের কাছে সরবরাহ করতো।

গত ২৮ ও ২৯ আগষ্ট দু’ পাচারকারি নাছিমা ও সোহাগ বাবুর গ্রেফতার হওয়ায় তার উপর নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। কথা বলার একপর্যায়ে ওই নারী তার দেহের উপর নির্যাতনের পাশবিক দগদগে ক্ষত চিহ্নযুক্ত অত্যাচারের দৃশ্য দেখান। আর কোন নারী যাতে এভাবে নারকীয় নির্যাতনের শিকার না হয় সেজন্য তিনি নাছিমা ও সোহাগ বাবুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তবে তাকে সার্বিক সহায়তার জন্য রিয়াদে বাংলাদেশী এক সিসি ক্যামেরা শ্রমিকের কাছে তিনি চিরকৃতজ্ঞ। ওই যুবকের পাঠানো ২০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি সমিতির টাকা পরিশোধ করেন। তবে বৃধবার শাহজালাল বিমান বন্দরে নামার পর দুবাইতে পাচার হওয়ার আগেই খুলনার ষোড়শী সাথীকে তিনি প্রশাসনের সহায়তায় বাড়িতে পাঠাতে পেরেছেন বলে দাবি করেন।

নির্যাতিতা ওই নারীর বাবা জানান, বরিশাল র‌্যাব -৮ ও খুলনা র‌্যাব -৬ এর কোম্পানাী কমাণ্ডার এর সহযোগিতায় দু’পাচারকারিতে আটকের কথা তুলে ধরে বলেন, সোহাগ বাবুর সঠিক ঠিকানা যাচাই, কোন এজেন্সীর মাধ্যমে মেয়েকে সৌদিতে পাঠানো হয়েছে তা জানা ও মেয়ে উদ্ধারের ব্যাপারে মামলার প্রথম তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক অনুপ কুমার দাস যথাযথ ভুমিকা রাখেননি। তবে মামলার বর্তমান তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি (অর্গান) উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, রাইটস যশোর এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ’র ঐকান্তিক চেষ্টায় মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন।

জনেতে চাইলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি’র উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহষ্পতিবার ওই নারীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি করানো হয়েছে।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ০১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test